ল্যান্ডিং ইতিহাসের ‘হাডসন হিরো’
- মো. মাসুদ রাব্বানী
২০০৯ সালের জানুয়ারির ১৫ তারিখে নিউইয়র্কের ঝলমলে আকাশে ১৫০ জন যাত্রী নিয়ে উড্ডয়ন করেছিল ইউএস এয়ারওয়েজের এ৩২০ এর একটি ফ্লাইট। বিমানটিতে ছিল ১৫০ জন যাত্রী এবং ৫ জন ক্রু। পাইলটের আসনে ছিলেন ক্যাপ্টেন চেলসি সালেনবার্গার। যার ফ্লাইং আওয়ার ছিল ২০ হাজার ঘন্টা। কো-পাইলট হিসেবে ছিলেন জেফরি স্কাইলস। তিনি মাত্র কিছুদিন হল জয়েন করেছেন।
৭ হাজার ফুট উচ্চতায় ওঠার পর ককপিট থেকে কন্ট্রোল রুমে জানানো হয় তারা ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায় বিমানটি নিয়ে যেতে চান। বিমানটির গতিবেগ ছিল তখন প্রতি ঘন্টায় ২৩০ মাইল। বিমানটি যখন উপরে উঠছিল তখনই ঘটল বিপত্তি। একদল পাখি এসে বিমানের ইঞ্জিনে আঘাত হানে। মুহুর্তের মধ্যেই বিকল হয়ে যায় বিমানের দুটি শক্তিশালী ইঞ্জিন। ককপিট থেকে তখন ইঞ্জিনের আগুন দেখতে পাচ্ছিলেন পাইলট সালেনবার্গ। মাঝ আকাশে নিরুপায় হয়ে দেখা ব্যাতীত আর কিছুই করা সম্ভব ছিল না তার পক্ষে।
নিকটস্থ কোনো এয়ারপোর্টে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের জন্য অন্তত একটি ইঞ্জিন সক্রিয় থাকতে হয়। কিন্তু ইউএস এয়ারওয়েজের এ৩২০ মডেলের বিমানটির দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে পড়েছিল। ১৫০ জন যাত্রী নিয়ে স্রেফ মাটিতে আছরে পরে বিধ্বস্ত হওয়া ব্যাতীত আর কোনো উপায় ছিল না পাইলটের হাতে । ক্যাপ্টেন সালেনবার্গ তখন যোগাযোগ শুরু করেন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সাথে। কো-পাইলট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিকল ইঞ্জিন দুটি পুনরায় চালু করার। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছিল না। সালেনবার্গ তার ৪০ বছরের বিমান চলানোর অভিজ্ঞতায় এরকম পরিস্থিতি কখনো মোকাবেলা করেননি।
বিকল ইঞ্জিন নিয়ে তখন পেছনে কিংবা সামনে এগিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, তাই সালেনবার্গ একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ঠিক করলেন কাছের হাডসন নদীতেই তিনি ল্যান্ডিং করবেন। কন্ট্রোল রুমের সবাই তখন হতবাক হয়েছিলেন বটে, কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। ক্যাপ্টেন সালেনবার্গ ভেবেছিলেন, কিছুই যখন করার নেই তখন এটাই হোক বাঁচার শেষ চেষ্টা।
বিকেল ৩ টা ৩০মিনিটে ক্যাপ্টেন সালেনবার্গ বিমানটিকে গ্লাইড করতে করতে নিয়ে আসেন হাডসন নদীর উপর। ওয়াশিংটন ব্রীজের মাত্র ৯ শত ফুট উপর দিয়ে বিমানটি গিয়ে আছড়ে পরে হাডসন নদীর শীতল পানিতে। বিমানের ভেতর থেকে তখন শুধু চিৎকার আর চেঁচামেচির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ১৫০ মাইল গতিতে বিমানটি নদীতে সুইপ করে ভেসে রইল কোনো রকম অঘটন ছাড়াই। ১৫০ জন যাত্রী এবং ৫ জন ক্রুর সবাই ছিলেন সুস্থ এবং অক্ষত।
এই ঘটনার পর সালেনবার্গ রাতারাতি হিরো বনে যান। তাকে বলা হয় হাডসন হিরো এবং রাষ্ট্রীয় খেতাবেও ভূষিত করা হয়। বর্তমানে বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের এভিয়েশন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।