ল্যাপটপের ব্যাটারি টিকবে ৪০০ বছর!
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
একটি পুরোনো প্রবাদ আছে, কারো ভাগ্য তখনই খোলে যখন তার প্রস্তুতির সঙ্গে সুযোগের মেল বন্ধন ঘটে। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আরভিনে (ইউসিআই) ঘটনাক্রমে হওয়া একটি অভিনব আবিষ্কারই এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। আবিষ্কারটি করেন ডক্টরেট ডিগ্রির শিক্ষার্থী মায়া লে থাই। গবেষণাগারে অনেকটা খেলাচ্ছলেই এই বিস্ময়কর আবিষ্কার করেন ওই শিক্ষার্থী।
এই আবিষ্কারের ফলে ল্যাপটপে ব্যবহারের জন্য এমন ব্যাটারি বানানো যাবে যেগুলো ৪০০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে! ইউসিআই এর একদল গবেষক ব্যাটারিতে ন্যানোওয়্যারের সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু এতে দেখা যায় ভঙ্গুর ন্যানোওয়্যার একটি ব্যাটারি বেশ কয়েকবার চার্জ দেওয়ার পর ভেঙ্গে পড়বে এবং ফেটে যাবে। কিন্তু একদিন মায়া লে থাই ঝোঁকের বশে এক সেট সোনার ন্যানোওয়্যারের ওপর ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড এবং প্লেক্সিগ্যালস এর মতো একটি ইলেকট্রোলাইট জেল এর আবরন দিয়ে লেপে দেন।
এরপর ওই ন্যানোওয়্যার ব্যাটারিতে লাগিয়ে সে ব্যাটারিতে বারবার চার্জ দিতে থাকেন। ব্যাটারিটি চার্জ দেওয়ার পর তা খালি করে পুনরায় চার্জ দিতে থাকেন তিনি। এভাবে ১ হাজার বারা চার্জ ও পুনঃচার্জ করার পরও ওই ন্যানোওয়্যারগুলো অক্ষত থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়টির রসায়ন বিভাগের প্রধান রেজিন্যাল্ড পেনার বলেন, “এ ঘটনা দেখে আমরা বিস্ময়ে অভিভুত হই”। ওদিকে এর কয়েকদিন পর মায়া লে থাই এসে জানান তিনি ওই ব্যাটারিটি ৩ হাজার বার চার্জ এবং পুনঃচার্জ করেছেন। কিন্তু এরপরও এতে ব্যবহৃত স্বর্ণের ন্যানোওয়্যারগুলোর কিছু্ই হয়নি! এই আবিষ্কার তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লবী পরিবর্তন ঘটিয়ে দিতে পারে।
সাধারণত একটি ল্যাপটপের ব্যাটারি গড়পড়তা ৩০০ থেকে ৫০০ বার চার্জ পুনঃচার্জ পর্যন্ত টিকে থাকে। কিন্তু ইউসিআইয়ে উদ্ভাবিত এই ন্যানোওয়্যার ব্যাটারি তিন মাসে ২ লাখ বার চার্জ ও পুনঃচার্জ করার পরও টিকে ছিল। এই আবিষ্কার ল্যাপটপের ব্যাটারির গড়পড়তা বয়স ৪০০ বছর পর্যন্ত বাড়াবে। এতে হয়তো দেখা যাবে যে, ব্যাটারির জীবন শেষ হওয়ার কয়েকদশক আগেই ল্যাপটপের দফা-রফা হয়ে গেছে। আর তাছাড়া শত বছর টিকে থাকতে সক্ষম এমন ব্যাটারি ব্যবহার করাটাও বেশ চমকপ্রদ একটি বিষয় হবে বটে। রেজিন্যাল্ড পেনার বলেন, “এই আবিষ্কারের বড় পরিসরের চিত্রটি হলো, আমরা যে ধরনের ন্যানোওয়্যার নিয়ে গবেষণা চালিয়েছি সেগুলো স্থির রাখার কোনো একটি অতি সহজ উপায়ও আছে হয়তো। আর এটি যদি সাধারণভাবে সত্য বলেই প্রমাণিত হয় তাহলে এর মাধ্যমে মানব সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় অগ্রগতি সাধিত হবে।”