চেকইনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখা
- রাগীব হাসান
চানখাঁরপুল থেকে যাবেন ভুতের গলিতে। কীভাবে যাবেন, বলেন তো? আগেকার দিনে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে পথ খুঁজে নিতে হতো, অথবা ম্যাপের উপরে ঝুঁকে থেকে থেকে বের করতে হতো অবস্থান। কিন্তু আজ? মোবাইল ফোনটা আছে না? সেখানকার ম্যাপ অ্যাপটা খুললেই তো হচ্ছে। চোখের নিমেষে আপনার অবস্থান বলে দিবে, আর কীভাবে যাবেন, সেটাও দেখাবে।
অথবা ধরুন ভাব দেখাবার জন্য অমুক ভগিচগি রেস্টুরেন্টে চেক ইন দিতে চাচ্ছেন ফেইসবুকে, খাবারের সাথে দন্তবিকশিত সেলফি সমেত। কিন্তু কীভাবে ফেইসবুক অ্যাপটা বুঝবে আপনি কোথায় আছেন?
আধুনিক কম্পিউটিং জগতে বিশেষ করে মোবাইল কম্পিউটিং এর জগতে কোনোকিছুর অবস্থান জানাটা খুব জরুরি। আপনার মোবাইল ফোনটা আপনার অবস্থান বুঝতে পারে কীভাবে? এইখানেই হলো বিজ্ঞানের বড় একটি আবিষ্কার GPS তথা Global Positioning System এর অবদান। এই সিস্টেমটি আছে বলেই আপনার ফোন অবস্থানটা বলতে পারছে অনায়াসে।
জিপিএস কাজ করে আসলে স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। ১৯৭০ এর দশকে মার্কিন সেনাবাহিনী তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য এই সিস্টেমটি তৈরী করে। ২৪টি জিপিএস স্যাটেলাইট সারাদিন সারা রাত পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে, ফলে যেকোন সময়ে দুনিয়ার যেকোন জায়গা থেকে একাধিক স্যাটেলাইট দৃশ্যমান। এই প্রত্যেকটি স্যাটেলাইটে দেয়া আছে একটি পারমাণবিক ঘড়ি — যা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সময়ের হিসাব রাখে। সবগুলা স্যাটেলাইটের ঘড়ির সময় এক থাকে। স্যাটেলাইটগুলা থেকে অনবরত তাদের অবস্থান এবং ঘড়ির সময় সংক্রান্ত তথ্য সম্প্রচার করা হয়। এরকম অন্তত চারটি স্যাটেলাইটের সিগনাল জিপিএস রিসিভার যখন পায়, তখন সেই স্যাটেলাইটের অবস্থান ও তাদের ঘড়ির সময় থেকে কিছু জটিল সমীকরণ সমাধান করে রিসিভারের অবস্থান বেশ নিখুঁতভাবেই বের করা সম্ভব হয়। আপনার মোবাইল ফোনের মাঝে অথবা আলাদা ভাবে ব্যবহার করা জিপিএস ট্রাকারের মধ্যে এই পুরো গণনার কাজটা একটি মাইক্রোচিপ করে থাকে।
অনেক সময়ে নানা কারণে স্যাটেলাইটের সিগনাল দূর্বল থাকে বলে অন্যান্য কিছু প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়, যেমন মোবাইল ফোন টাওয়ারের সাহায্য নিয়ে এসিস্টেড জিপিএস প্রযুক্তি আছে। সেটা ব্যবহার করায় স্যাটেলাইটের সিগনাল পেতে পেতে ৪০ সেকেণ্ড অপেক্ষার দরকার হয় না। মোটামুটি অল্প কয়েক সেকেণ্ডেই ফোনের সফটওয়ার অবস্থান বের করে ফেলতে পারে। এরকম আরো কিছু প্রযুক্তির ব্যবহার করে জিপিএস এর নির্ভুলতা বাড়ানো হয়।
শুরুতে জিপিএস প্রযুক্তি কেবল মার্কিন সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের জন্যই বানানো হয়েছিলো। কিন্তু ২০০০ সালের দিকে তা সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তার পরে পরেই আসলে সর্বত্র এর ব্যবহার শুরু হয়।
মার্কিন জিপিএস ছাড়াও অন্যান্য দেশও এর কাছাকাছি প্রযুক্তি ব্যবহার করে — ইউরোপের আছে গ্যালিলিও, রাশিয়ার আছে গ্লোনাস, আর চীন এবং ভারতেরও নিজস্ব ন্যাভিগেশন সিস্টেম আছে।
জিপিএস এর কিছু সমস্যা হলো — ঘরের ভিতরে অনেক সময়ে এটা ভালো কাজ করে না। এছাড়া সম্প্রতি জিপিএস সিগনাল নকল করারও কিছু সিস্টেম বের হয়েছে।
এবার বুঝলেন তো, আপনার ভাবের সেলফি আর চেকইন এর পেছনের খবর? দূর মহাকাশের একাধিক উপগ্রহ আপনার মোবাইল ফোনে সিগনাল পাঠিয়ে তাকে জানিয়েছে আপনার অবস্থান।
বিজ্ঞান কী অসাধারণ, তাই না?