উন্নয়ন আলাপ ও আশা জাগানিয়া তারুণ্য
- আতিউর রহমান
কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। চার শর মতো তরুণ-তরুণীর সঙ্গে এই উন্নয়ন আড্ডাটি ছিল প্রাণবন্ত ও আশাজাগনিয়া। সেই আড্ডার কিছু কথা আজ পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। আশা করি, পাঠকরাও এই আড্ডায় নিজ নিজ পরিসরে অংশগ্রহণ করবেন।
আমার কাছে মনে হয়, উন্নয়নসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। উন্নয়ন শব্দটি হয়তো উচ্চারণ করেননি তিনি। তবে সারকথাগুলো ঠিকই বলেছেন। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার পূর্ণ স্বাধীনতায়। আর বলতেন পাঁচজনে মিলে একযোগে কাজ করতে। তাতে ভরসার পরিবেশ তৈরি হয়। সমাজের এই এক হওয়ার বিষয়টি তাঁকে খুবই অনুপ্রাণিত করত। অমর্ত্য সেনের একটি বড় বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জন হলো উন্নয়ন ভাবনাকে স্বাধীনতার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া। তিনি যথার্থই লিখেছেন যে উন্নয়ন ভাবনা একটি খুবই বহুমাত্রিক ও পার্থিব বিষয়, যা শুধু অর্থনৈতিক বিষয় দিয়ে বোঝানো যাবে না। এর সঙ্গে স্বাধীনতার বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক গল্পে অত্যন্ত সুন্দরভাবে মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে কী পরিণতি হয়, তা উপস্থাপন করেছেন। দুর্ভিক্ষের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মৌলিক খাবার চাহিদার বিষয়টি তুলে এনেছেন।
উন্নয়ন ভাবাদর্শের ক্রমবিবর্তনে দেখা যায়, পঞ্চাশের দশকে মর্ডানাইজেশন তত্ত্বটি বেশ গুরুত্ব লাভ করে। রাষ্ট্র অবকাঠামোর উন্নতির জন্য বিনিয়োগ করতে শুরু করে। এ ধারা এখনো আমাদের মতো দেশে প্রচলিত রয়েছে। রাষ্ট্র ও ব্যক্তি খাত একযোগে উন্নয়নকর্মে অংশ নিচ্ছে। মর্ডানাইজেশনের পাশাপাশি একটি পাল্টা গ্রুপ দাঁড়িয়ে গেল সে সময়। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকায় এটি শুরু হয়। তারা ‘ডিপেন্ডেসি থিওরি’র প্রবক্তা। একটি মূল কেন্দ্র থাকবে, এর চারদিকে থাকবে অনেক উপকেন্দ্র। অর্থাৎ একটি প্রভাব-বলয় সৃষ্টি হবে। সত্তরের দশকে আসে ‘বেসিক নিড অ্যাপ্রোচ থিওরি’। এ ক্ষেত্রে আইএলও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বিশ্বব্যাংক ও আরো অনেকে, যেমন জাতিসংঘ সে সময় বলল, মূলত খাদ্য, বস্ত্রের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। এরপর এলো ‘নিও ম্যালথসিয়ান থিওরি’। যার মূল কথা ছিল জনসংখ্যা কমানোর নীতি। আশির দশকে আসে ‘নিওলিবারেলিজম’; বাজার অর্থনীতির তার একটি চরম রূপ। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র ব্যক্তি খাতকে সহযোগিতা করবে। মুক্তবাজার অর্থনীতির মূলকথা ‘প্রাইস’ বা মূল্যকে চাহিদা ও সরবরাহের আলোকে নির্ধারিত হতে দিতে হবে।
আশির দশকে এলো ‘পোস্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যাপ্রোচ’, তাগিদ দেওয়া হলো সংস্কৃতির উন্নয়নের ওপর। এখানে উন্নয়নের সঙ্গে সংস্কৃতিকে মেলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০০ সালের পরে এলো বিশ্বায়ন। তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার ও পুঁজির সীমাহীন চলাচলের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে এক সুতায় গেঁথে ফেলা হলো। বিশ্বজুড়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধি ও অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নের নীতিনির্ধারণ আর দেশীয় গণ্ডির ভেতর সীমাবদ্ধ থাকল না। এরপর এলো ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা ‘MDG’; ২০০০ সালে জাতিসংঘ এ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। মূলত দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হলো এই বিশ্বচুক্তির আওতায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য যথেষ্ট। এরপর এলো ‘SDGs’ বা ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭টির মতো লক্ষ্য পূরণ করার কথা বলা হয়েছে এসডিজিতে। এখানকার দুটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, অর্থনীতি ও পরিবেশ। আর সামাজিক উন্নয়ন তো আছেই। এই তিনে মিলেই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
