প্যারিস হামলা ও আমাদের নিরাপত্তা : জ.ই. মামুন
“যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”
____________________________সুকান্ত ভট্টাচার্য
জ.ই. মামুন: প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা শোনার পর থেকেই আমার মনের মধ্যে অনেকগুলো ভাবনা ঘুরছে। ধর্মের নামে এত বড় অধর্ম আর কি হতে পারে! মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। নিরপরাধ নিরীহ মানুষের উপর এমন হামলা, বর্বরতা এবং প্রাণহাণীর ঘটনায়, আমি বিশ্বাস করি আল্লাহর আরশও কেঁপে ওঠার কথা। কিন্তু তার পরেও এ ধরণের ঘটনা বন্ধ হয়না, বরং দিনে দিনে আরো বাড়ে!
দ্বিতীয় প্রশ্ন, প্যারিস বা ইউরোপ তো আফগানিস্তান বা পাকিস্তান নয় যে ডালায় ভরে এক ৪৭ রাইফেল বিক্রি হয় আর যে কেউ কিনে নিয়ে তা ঘরে সাজিয়ে রাখতে পারে, চাইলে কাউকে গুলিও করতে পারে। প্যারিসের মতো শহরে যখন একে ৪৭ রাইফেল নিয়ে কেউ সন্ত্রাসী হামলা করে, তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে এদের নেটওয়ার্ক কত গভীরে বিস্তৃত! প্যারিসের অবস্থাই যদি এই হয় তাহলে আমাদের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা কতখানি শক্ত, তা বোধ হয় নতুন করে ভাবার সময় এসেছে রাষ্ট্র পরিচালকদের। শুধু কথায় বেশিদিন চিড়ে ভিজবে না!
তৃতীয় যে প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরছে, সেটা হলো আমাদের দেশের যেসব তরুণ তরুনী উগ্রবাদী সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে বাংলাদেশকে অনিরাপদ দাবি করে জার্মানি ফ্রান্স বা তথাকথিত উন্নত দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় খোঁজেন এবং সেই আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে সে দেশের সরকারের কাছে নিজের দেশ সম্পর্কে নিকৃষ্টতম মন্তব্য করতে যাদের বিবেকে বাঁধে না, তারা এই হামলার পর ওইসব দেশে কতটুকু নিরাপদ বোধ করছেন?
আমি জানি আমার দেশ সব সময় সবার জন্য, এমনকি আমার নিজের জন্য বা আমার সন্তানের জন্যও নিরাপদ নয়। কিন্তু তাই বলে নিজের দেশ ছেড়ে ইউরোপ আমেরিকা গিয়ে শরণার্থীর মর্যাদা নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মতো বিশ্ব পরিস্থিতি কি এখন আর অবশিষ্ট আছে?
তার চেয়ে ভালো নয় কি, বরং নিজের দেশে থেকে, সবাইকে নিয়ে নিজের দেশের শত্রুদের সঙ্গেই যুদ্ধ করা, মরতে যদি হয় দেশেই না হয় মরলাম। মরার আগে অন্তত দেশকে শত্রুমুক্ত করার সংগ্রামটা যাতে চালাতে পারি, হোক সে রাজপথে, কলমে, কী বোর্ডে অথবা টিভির পর্দায়! আর মরে গেলেও অন্তত দেশের মাটি তো জুটবে কপালে! ৫৬ হাজার বর্গমাইল না হোক, সাড়ে তিন হাত ভূমি তো এই বাংলায় আমারই থাকবে!