উল্কার ভেতর স্বর্ণ খুঁজবেন এলন মাস্ক
- সব্যসাচী দাশ রুদ্র
এলন মাস্ক সায়েন্স ফিকশন শব্দটিকে নিয়ে গেছে এক অন্য মাত্রায়। এরমধ্যেই তিনি তার গাড়ির প্রতিষ্ঠান এবং মঙ্গলে বসতি স্থাপনের জন্য মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। গত বছর তিনি সবাইকে অবাক করে একটি ঘোষণা দেন যা পুরো বিশ্বের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আপনি এখন জিজ্ঞেস করতে পারেন কি ছিল সেই ঘোষণাটি? আসলে মাস্ক পরিকল্পনা করছেন ভবিষ্যতে উল্কার ভেতর থেকে সোনা খনন করার।
মাস্ক সম্প্রতি জানতে পারেন উল্কার ভিতরে থাকা অমূল্য ধাতব পদার্থ সম্পর্কে। তিনি ২০২২ সালের মধ্যে সেই উল্কার খনিতে লোক পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করতে চাচ্ছেন। অভিজ্ঞরা ধারণা করছেন, এই উল্কার খনিতে যত গোল্ড, সিলভার এবং কপার আছে তাতে প্রায় ৭০০ কুইন্টিলিয়ন ডলার লুকিয়ে আছে সেখানে।
যে উল্কাটি নিয়ে কথা হচ্ছে সেটির নাম দেয়া হয়েছে ‘সিক্সটিন সাইকি’। সিক্সটিন সাইকি হলো মঙ্গল ও জুপিটার গ্রহের মধ্যে ঘুরতে থাকা একটি এস্টেরয়েড। এটির ব্যসার্ধ প্রায় ১৪০ মাইল এবং আগেও এটি পর্যবেক্ষণে নেয়া হয়েছিলো।
মাস্ক আরো পরিকল্পনা করেছেন যে একটি বিজ্ঞানী দলকে সিক্সটিন সাইকি উল্কাটিতে ২০২২ এর মধ্যেই পাঠানোর যারা ২০২৬ এ গিয়ে পৌছাবে।
আর এই প্রজেক্ট ছাড়াই এলন মাস্ক বিশ্বের ধনীদের তালিকায় বিল গেটসকে ইতিমধ্যে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছেন। তার বিদ্যুৎচালিত গাড়ির শেয়ার এখন এতটাই বেশি যে তার বর্তমান ধনসম্পত্তি প্রায় ১২৭.৯ বিলিয়ন ডলার। মাস্কের ভাগ্য লেখা আছে তারই প্রতিষ্ঠান টেসলাতে। ব্লুমবার্গের মতে, তার প্রধান সম্পদ হলো তার কোম্পানির স্টক, যেটাতে তার অংশে এখন ২০ শতাংশ। ২০২২ সালের মধ্যে টেসলার স্টক বেড়ে প্রায় ৫২৪% হবে যেটা তার সম্পত্তির সমুদয় অর্থকে ১০০ বিলিয়নেরও বেশি করে ফেলবে।
মাস্ক এই উল্কা থেকে পাওয়া টাকাটা তার বিভিন্ন ব্যবসায় লাগিয়ে তার ব্যবসাও চাঙ্গা করে তুলতে পারবে। উদাহরণ দেই একটা, টেসলার ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তার কাছে কোনসময় টাকাপয়সার অভাব হবে না, টেসলা খুব নামী ব্রান্ড হলেও এটি খুব অল্প গাড়ি বানায়। এই কোম্পানির ভ্যালু এখন ৫০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি, কিন্তু এটি শুধু ৫ লাখেরও কম গাড়ি বানিয়েছে ২০২০ এ। তুলনা দিলে দেখতে হবে টয়োটা কোম্পানি যার ব্রান্ড ভ্যালু বর্তমানে ২০০ বিলিয়নের কম তারা ২০২০ এ প্রায় সাড়ে ৯ মিলিয়নেরও বেশি গাড়ি তৈরি করেছে।
স্পেস-এক্স ও এই টাকার খনির সাহায্যে তাদের মঙ্গলে যাত্রার এবং সেখানে লোকবসতি স্থাপন করানোর কাজটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে করতে পারবে। এছাড়াও মাস্কের নিউরোলিংক কোম্পানিও আরো অনেক রিসার্চার নিয়োগ দিতে পারবে এবং তার স্টারলিংক কোম্পানি আরো দ্রুত মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাতে পারবে।
অধিকাংশ স্পেস মাইনিং শুধু একটা বিষয়ে নির্ভর করেই বাদ হয়ে গেছে যা হলো মধ্যাকর্ষণ। বুঝাতে গেলে বলতে হবে এই মধ্যাকর্ষণের কারণে সৌরজগতের সবচেয়ে ভাল মিনারেল রিসোর্স এখন আমাদের পায়ের নিচে। কিন্তু মধ্যাকর্ষণের আরো একটি সমস্যা আছে যেটা হলো পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি থেকে বের হলেই মাইনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত জিনিস বেশি করে ব্যবহার করতে হয় যা খুবই দামী কিছু জিনিস।
এলন মাস্ক স্পেস এক্সের জন্য তৈরি করেছেন ‘ফ্যালকন হেভি’ যা একটি পেলোডকে মঙ্গলের চারপাশে ঘুরাতে পারবে মাত্র ৫,৩৫৭ ডলারে।
বিদ্যুৎ আরেকটি সমস্যা। ৩৫,০০০ ফুট সৌর প্যানেল দিয়েও আন্তজার্তিক স্পেস স্টেশন মাত্র ১২০ কিলোওয়াট দিতে পারবে। আর এই খননের জন্য সমপরিমাণ পাওয়ার প্লান্ট লাগবে এবং বেশিরভাগ মাইনিং কোম্পানিই একসঙ্গে অনেক কৌশল ব্যবহার করে যার কারণে বৈদুতিক পাওয়ারের দরকার পরবে আরো অনেক বেশি। আর উল্কা খনন করে সেই ম্যাটেরিয়াল পৃথিবীতে আনতে তো এই খরচ আরো অনেক বেড়ে যাবে।
গত বছর জাপানের হায়াবুসা-২ স্যাটেলাইট ৬ বছর ধরে ১৫৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করে শুধু এক গ্রাম ম্যাটেরিয়াল আনতে পেরেছিল পৃথিবীতে রিয়োগু উল্কা থেকে।
তাই সার্বিকদিক বিবেচনায় রেখে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে এই উল্কা মাইনিং প্রজেক্ট একপ্রকার অসফল। তবে এখনই বলা যাচ্ছে না ভবিষ্যৎ নিয়ে। হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মই এই অসাধ্য সাধণ করবে অথবা হয়তো এলন মাস্কই করে ফেলবেন যেমনটা তিনি আগেও করেছিলেন।