১৯৭২ সালে আমাদের অবস্থান শেষের তিনটি দেশের সঙ্গে যুক্ত করা হতো—হাইতি, সিয়েরা লিওন ও কম্বোডিয়া। কিন্তু বর্তমানে প্রথম পাঁচ-সাতটি সফল অগ্রগতির দেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা করা হয়। হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশকে দিয়ে কিছু হবে না। এটি ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’। অর্থনীতিবিদ পারকিনস বলেছিলেন, বাংলাদেশে যদি কিছু উন্নয়ন ঘটে, তবে পৃথিবীর যেকোনো দেশে উন্নয়ন ঘটতে পারে। এতটা তাচ্ছিল্য করা হয়েছিল বাংলাদেশকে নিয়ে। কিন্তু নৈরাশ্যবাদী এসব ভাবুককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা দেখছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন এবং বলেছেন, বেশি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি যে আর্থিক সাম্যও বাড়ানো সম্ভব, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে এটা প্রমাণিত হয়েছে। একই সঙ্গে এটাও নির্দ্বিধায় বলা যায় যে আর্থিক সাম্যের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির এ ধারা টিকিয়ে রেখেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। তবে এ জন্য সরকারকে অনেক নতুন দায়িত্ব নিতে হবে এবং নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ করতে হবে; যাতে সবাই এর মধ্যেই অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে শেখার সুযোগ পায়। তিনি সব ধরনের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শিক্ষার প্রভাব পরবর্তী সময়ে অন্যান্য শিল্পের বিকাশে সাহায্য করছে। আমরা দেখি, চারটি বিষয়ে রূপান্তর ঘটছে বাংলাদেশে : নগরায়ণ, শিল্পায়ন, জনসংখ্যা ও প্রযুক্তি। ১৬ কোটির এ দেশে একদিকে নগরায়ণ হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত। ৩০ শতাংশের মতো মানুষ এখন নগরে বাস করে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ একটি বড় সমস্যা। শিল্পায়ন ঘটছে দ্রুত, প্রায় ৩১ শতাংশ জিডিপি আসছে এ খাত থেকে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আছে মোবাইল ফোন ব্যবহারে আধিক্য। আর আছে তারুণ্য। মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি ২৫ বছরের নিচে।
প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের পরিবর্তন অভাবনীয়। অল্প সময়ের মধ্যে এত পরিবর্তন পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হয়নি। একসময় মোবাইলভিত্তিক সব কাজকর্ম সম্পন্ন হবে। শিগগিরই ‘ফোরজি’ প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য—সব কিছু তখন মোবাইলের মাধ্যমে হবে। রেমিট্যান্স বিষয়ে একটি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বিদেশে ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যোগাযোগ করানো গেলে হুন্ডি বন্ধ করা সহজ হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। এটি খুবই শুভ লক্ষণ।
বাংলাদেশ আসলে দরিদ্রবান্ধব উন্নয়নের এক ‘সিলিকন ভ্যালি’। উদ্ভাবনকেন্দ্র। আমরা যে চারটি চ্যালেঞ্জের রূপান্তরের কথা বলেছি সেগুলো নিঃসন্দেহে অনেক টেনশন তৈরি করছে। এসব টেনশন দূর করতে অবশ্যই সবার হাতে অর্থ দেওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা জোরদার করতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি করা গেছে বলে বাংলাদেশে সামাজিক ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। চারদিকে অভাব-অনটনের সংকট নেই। সে কারণেই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের কথা বলা হয়েছে। সুশাসন, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতার কথা বলা হচ্ছে।
ভোগবৈষম্যের ক্ষেত্রে আমাদের Volatility (এক বছর থেকে আরেক বছরের প্রবৃদ্ধির যে পরিবর্তন) সেটা সবচেয়ে কম ০.৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশে এখন এর হার ৫.৫ শতাংশের দিকে চলে এসেছে। ২০০৫-০৬ তো এর দ্বিগুণ ছিল। ম্যাক্রো অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। ফলে দারিদ্র্য কমছে। আমাদের দারিদ্র্যের হার এখন ২২.৫ শতাংশ, যা ২০১৫ সালে ছিল ২৫ শতাংশ। এখানে অতি দারিদ্র্যের হার ১২ শতাংশ। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা তা ৮ শতাংশে নিয়ে যাব। মাত্র ১০০ ডলারের মতো মাথাপিছু আয় নিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। সেই সূচক এখন প্রায় দেড় হাজার ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আমাদের অর্থনীতির আকার বা জিডিপির পরিমাণ ছিল ৭২ বিলিয়ন ডলার। এখন তা ২২১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ওই সময় আমরা রপ্তানি করতাম ১০ বিলিয়ন ডলার। এখন ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এভাবেই বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় গতি এসেছে। তা সত্ত্বেও বৈষম্য আছে। তবে গরিব মানুষের হাতে এখন অর্থও যাচ্ছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আয়বৈষম্যের সূচক বাংলাদেশে এখন অনেক কম (০.৩২)। তবে এ কথাও ঠিক, হালে গুটিকয় মানুষের হাতে অনেক সম্পদ চলে যাচ্ছে।
