‘আমি ডেনিমের অ্যাম্বাসাডর’
- মোস্তাফিজ উদ্দিন
মানুষ আমাকে ডেনিমের অ্যাম্বাসাডর বলেন। ডেনিম পাগলা, ডেনিম মোস্তাফিজও বলেন কেউ কেউ। কর্ণফুলী থেকে ক্রাইস্টচার্চ_ অনেকেই পিঠ চাপড়ে দু-দশ লাইন প্রশংসা শোনায়। বলতে দ্বিধা নেই, মানুষের এই কদর-সাদর, আমিও খুব উপভোগ করি। এভাবে বাংলাদেশের ডেনিমের ইমেজ ফেরি করা আমার নেশা আরও পরিণত হয়। দুনিয়ার কোথায় ডেনিমের হাল ফ্যাশনের কী হাল মাথায় থাকে দিনমান সেই আকুলি-বিকুলি। গত অন্তত ১০ বছর ধরে বিশ্বের কোথাও ডেনিমের কোনো আয়োজন হয়েছে আর লাল-সবুজের পতাকা মাথায় পেঁচিয়ে আমি ডেনিমের পসরা নিয়ে বসিনি, এটা হতে দিইনি। এ পাগলামির খেসারতও আমি কম দিইনি। আবার ফলও কুড়িয়েছি।
আমার বলতে দ্বিধা হচ্ছে না, বাংলাদেশের পোশাক রফতানি মানেই দর্জিগিরি- এ দুর্নাম দূর করে ‘ব্লুএক্সঅনলি’ বাংলাদেশের একমাত্র ব্র্যান্ড আমিই গড়ে তুলেছি। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে নিজস্ব ওয়্যারহাউস থেকে ইউরোপের সব দেশের শোরুমে এখন ব্লুএক্সঅনলি শোভা পাচ্ছে। আমার স্বপ্ন বিখ্যাত জারা, ডিজেলের মতো ব্র্যান্ডিং দুনিয়ায় একদিন সমীহ কুড়াবে বাংলাদেশের ব্লুএক্সঅনলি।
আমি এখন দিব্যি দেখছি, বাংলাদেশের ডেনিমের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। কারণ অনেক উন্নত দেশকে পেছনে ফেলে ইউরোপে ডেনিম রফতানিতে বাংলাদেশই এক নম্বর। আর যুক্তরাষ্ট্রেও আমাদের অবস্থান শীর্ষ পাঁচের মধ্যে। সম্ভাবনা কেন বলছি! কারণ, ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশ্ব ডেনিম বাজারে আমাদের রফতানি এখনও মাত্র আড়াই বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগামী দিনগুলোতে এ শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। মৌলিক মানের জিন্স দিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও এখন ডেনিম ফেব্রিক্স উৎপাদন, ওয়াশিং, প্রসেসিং ইত্যাদি খাতে অভাবনীয় সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে আমরা উচ্চ মূল্যের প্রিমিয়াম ডেনিম জিন্স তৈরি করছি এখন। তবে সম্ভাবনার পূর্ণ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে ৫টি বিষয়ে মনোযোগ বাড়াতে হবে। এগুলো হচ্ছে- ট্রেন্ড ও ফ্যাশন, ওয়াশিং, ফিটিংস, এফেক্টসে কারিগরি দক্ষতা বাড়ানো, উচ্চ মূল্যের পণ্যের জন্য নিজেদের প্রস্তুতি, পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন ও সর্বোপরি বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বব্যাপী জানান দিতে আন্তর্জাতিক মানের ব্র্যান্ডিং কর্মসূচি হাতে নেওয়া। তাহলে ডেনিমই হবে বাংলাদেশের পরিচয়।
১৫ বছর আগে ডেনিমের সঙ্গে যখন নাম লিখালাম, তখন থেকেই ডেনিমে এ দেশকে ব্র্যান্ডিংয়ের লক্ষ্য নিয়ে আমি দক্ষ পেশাদার গড়ে তুলতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ঢাকায় ডেনিমের বিশ্বমানের প্রদর্শনী করছি নিয়মিত। আমার পরিকল্পনা আছে, বাংলাদেশ ডেনিম একাডেমি স্থাপন করব। এর মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন, একটি ডেনিম ডেভেলপমেন্ট স্টুডিও স্থাপনের মাধ্যমে ডেনিম মিল ও পোশাক কারখানাগুলোকে ক্রেতাদের চাহিদার অনুরূপ পণ্য তৈরিতে সহায়তা পাবেন ডেনিমের উদ্যোক্তা এবং কর্মীরা। স্বপ্ন আছে, বাংলাদেশ ডেনিম টাইমস শীর্ষক প্রকাশনা করার। এর মাধ্যমে ডেনিম-বিষয়ক প্রযুক্তি, বাজার, ফ্যাশন, ট্রেন্ড, পূর্বাভাস দেওয়া হবে। ভালোয় ভালোয় এ স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে এবং সরকার এবং উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে আগামী ৫ বছরে ডেনিম থেকে বিশ্ববাজারের ১০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৭০০ কোটি ডলার রফতানি আয় অর্জন সম্ভব।
মোস্তাফিজ উদ্দিন: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাতের অনন্য উদ্যোক্তা। ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে ২০০৯ সালে শুরু করা তার প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বছরে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ডেনিম প্যান্ট বিশ্ববাজারে রপ্তানি করছে।
সূত্র: সমকাল