‘নন স্টপ বাংলাদেশ’ এগিয়ে যাবে নতুন প্রজন্ম
- সাজেদুল ইসলাম শুভ্র
স্বপ্ন দেখার শুরু আট বছর আগে, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী স্বপ্ন—বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল। যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি, ঠিক সে সময়ই এরকম এক উচ্চাশা দেশের মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা একটা সময় মানুষের কাছে অস্পষ্ট মনে হলেও আজ তা অনেকটাই দৃশ্যমান। দেশকে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতায় এগিয়ে নেওয়ার মিছিলে আজ আমরা সামিল। এখন সময় বাংলাদেশের! আর দেশের সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে এমনকি শিক্ষার্থীদেরও উদ্ভাবনী উদ্যোগকে পুরো দেশের সামনে তুলে ধরতে এবার আয়োজিত হলো ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৬’। তিন দিনের পুরো আয়োজনে ছিল লাখো মানুষের পদচারণা, সবাই ঘুরে ঘুরে দেখেছে কত না সহজ হয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন!
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬ যেন হয়ে উঠেছিল এক টুকরো হাস্যোজ্জ্বল বাংলাদেশ। এ মেলাটি যেন পুরো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। অনলাইন ভিত্তিক খেলাধুলা থেকে শুরু করে শিশুদের পড়ালেখা, ওয়েবসাইট তৈরি, এ সংক্রান্ত কর্মশালার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আইটি ভিত্তিক আবিষ্কারসহ সবকিছু যেন দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহত্ ডিজিটাল মেলাটিকে করেছে পরিপূর্ণ। গেল বুধবার শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ মেলার শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ছিল বরাবরের মতোই জাঁকজমকপূর্ণ আর গোছালো। রেজিস্ট্রেশন করার পর পাওয়া একটি ভিজিটর কার্ড নিয়ে মেলায় যেকোনো হলে প্রবেশ করতে দেওয়ার বিষয়টি ছিল অনন্য। মেলায় বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য প্রত্যেক হলের সামনে ছিল একটি করে হেল্প ডেস্ক।
মেলার শেষ দিনে অর্থাত্ শুক্রবার, বন্ধের দিন হওয়ার কারণে সকাল থেকেই নানা বয়সী দর্শকের পদচারণায় মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গণ। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এসেছে মেলায়। পুরো মেলা আয়োজন করা হয়েছে সাতটি ভাগে। দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত নানা উদ্ভাবন নিয়ে মেলায় প্রদর্শনী করা হয়। ই-গভর্নেন্স জোনে আয়োজন করা হয়েছিল সরকারের নানা মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কর্মকাণ্ডের প্রদর্শনী। দেশকে ডিজিটাল করে তুলতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সাফল্য তুলে ধরার জন্য সাজানো হয়েছিল স্টলগুলো। সেখানে দেখা যায়, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে একটি স্টল রাখা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন সেবা ও কীভাবে অনলাইন ব্যবহার করে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় তা বিভিন্ন দর্শনার্থীদের বুঝানো হচ্ছে। সেখানে একটি স্টলে পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা দর্শনার্থীদের ডিজিটাল পাসপোর্ট ও পাসপোর্টের সেবা সংক্রান্ত তথ্য দিচ্ছেন। মেলায় নির্বাচন কমিশন বাংলাদশ সচিবালয়ের একটি স্টল রয়েছে। সেখানে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের স্মার্টকার্ড সংক্রান্ত সকল তথ্য, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সম্পর্কিত তথ্য, আঙুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটারের তথ্য যাচাই, ভোটার নম্বরের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর জানানো প্রভৃতি সেবা দেওয়া হয়। মেলায় চারটি হলের মধ্যে একটি সেমিনার হল আর বাকি তিনটি হলে রয়েছে বিভিন্ন অনলাইন শপিং বা বিভিন্ন আইসিটি সামগ্রীর স্টল। সেমিনারগুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণমূলক আয়োজন করা হয়। আর শুধু সেমিনার করিয়েই শেষ না, সেখানে রয়েছে পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থানেরও বিশাল সুযোগ। তিন দিনব্যাপী এ মেলায় মাইক্রোসফট, ফেসবুক, একসেন্সার, বিশ্বব্যাংক, জেডটিই, হুয়াওয়েসহ খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানের ৪৩ জন বিদেশি বক্তাসহ দুই শতাধিক বক্তা ১৮টি সেশনে অংশ নেন। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইটি ক্যারিয়ার বিষয়ক সম্মেলনের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে মেলায় হয়েছে ডেভেলপার সম্মেলন। এছাড়া সফটওয়্যার শোকেসিং, ই-গভর্নেন্স এক্সপোজিশন, মোবাইল ইনোভেশন, ই-কমার্স এক্সপো, স্টার্টআপ জোন ছাড়াও ছিল আইটি সংশ্লিষ্ট ১২টি সেমিনার। আয়োজন ছিল ডেভেলপমেন্ট পার্টনার্স কনফারেন্স, আইসিটি এডুকেশন সম্মেলনের।
ই-কমার্স জোনে বিভিন্ন ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের প্রদর্শনী করা হয়। একই সঙ্গে ক্রেতাদের অর্ডার নেওয়া হয়। এছাড়া ওই জোনে অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন শপিংসহ অনলাইনে কাজ করার বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের। মেলা সম্পর্কে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘তিন দিনের এ আয়োজনে ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থীরা আগামীর ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছে। মেলায় বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। গুগল ডেভেলপার গ্রুপ (জিডিজি) বাংলা ব্যবস্থাপনায় ড্রোন রোবট প্রদর্শন করা হয়।
অনলাইনে সবকিছু যখন হাতের কাছে, তখন শিক্ষা কেন বাদ যাবে। মেলার তিন নম্বর হলে শিক্ষা সম্পর্কিত অ্যাপসের স্টল ছিল। বিভিন্ন শিক্ষামূলক অ্যাপ রয়েছে এখানে। যার মাধ্যমে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্য বইগুলো পড়ার পর কতটুকু পড়া হলো তার নিজে নিজেই পরীক্ষা করতে পারবে এই অ্যাপসের মাধ্যমে। এই অ্যাপসে প্রবেশ করলে প্রথম ধাপে সহজ প্রশ্ন আসবে। সেগুলোর উত্তর দিতে পারলে পরে পর্যায়ক্রমে কঠিন প্রশ্ন আসতে থাকবে। এছাড়া কোনো বিষয়ে বুঝতে চাইলে তা ভিডিওর মাধ্যমে সহজে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। মেলায় শিশুদের জন্য ছিল অনলাইনে ‘শিশু পাঠ’ নামে একটি স্টল। এটি শিশুদের শিক্ষামূলক মোবাইল অ্যাপস। এছাড়া বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ই-সেবা সম্পর্কে মানুষ জানতে পেরেছেন মেলার স্টল ঘুরে ঘুরে।
প্রসঙ্গত, ‘নন স্টপ বাংলাদেশ’ থিমকে সামনে রেখে সরকারের আইসিটি বিভাগ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সহযোগিতায় তিন দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করে। গত ১৯ অক্টোবর দেশের প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, বাংলাদেশ উইমেন ইন ইনফরমেশন টেকনোলজি, সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম।