সাইবার অপরাধে চুপ থাকা আর নয়
- আইরিন আঁচল
বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তি বেশ এগিয়ে। শহরের সীমা ছাড়িয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির মোবাইল, ইন্টারনেট গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির নানা সুফল ক্রমেই মানুষের কাছে সহজলভ্য হচ্ছে। এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ করা সহজ হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধও দ্রুত বেড়েছে।
জানাগেছে, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রতি ১২ সেকেন্ডে একটি সোশ্যাল মিডিয়া আইডি খোলা হয়। বিটিআরসির তথ্য মতে, এখন দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার।
কিন্তু বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ সাইবার বুলিংয়ের শিকার। তথ্য বলছে, দেশের ৪৯ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী সাইবার বুলিংয়ের নিয়মিত শিকার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, দেশের তিন-চতুর্থাংশ নারীই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে । তবে এ বিষয়টি অপ্রকাশিতই থেকে যায়। মাত্র ২৮ শতাংশ অনলাইনে নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ করে। বাকিরা ভয়ে থাকে অভিযোগ করলেই তাদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হবে । সাইবার বুলিং ছাড়াও মোবাইল ফোন বা ই-মেইলেও এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।
সাইবার অপরাধে চুপ থাকার নীতিই ক্ষতির অন্যতম কারণ। পরিবারের কথা ভেবে কিংবা সম্মান হারানোর ভয়ে অনেকেই সব ‘চুপচাপ’ সয়ে যায় কিংবা চেপে যায়। অপরাধীরা এর ফলে আরো বেশি সুযোগ নেয়। বিশেষ করে তরূণীরা এই সমস্যার সম্মুখীন বেশি হয়। যার ফলে অনেকেই বেছে নেয় আত্মহননের পথ। একজনের ছবি বা ভিডিও বিকৃত করে অনলাইনে তুলে ধরাও বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে। এটিও এক ধরনের সাইবার অপরাধ।
আজ আমরা এমন এক ছাত্রীর থেকে শুনবো তার জীবনের রং হারানোর গল্প। তবে সে থেমে যায়নি। পরবর্তীতে জীবনকে সাজিয়েছেন নতুন ভাবে।
নাম তানিয়া সুলতানা। বয়স ১৯। পড়াশোনার তাগিদে আছেন ঢাকায়। পরিবার থেকে দূরে। দূরে থাকার সুবাদে বাবা তাকে কিনে দিয়েছেন একটি স্মার্ট ফোন। অবশ্য এ যুগে এসে স্মার্ট ফোন ছাড়া চলা যেন অসম্ভব। জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্মার্ট ফোন খুব জরুরি। আর সেখান থেকেই তার প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ।
অল্প ক’দিন বাদেই তানিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ বন্ধু হয়ে যায়। পরিচয় অপরিচিত অনেকেই যুক্ত হয় তার সঙ্গে। কথাও চলে তাদের মধ্যে। এক পর্যায়ে একটা ছেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। আর সেই বন্ধু শুধু বন্ধুই নয়। যাকে নিয়ে সে রঙিন এক দুনিয়া সাজায় নিজের মধ্যে। ভাবতে থাকে অদূর ভবিষ্যত নিয়েও।
বন্ধুর সঙ্গে তানিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হতে থাকে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তারা একে অন্যকে অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি শেয়ার করেন। করেন ভিডিও শেয়ারও। এভাবেই দিন গড়াচ্ছিল। কিন্তু খুব বেশি সময় লাগলো না তানিয়ার সাইবার অপরাধের শিকার হতে। তার বন্ধু প্রিয়ম তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করলেন। কখনো টাকা কখনো অন্য কিছু। দিন দিন এই মুখ বুঝে এগুলো সহ্য করছিলেন তানিয়া।
তারপর তানিয়া আইনে আশ্রয় নিলেন। প্রতিকার পেতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর আশ্রয় নিলেন। এ আইনের আওতায় থানায় এজাহার দায়ের করলেন। পাশে পেলেন তার পরিবার, আত্নীয়-স্বজন এবং কি বন্ধুদের। শাস্তিও দিতে পারলেই অভিযুক্তকে।
তাই সাইবার অপরাধ দমনে মুখ বুজে আর সহ্য করা নয়। প্রতিবাদ করতে হবে এখন থেকেই। রুখে দাঁড়াতে হবে এই মুহূর্ত থেকেই।