নারী উদ্যোক্তারা এখন বেশ কিছু ক্ষেত্রে টাকা পান। প্রতিটি ব্রাঞ্চ থেকে অন্তত একজন নারী উদ্যোক্তাকে ঋণ দিতে হবে বলে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমাদের শ্রমশক্তিতে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। নারীদের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসছে। আনুষ্ঠানিক শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ ৩ শতাংশ ছিল ১৯৯৭ সালে। ২০১০ সালে এসে তা হলো ৩৪ শতাংশ। নারীর উন্নয়নের জন্য এটা ভালো দিক।
ফোরজি টেকনোলজি মোবাইলে সংযুক্ত করা হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে লেখাপড়া, দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উভয়মুখী টেলিমেডিসিনের প্রসার, মিডিয়ার ক্ষেত্রে সনাতনী ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার, ই-সার্ভিসের ক্ষেত্রে অ্যাপস-ভিত্তিক ই-সার্ভিস, অনলাইন শপিং, ব্যাংকিং ইত্যাদির প্রসার ঘটবে। এর মধ্যে উবার যাত্রা শুরু করেছে। এমন আরো অনেক সেবা প্রযুক্তির কল্যাণে সহজসাধ্য হয়ে যাবে। এমএফএস ও স্মার্টকার্ডের সমন্বয় ঘটিয়ে আরো দক্ষ ও নিরাপদমুখী সেবা দেওয়া যাবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইনডিকেটর রিপোর্টে দেখা গেছে, বাংলাদেশ সর্বশেষ গত এক বছরে ৪৪তম থেকে ৩৬তম উঠে এসেছে। সেখানে ভারতের অবস্থান ৬০, পাকিস্তান ৭০। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রাখা হলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের অর্জনগুলোকে ছোট করা হয় এবং আমাদের উদ্যোগগুলো বিশ্বে তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
২০৩০ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাইলে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশেরও বেশি হতে হবে। জিডিপির ৩৪ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আমিও মনে করি, বিনিয়োগে আরো বেশি আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আমাদের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আড়াই কোটির মতো মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাদের আমাদের দ্রুত ওই জায়গা থেকে টেনে ওপরে নিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণ বাংলার অনেক মানুষ ঢাকার বস্তিগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। দক্ষিণে দারিদ্র্যের মাত্রা বেশি। আমাদের ভাবতে হবে তাদের নিয়ে। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের রাজস্ব আয় অবশ্যই বাড়াতে হবে। মোট জিডিপির ১০.৭ বা ১১ শতাংশ আমাদের বর্তমান রাজস্ব। এ হার মোটেও সন্তোষজনক নয়। আমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান তাদের রাজস্ব খাতে নিয়ে আসতে হবে। সবাইকে রাজস্ব প্রদানে আরো উৎসাহী হতে হবে।
সবশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের অর্থনীতির তিনটি খাত—সেবা, ম্যানুফ্যাকচারিং ও কৃষি একসঙ্গে উন্নতি করছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে কম খরচে শিল্পায়নের উন্নয়ন হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের গণমাধ্যম যথেষ্ট স্বাধীন। সামাজিক মাধ্যমও বেশ সক্রিয়। গণতান্ত্রিক পরিবেশে শিল্পায়ন হচ্ছে। এই পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। রপ্তানিমুখী যে শিল্প গড়ে উঠছে, তা বজায় রাখতে হলে এই পরিবেশ যেকোনো মূল্যেই রক্ষা করতে হবে। বিদ্যমান সামাজিক শান্তি বজায় রাখতে পারলে আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রা নিশ্চয় সফল হবে।
তরুণ ছাত্রছাত্রীরা উন্নয়ন আলাপের শেষ পর্যায়ে তাদের ভাবনাগুলো তুলে ধরে। প্রশ্নগুলো ছিল খুবই তীক্ষ ও আশাজাগানিয়া। তারা সবাই উন্নয়ন অভিযাত্রায় বাংলাদেশের তেজি ভাবটি অনুভব করতে পারে। এতে অংশগ্রহণ করতে তারা খুবই আগ্রহী। তবে তারা আরো দক্ষ ও উদ্ভাবনীমূলক শিক্ষার সুযোগপ্রত্যাশী। আমিও মনে করি, আমাদের শিক্ষা খাতে আরো সরকারি অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষায় আরো বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। উদ্ভাবনীকেন্দ্র স্থাপন করে তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। ব্যক্তি খাতেরও সামাজিক দায়বোধ নিয়ে এ কর্মযজ্ঞে শামিল হতে হবে। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ও আশাজাগানিয়া মনোভাব আমাকে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা সম্পর্কে আরো বেশি আশাবাদী করে তুলেছে। আশা করি, এই আশান্বিত হওয়ার পরিবেশ যেন বরাবরই বজায় থাকে।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর