চীন কেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়

চীন কেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়

  • লিউ হুই

গত ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিংপিং। এই সফরে দুদেশের মধ্যে ২৬টি নানা ধরণের চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। এসব চুক্তি অনুযায়ী চীন বাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ঋণ দেবে বিভিন্ন খাতে। বলা হচ্ছে চীনা প্রেসিডেন্ট যেরকম বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে এসেছেন এই সফরের সময়, সেটা একটা রেকর্ড।

চীন কেন বাংলাদেশে এত বিপুল বিনিয়োগে আগ্রহী? প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে সারাবিশ্বেই। এ বিষয়ে চীনের প্রভাবশালী দৈনিক  পিপলস ডেইলিতে একটি বিশ্লেষণী নিবন্ধ লিখেছেন চীনা সাংবাদিক লিউ হুই। ভাষান্তর করেছেন  মারুফ ইসলাম


তিরিশ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ এশিয়ার এক দ্বীপদেশ সফর করলেন যার নাম বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সফর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে।শি চিংপিংয়ের এ সফর সারা পৃথিবীতেই হইচই উৎপাদন করেছে খুবই যুক্তিসংগত কতগুলো কারণে।

সেন্টার অব সাউথ এশিয়া স্টাডিজের পরিচালক ইয়ে হাইলিন পিপলস ডেইলিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ভূরাজনৈতিক কারণেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া দেশটির অবস্থান বঙ্গোপসাগরের তীরে। এই অবস্থানই দেশটির গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে বহুলাংশে। ‘‘বেল্ট অ্যন্ড রোড’’ নামে যে একুশ শতকের সামৃদ্রিক সিল্ক রোড তৈরি করতে যাচ্ছে চীন; বাংলাদেশ তার অন্যতম সহযোগী।’

_91928084_chinapresidentইয়ে হাইলিন আরও বলেন, ‘চীন-ভারত-মিয়ানমার আন্তঃসম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।চীন যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে চায়, তাই বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে সহযোগীতা বাড়াতে আগ্রহী চীন।’

বাংলাদেশ শুধু বঙ্গোপসাগরের নাভিমূলই নয়, দক্ষিণ সিল্করুট বরাবর একটি ‘কী স্টপ’ও বটে। আর ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ আগে থেকেই বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ন। এসব কারণে চীনের প্রধান অর্থনৈতিক সহযোগী দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের আরও কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। যেমন, দেশটির রয়েছে বিপুল সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী এবং ঈর্ষা করার মতো উৎপাদন ক্ষমতা। চীনা উদ্যোক্তারা এই দুটি দিককে বিনিয়োগের জন্য অন্যতম সুযোগ হিসেবে দেখছেন।

আজ থেকে একচল্লিশ বছর আগে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সম্পর্কটি অত্যন্ত মসৃণ পথেই এগিয়েছে। একজন প্রতিবেশির সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবে সম্পর্কটি যেমন বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কটি ঠিক তেমনই। সাংস্কৃতিক বিনিময় ও উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্যিক বিনিয়োগের জন্য এই অনুকূল ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক একটি দলিল হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত চাই শি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় চীন নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর বর্তমানে বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চীন তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত চীনা সহায়তায় বাংলাদেশে সাতটি সেতু নির্মিত হয়েছে। আরও আটটি সেতু নির্মানাধীন রয়েছে।’

 

বাংলাদেশও তার কৃতজ্ঞতার হাত প্রসারিত করেছে চীনের দিকে। সেই আশির দশকেই বাংলাদেশ চীনকে ১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়, যা দিয়ে চীনের বেইজিংয়ে একটি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়টি ‘চীন-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ইলিমেন্টারি স্কুল’ নামে পরিচিত।

untitledঅধুনা অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করতে দুটি দেশ একটি ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। তা হলো, বাংলাদেশে উৎপাদন শিল্পের যে বিকাশ শুরু হয়েছে তাকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌছে দিতে সহযোগিতা করবে চীন।

বাংলাদেশ আশা করে তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নের জন্য চীন বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি তৈরি পোশাক আমদানি করবে। এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বাংলাদেশও চীন থেকে রপ্তানি পণ্য নেবে। এভাবে পারষ্পরিক সহযোগিতার ভীত মজবুত করতে চায় বাংলাদেশ।

অপরদিকে চীন বিশ্বাস করে, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট শি চিংপিংয়ের সফর এ দুটি দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। চাই শি বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে চীন-ভারত-বাংলাদেশ ও মিয়ারনমারের অর্থনৈতিক করিডোর। অপরদিকে বেল্ট অ্যন্ড রোড প্রকল্পেরও কেন্দ্রভূমিতে আছে বাংলাদেশ। এসব দিক বিবেচনা করে চীনা ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা এবং রাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে এটাই তো স্বাভাবিক।’

সূত্র: পিপলস ডেইলিfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment