পানির অপচয় রোধে তিন তরুণের উদ্ভাবন
- বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক
চাষের জমি বলুন অথবা ফুলের বাগান। জমিতে সেচ আর বাগানে জমি ভেজাতে গিয়ে পানির অপচয় হয় না, এমন কথা চ্যালেঞ্জ করে বলা যাবে না। জমি ছাপিয়ে পানি বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চাষের মৌসুমে গাঁয়েগঞ্জে হামেশাই চোখে পড়ে। পরিবেশবিদেরা বলছেন, বৃষ্টির ধরন বদলানোয় এমনিতেই ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ারে টান পড়ছে। সেই অবস্থায় পানির এই ধরনের অপচয় ভবিষ্যতে জলসঙ্কট ডেকে আনতে পারে। যার মাসুল গুনতে হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। তা হলে উপায় কী? চাষের বা বাগানের জমি ভেজাতে ঠিক কতটা জল লাগবে, সেটা কি কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব? নাকি সে ভাবে পাম্প চালানো যায়?
তিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াই বাতলাচ্ছেন সেই উপায়। ভারতের লিলুয়ার এমসিকেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটার-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তিন ছাত্রছাত্রী তুহেলি ভট্টাচার্য, রাহুল রায় এবং সুমিত সাহা বানিয়ে ফেলেছেন এক অদ্ভুত যন্ত্র। নাম দিয়েছেন স্মার্টি ইরিগেশন সিস্টেম (Smart Irrigation System)। তাঁদের দাবি, এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব।
কীভাবে কাজ করবে ওই যন্ত্র? ‘ভিজে ভাব বা আর্দ্রতা ধরার উপযোগী সেন্সর চাষের বা বাগানের জমিতে পোঁতা থাকবে। মাটি পর্যাপ্ত ভাবে ভিজলেই সেন্সর সেই বার্তা পৌঁছে দেবে পাম্পের সঙ্গে থাকা মূল সার্কিট বোর্ড বা ‘আর্ডুইনো ডিভাইসে’। সেন্সরের বার্তা বুঝে সেটি পাম্প বন্ধ বা চালু করবে। এই আর্ডুইনো-ই হচ্ছে গোটা ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র,’ বলছেন তুহেলি। এই ব্যবস্থা পরীক্ষাগারে সফল হয়েছে। বিষয়টিকে আরও উন্নত করার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা চলছে। যাতে কার্যক্ষেত্রে আর্ডুইনো ডিভাইস ব্যবহারে কোনও সমস্যা না হয় খেয়াল রাখা হচ্ছে সে দিকেও, ব্যাখ্যা করে বোঝালেন রাহুল এবং সুমিত।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তিন শিক্ষার্থীর এই কাজ কি আদৌ বাস্তবে কাজে লাগবে? গ্রামবাংলার সাধারণ চাষিরা কি এই যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন? কিংবা বাড়ির বাগানে কতটা কার্যকর হবে? এই ধরনের প্রযুক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে, তা মানছেন ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই। একটি সরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার প্রলয় রায় বলছেন, ‘পাম্পসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করার নানা পন্থা রয়েছে। জমিতে আর্দ্রতা ধরার সেন্সর দিয়েও সেই কাজ করা সম্ভব। ফলে যে প্রযুক্তির কথা ওই তিন পড়ুয়া বলছেন, তা একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। কারণ, বয়স এবং অভিজ্ঞতা কম হলেও পড়ুয়ারা পড়ার সময়ে এমন অনেক ভাবনাচিন্তার জোগান দেয় যেগুলি নিয়ে ভবিষ্যতে উন্নত যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব।’
তবে পরীক্ষাগারে তৈরি যন্ত্র যে সব সময়ে একেবারে মাঠেঘাটে কাজে লাগবে, তেমনটা না-ও হতে পারে। বরং পরীক্ষাগারের ভাবনাচিন্তা থেকে কাজের উপযোগী যন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে আরও কিছু গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। যন্ত্র কী ভাবে বাজার-উপযোগী করে তোলা যায়, সেটাও দেখা প্রয়োজন। প্রাথমিক ভাবে ওই তিন পড়ুয়া যন্ত্র নির্মাণে পরীক্ষাগারে যে সব সেন্সর ব্যবহার করেছেন, তার খরচ যথেষ্ট বেশি। তবে তুহেলির দাবি, ধাতব পাত দিয়েও এই কাজ করা সম্ভব। সেটা কী ভাবে করা যায়, তা নিয়েও ভাবছেন ওরা।