দুষিত বায়ু বছরে কাড়ছে ৫৫ লাখ প্রাণ
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : দূষিত বায়ুর কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৫৫ লাখের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই হচ্ছে ভারত ও চীনের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। দূষিত বায়ুর কারণে প্রতি বছর চীনে প্রায় ১৬ লাখ এবং ভারতে ১৩ লাখের কাছাকাছি মানুষ মারা যায়। সংবাদ : বিবিসি।
বিবিসি জানিয়েছে, নতুন এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিস প্রজেক্টের’ আওতায় গবেষণাটি সম্পাদিত হয়। ২০১৩ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব কথা জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নির্গত ক্ষুদ্র উপাদান, কল-কারখানা ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া, কয়লাসহ বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। তবে বায়ু দূষণের জন্য দায়ী মূল উপাদানটি দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
চীনে যেমন বায়ু ধূষণের মূল কারণ কয়লা পোড়ানো; শুধু এ কারণেই দেশটিতে বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়। অন্যদিকে ভারতের বেলায় বায়ু দূষণের মূল কারণ কাঠসহ বিভিন্ন জ্বালানি পোড়ানো। দেশটিতে বাইরের দূষণের চেয়ে গৃহাভ্যন্তরের দূষণই বেশি মৃত্যুর কারণ।
গবেষণা অনুসারে- মানব স্বাস্থ্যের জন্য অপুষ্টি, মুটিয়ে যাওয়া, মাদকামক্তি ও অ্যালকোহল গ্রহণ এবং অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের চেয়েও বায়ু দূষণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। দূষিত বায়ুর শহরে বসবাসের কারণে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্য এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, উন্নত দেশগুলো বিগত কয়েক দশকে বায়ু দূষণ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ বায়ুর ব্যবস্থা করতে কত দ্রুত ও কত বৃহৎ আকারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিস প্রজেক্টের ওই গবেষণায় উচ্চ রক্তচাপ, খাদ্য সংক্রান্ত সমস্যা ও ধূমপানের পর বায়ু দূষণকে মানব স্বাস্থ্যের জন্য চতুর্থ ঝুঁকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মানব স্বাস্থ্যের জন্য অপুষ্টি, মুটিয়ে যাওয়া, মাদকামক্তি ও অ্যালকোহল গ্রহণ এবং অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের চেয়েও বায়ু দূষণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। দূষিত বায়ুর শহরে বসবাসের কারণে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্য এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের গবেষক ড্যান গ্রিনবাম বলেন, খারাপ আবহাওয়ার দিনে বেইজিং বা নয়া দিল্লির মতো শহরে প্রতি কিউবিক মিটার বায়ুতে ‘পিএম ২.৫’ ৩০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি থাকতে পারে। অথচ এটি ২৫ থেকে ৩০ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে থাকা উচিত। চীন ভবিষ্যতে কয়লার ব্যবহার কমানোর নীতি গ্রহণ করলেও বায়ু দূষণজনিত মৃত্যু দেশটিতে রীতিমোত সংগ্রাম করতে হবে। কারণ চীনে বৃদ্ধদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে; আর জনসংখ্যার এ অংশই সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর সংস্পর্স্পে এসেছেন।
গবেষণার ফল বিষয়ে বেইজিয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কিয়াও মা বলেন, এর মানে হলো কয়লা পোড়ানোসহ অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে কার্বন নির্গমন বন্ধে আমাদের আরও শক্তিশালী নীতি গ্রহণ করতে হবে।
গবেষণা অনুসারে- দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির কারণে ভারত ভবিষ্যতে আরও বেশি বায়ু দূষণজনিত সমস্যায় পড়বে। ২০৫০ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধির তুলনায় কার্বন নির্গমন ভারতের প্রাক্কলিত হিসেবের বাইরে চলে যাবে।
এ বিষয়ে মুম্বাইয়ের চন্দ্র ভেঙ্কটরমন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি সতর্ক করে বলেন, কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান নীতিমালার সত্ত্বেও ভারতে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়ছে এবং কল-কারখানার উৎপাদনও বাড়ছে।
পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সরকারগুলোকে দূষণবিরোধী কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল ব্রাউয়ার।