উদ্যোক্তার জন্য ১৩ টি শিক্ষা
- নাইমা জাহান
উদ্যোক্তা হওয়ার পথটা কী আসলেই সোজা পথ? অনেকেই মনে করে উদ্যোক্তা হতে হলে শুধু ইনভেস্টমেন্ট হলেই চলে। কিন্তু আসলেই কী তাই?
একবিংশ শতাব্দীর এই “নলেজ ইকোনমির” যুগে প্রত্যেক উদ্যোক্তার টাকা থাকুক আর না থাকুক জ্ঞ্যন অবশ্যই থাকতে হবে। উদ্যোক্তা হওয়ার পথটা একদম সোজা না, আঁকাবাঁকা পথ সাথে বিভিন্ন ঝুকি, চ্যালেঞ্জ আর অনেক অনেক এড্রেন্যালিনের ক্ষরণ। শিক্ষা হলো উদ্যোক্তাদের জন্য এই আঁকাবাঁকা পথ সহজে পাড়ি দেওয়ার একটি বাহন।
সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি প্রত্যেক উদ্যোক্তার জন্য বিশেষ কিছু জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, যেসব অভিজ্ঞতা তার চলার পথকে সহজ করে। জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে উদ্যোক্তাদের জন্য দরকার এমন ১৩টি শিক্ষার তালিকা দেওয়া হলো:
১. অন্যর ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া
কথায় আছে বুদ্ধিমান মানুষেরা ভুল থেকে সব সময় শিক্ষা নিয়ে থাকে, যেন পরবর্তীতে সেই ভুলটা না করে। উদ্যোক্তাদের জীবনে ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু সেই ভুলের খেসারতটা কিন্তু ততটা স্বাভাবিক থাকে না। তাই প্রত্যেক উদ্যোক্তার উচিত সব সময় সতর্ক থাকা। আশেপাশে কী হচ্ছে সে ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া যেন অন্য উদ্যোক্তার ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারে। এই জন্য প্রতিটা মূহুর্ত চোখ কান খোলা রেখে কাজ করে যেতে হবে। তাই বলে এমন না যে এই পরামর্শ মেনে চললে আপনার কোন ভুল হবে না। প্রত্যেক উদ্যোক্তাই মানুষ আর মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। তবে আপনার কোনো ভুল হয়ে গেলে সেই ভুলের ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কমিয়ে আনা যাবে সেই বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে হবে আপনার।
২. নিজের টাকা এবং নিজেকে ম্যনেজ করা শিখুন
আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস কী জানেন?
আপনি এবং টাকা। হ্যা, আপনি যদি সঠিকভাবে নিজেকে এবং আপনার ব্যবসার টাকাকে ম্যানেজ করতে পারেন তাহলেই অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে ব্যবসা সামনে আগানোর জন্য। অনেক উদ্যোক্তাই অল্প সাফল্যেই নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করা শুরু করে এবং অযথাই খরচ করে বড় অফিস, সুন্দর ফার্নিচার দিয়ে। এভাবে ক্যশ বার্ণ করার ফলে অল্প দিনেই ব্যবসার ফান্ডের বারোটার সাথে চৌদ্দটাও বেজে যায়। তাই সব সময় মনে রাখতে হবে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই আপনাকে
- টাকা খরচের ব্যাপারে বুদ্ধিমান হতে হবে
- নিজের সময়ের সঠিক ব্যাবহার করতে হবে
- রুটিনের মধ্য থাকতে হবে
৩. নেটওয়ার্কিং
আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কে আপনি লিড দিবেন ঠিক আছে, কিন্তু আপনি একাই সফলতা নিয়ে আসতে পারবেন না। আপনার দরকার মানুষ যারা আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্য আপনাকে সাহায্য করবে। উদ্যোক্তা হওয়ার পথটা কখনোই একাই জয় করা যায় না। আপনার একটি টিম লাগবে যারা আপনার পাশে থেকে আপনার যাত্রার সঙ্গী হবে।
৪. নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া
ভুল করে ফেলেছেন? হা-হুতাশ করছেন, এটা আমি কী করলাম? মাথার চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে?
ব্যাপার না, প্রত্যেক নতুন উদ্যোক্তার জন্য ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। বুদ্ধিমানের কাজ কী হবে জানেন? ঠান্ডা মাথায় এই ভুল গুলো শুধরা্নো এবং এ থেকে শিক্ষা নেওয়া যেন ভবিষতে এই কাজ আর না করেন। একসময় দেখবেন এই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটাই আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক ছিল।
৫. আপনার কাজের সাথে মিল আছে এমন উদ্যোক্তাদের ফলো করা
ইন্টারনেটের কল্যাণে সারা বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। আমরা সহজেই যেকোন তথ্য পেয়ে থাকি। উদ্যোক্তাদের উচিত এর সর্বোচ্চ ব্যাবহার করা। নিজের কাজের ক্ষেত্রের সাথে মিল আছে এমন অন্য উদ্যোক্তাদের কাজের ব্যাপারে খেয়াল রাখা, যেন তারা কী করছে এবং আপনি কী করছেন সেই ব্যাপারে পূর্ণ সজাগ থাকতে পারেন। তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন কোথায় কোথায় আপনার সংশোধন করতে হবে।
৬. টিম তৈরি
উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে সব কাজ নিজে করাটা অনেক বুদ্ধিমান অপশন মনে হলেও, ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে আপনার একা সব কাজ করার মানসিকতা বোকামি হয়ে যাবে। ব্যবসা বড় করার জন্য আপনার দরকার একটি সফল টিম, যারা আপনার সাথে আপনার ব্যবসার হাল ধরবে। টিম তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুতপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক মানুষকে সঠিক জায়গায় দেওয়া। সবাই মিলে একসাথে কাজ করার মধ্যই সফলতা নির্ভর করবে।
৭. দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া
সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেকোন মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও উদ্যোক্তাদের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক বেশী দরকার। উদ্যোক্তা পথটা অনেক বেশী চ্যলেঞ্জ সমৃদ্ধ, তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার গুণ থাকা দরকার। অনেক প্ল্যান করে কাজ করার পরও মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতি এসে পড়ে যেগুলো হয়তো আমাদের প্ল্যানের অংশ ছিল না, এই মূহুর্তগুলোতে আগে থেকে করা ফুল-প্রূফ প্ল্যান বাদ দিয়ে দ্রুত অন্য প্ল্যান করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৮. নিজের কাজ নিয়ে ভাবুন
সারাদিনের কাজকর্ম নিয়ে চিন্তা ভাবনার জন্য রাতে নিজের জন্য একটু সময় বরাদ্দ রাখা দরকার। এই সময়টাতে সারাদিন আপনি কী কাজ করলেন, কীভাবে কাজ করলেন, কাজগুলো আর কীভাবে করলে বেশী ভালো হতো বা পরের দিন কীভাবে বাকী যে কাজগুলো আছে সেগুলো কিভাবে সারবেন সেটার একটা কর্ম পরিকল্পনা মনে মনে ঠিক করে রাখা। এভাবে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার কোন কাজটা কীভাবে করলে আরো ভালো আউটকাম আসবে।
৯. মেন্টর ঠিক করা
অভিজ্ঞতা কখনো বিফলে যায় না, তাই প্রত্যোক উদ্যোক্তার উচিত নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যারা সফল তাদের থেকে সাপোর্ট নেওয়া। মেন্টর ঠিক করে তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে যেকোন চ্যলেঞ্জের সম্মুখিন হলে তাদের থেকে সাহায্য নেওয়া।
১০. মানি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে সচেতন থাকা
দিনশেষে আপনি কিন্তু প্রফিটের জন্যই ব্যবসা করছেন। তাই না? “ক্যাশ ইজ কিং” স্টার্টাপ বিজনেসে টাকা ম্যনেজ করাটা খুবই দরকার। কারণ এই সময় অতিরিক্ত ক্যাশ বার্ন আপনার ব্যবসার জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে। কোথায় কত খরচ করতে হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা থাকা, বাজেটের অতিরিক্ত কখনো যেন খরচ না হয় লক্ষ্য রাখা কারণ দিনশেষে ব্যবসার ক্ষেত্রে সবাই লাভ-ক্ষতির হিসাবই কষবে। তাই মানি ম্যানেজমেন্ট এর জ্ঞান রাখা দরকার।
১১. পরিবর্তনশীল হোন
আমাদের যুগটা কিন্তু পরিবর্তনের যুগ। সময়ের সাথে সাথে মানুষের চাহিদা, আচার আচরণের ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। তাই একজন উদ্যোক্তার উচিত সব সময় পরিবর্তনের সাথে নিজেকে এবং নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করা। তাহলেই আপনি লম্বা সময় ধরে ব্যবসা করে যেতে পারবেন।
১২. যেকোন পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিন
একজন উদ্যোক্তার জীবনে শিক্ষার সময়কাল কখনো শেষ হয় না। প্রতিটি পরিস্থিতি থেকে তাকে শিক্ষা নিতে হয়। এমন একটি মানসিকতা তৈরি করুন যাতে আপনার কাজের ভালো খারাপ সব দিকগুলো আপনি পর্যালোচনা করতে পারেন।
১৩. ভয় না পেয়ে কাজ শুরু করুন
নতুন কিছু করতে চাচ্ছেন? কিন্তু ভয়ের লাগাম আপনাকে টেনে ধরেছে?
এটা অস্বাভাবিক কিছু না, মানুষ মাত্রই নতুন কিছুতে ভয় পায়। কিন্তু উদ্যক্তা হতে হলে আপনার মনে রাখতে হবে, এই নতুন কিছু জয়ের আশায় আপনাকে ভয় দূর করতে হবে। যেকোনো কিছু করার জন্য যে সাহসিকতা প্রয়োজন সেটা আপনাকে অর্জন করতে হবে। সবচেয়ে দারুণ উপায় হলো কাজে নেমে পড়ুন এবং কাজ করতে করতে শিখুন।
সূত্র: ফোর্বস
নাইমা জাহান : শিক্ষার্থী, ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি