কেন চাই ‘হেলিকপ্টার মানি’
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
চাকরি সৃষ্টির তহবিল সমৃদ্ধি ও স্থবির মজুরি বৃদ্ধির জন্য নগদ অর্থের প্রয়োজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ‘হেলিকপ্টার মানি’ খ্যাত এ বিষয়টি নিয়ে তাবত্ দুনিয়ার সর্ববৃহত্ অর্থনীতির দেশটিতে চলছে আলোচনা সমালোচনা। যেটিকে অনেক উড়িয়ে দিচ্ছেন স্রেফ অনুত্পাদনশীল বলে। ভবিষ্যত্ নীতিনির্ধারকরা কিছু বাড়তি উপকরণ বেছে নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন, যেগুলোকে কাজে লাগিয়েছে অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইওমিংয়ের জ্যাকসন হোলে সম্প্রতি এমন কথা উচ্চারণ করেছেন খোদ ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের সভাপতি জ্যানেট ইয়েলেন, যা প্রত্যক্ষ করেছেন অসংখ্য লোক। অর্থনীতিকে সহযোগিতা যোগাতে বেশ কিছু আর্থিক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। এর মধ্যে সম্ভাব্যরূপে বহু-বিতর্কিত ‘হেলিকপ্টার মানি’ ধারণাটিও রয়েছে। কিন্তু এই হেলিকপ্টার মানি কী, তা জানার উত্সাহ জাগাটা অস্বাভাবিক নয় । আসলে এটি একটি ভয়ঙ্কর নামযুক্ত মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ ধারণানীতি।
‘হেলিকপ্টার মানি’ পদবাচ্য হচ্ছে অপরিহার্যরূপে একটি আর্থিক উদ্দীপক যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া নতুনভাবে সৃষ্ট অর্থ দ্বারা স্পষ্টভাবে গঠিত এক তহবিল, সেই সঙ্গে জরুরি সরকারি ব্যয়ে প্রত্যক্ষভাবে একটি স্থায়ী নতুন তহবিলের সঞ্চালন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাহায্য নিয়ে কিংবা বিনা সাহায্যে সরকারের উচিত সঙ্গতিসম্পন্ন সম্পদকে চাকরি সৃষ্টিতে ব্যয় করা, তা সে সরাসরি এবং বেসরকারি খাতের প্রণোদনার মাধ্যমে হতে পারে। রাজনৈতিক দুনিয়াব্যাপী অর্থনীতিবিদদের মাঝে, ব্যাপকভাবে গৃহীত ধারণা হচ্ছে এই ‘হেলিকপ্টার মানি’। যা হোক তীব্র অর্থনৈতিক দৈন্যতার এই যুগে আর্থিক ও মুদ্রা কর্তৃপক্ষের সরাসরি সহযোগিতার এই সময়টা একেবারে সঠিকভাবে কতদিন হওয়া প্রয়োজন, তা নির্দিষ্টভাবে বলার ক্ষমতা রাখেন না কোনো অর্থনীতিবিদই।
সাবেক ফেড ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এলান ব্লাইন্ডার হেলিকপ্টার মানির প্রসঙ্গ টেনেছেন এভাবে- নিরানন্দ পরিভাষা হিসেবে আর্থিক সংবাদপত্রে বোমা ফাটায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসতে যুক্তরাজ্যের নেওয়া ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত এবং জাপানের অনেক কম প্রবৃদ্ধি ও মজুরি এবং মূল্যস্ফীতির টেকসই বৃদ্ধিতে ব্যাপক আর্থিক ও রাজস্ব প্রণোদনা সরবরাহ সত্ত্বেও জাপানের আপাত ব্যর্থতায় হেলিকপ্টার মানি বিষয়ক আলোচনা-সমালোচনা অতিসম্প্রতি বিশ্বের নানা দেশে বেশ জোরদার ভাবেই চলছে।
নীতিপ্রণালীটি নিষ্কন্টক, এমনকি প্রেরণাদায়ক। কিন্তু ধাক্কাটা যখন ফেলে দেওয়ার মতো হয় এবং দেশের মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগ ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করে, তখন অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষের জন্য এটি বেছে নেওয়াটা মোটেও অযৌক্তিক নয়- অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই। অধোগতি ঠেকাতে সরকার একা কিংবা যৌথভাবে হেলিকপ্টার মানির সাহায্য নিতে পারে। বাগধারাগত হেলিকপ্টার ড্রপস ও আর্থিক কিংবা রাজস্ব সংশ্লিষ্ট সাধারণ প্রণোদনার পার্থক্যটা হচ্ছে, অতীতে ওই অর্থ নতুন করে বাজেট খরচের তহবিল গঠনে কোনো কিছু গোপন না করেই ছাপা হতো। ফলশ্রুতিতে বাড়ত না সরকারের ঋণ। এখন অনেক দেশই সে কাজটা করে গোপনে।
অদ্যাবধি ‘হেলিকপ্টার মানি’ টার্মটি হচ্ছে ওই ধারণা, যেটি অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী মিল্টন ফ্রিজম্যান ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত তার একটি গবেষণাপত্রে সর্বপ্রথম উল্লেখ করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালে এই ধারণাকে পুনরুজ্জীবিত করেন সাবেক ফেড চেয়ারম্যান বেন বার্নানকে। তখন তিনি ছিলেন বোর্ড অফ গভর্নস-এর সদস্য। বেপরোয়ার ভাবমূর্তি, উদ্ধার, দায়িত্বহীনতা এবং এমনকি সংকীর্ণতা বিষয় নিয়ে নানাবিধ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে তিনি চমক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সর্বোপরি, কেন এবং কোন প্রতষ্ঠান অর্থের এতই কম মূল্য নির্ধারণ করে যে, আকাশ থেকে একেবারে এমনভাবে যেনো মাটিতে পড়ে যায়, যাতে করে মনেই হয় না এর আদৌ কোনো মূল্য নেই, এর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।