ফরিদপুরের ‘জসীম পল্লীমেলা’ বন্ধ কেন?
- বিপ্লব শেখ
“আমি মেলা থেকে তাল পাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি
বাঁশি কই আগের মতো বাজে না
মন আমার তেমন যেন সাজে না!”
গানের ভাষায় লেখকের মন না সাজলেও মেলা হলেই বাঙালির মন নানা রঙে সেজে ওঠে। মেলা মানেই রঙ বেরঙের নানান কিছু, সমাগম ও আনন্দ উৎসব। হ্যাঁ এই মেলা বাঙালি সংস্কৃতির একটি অংশ, যেটি বাঙালির অস্তিত্বকে প্রকাশ করে। তাইতো প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালিরা নানা নামে, নানা উৎসবে মেলা উদযাপন করে আসছে।
এমনই একটি মেলা জসীম পল্লীমেলা। বৃহত্তর ফরিদপুরের সবচেয়ে বড় এই মেলাটি পালিত হয় পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে। ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুরে কবির নিজ বাড়ির সামনের মাঠেই প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন করা হয়।
এই মেলার এক প্রান্তে থাকে জসসীম-মঞ্চ । যেখানে আয়োজিত হয় পুতুল নাচ, নৃত্য, মঞ্চনাটক ও যাত্রার মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া এই মেলায় সার্কাস, মাটির পুতুল, নাগরদোলাসহ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও বাহারি ধরনের খাবারের দোকানসহ প্রায় তিন শতাধিক দোকানের দেখা মিলে।
মেলাটি জসীমউদ্দিনের বাড়ির সামনে হওয়ায় দর্শনার্থীরাও বেশ উচ্ছ্বসিত থাকেন। কারণ এখানে তারা এক ঢিলে দুই পাখি মারার আদন্দ খুঁজে পান। যেহেতু এটি জসীমউদ্দিনের বাড়ির সামনে তাই দর্শনার্থীরা মেলা দেখার পাশাপাশি কবির বাড়ি ও কবরস্থানও দেখতে পান। সেখানে আজও দাঁড়িয়ে আছে বিখ্যাত ‘কবর’ কবিতার ঐতিহাসিক সেই ডালিম গাছ। আর এভাবেই মেলাটি দূর-দূরান্তের মানুষকে এখানে আসতে উৎসাহিত করে। এই উৎসাহ যেন কবি জসীম উদ্দীনের সেই উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিতেই। যে আহ্বান ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতার মাধ্যমে কবি নিজে করেছিলেন । আর বলেছিলেন,
‘তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে,
আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায়
উদাসী বনের বায়!’
কবির এমন আহ্বানে সাড়া দিতেই কি প্রতিবছর অসংখ্য লোক মেলায় আসছে? সে যে কারণেই আসুক না কেন, কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই মেলা আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে কাটায় সকলে।
ঐতিহ্যপূর্ণ এই মেলাটি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জসীমউদ্দিন ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় ১৯৯১ সাল থেকে আয়োজিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর একই সময় অর্থাৎ জানুয়ারি মাসেই জসীম পল্লীমেলা অনুষ্ঠিত হয়। আর এর সময়কাল থাকে শুরুর দিন থেকে পরবর্তী ৩০ দিন অর্থাৎ এক মাস।
মাসব্যাপী এই মেলায় প্রতিদিনই হাজার হাজারো মানুষের আগমন ঘটে। কিন্তু এই উচ্ছ্বসিত মানুষের মনেও যে কালো মেঘের মতো কষ্টের স্তূপ জমেছে। কারণ কয়েক বছর ধরেই এক অজানা কারণে বন্ধ হয়ে আছে পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের স্মরণে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা। তবে কি আর দেখা মিলবে না এই মেলার?
জসীমউদ্দিন ফাউন্ডেশনের সাথে কথা বললে তারা জানায় মেলাটি পুনরায় চালুর সব প্রস্তুতি চলছে এবং সব ঠিকঠাক থাকলে খুব দ্রুতই মেলাটি আগের ন্যায় আবার শুরু হবে। তারা আরো বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত জটিলতায় এ বিষয়ে তারা এগোতে পারে নি। তবে খুব শীঘ্রই মেলাটি পুনরায় চালুর কার্যক্রম শুরু হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে সর্বশেষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরপরের বছরে অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় মেলাটি। জনসাধারণের কাছে বন্ধ হওয়ার কারণ গোপন থাকলেও স্থানীয়দের কাছে গুঞ্জন ছিল মেলার বাজেট সংক্রান্ত ঝামেলায় এটি বন্ধ হয়। তবে এ বিষয়ে জসীমউদ্দিন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মহামারী করোনা হানা দিলে এটি আর পুনঃরায় চালুর চেষ্টা করা হয়নি। তবে উৎসবপ্রেমী মানুষের আশা প্রিয় কবির স্মৃতির স্মরণে চিরচেনা এই মেলাটি ফিরবে আবার নিজের রূপে।