কেন আলোচনার শীর্ষে ব্লকচেইন প্রযুক্তি!
- বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক
এমন একটি পৃথিবীকে কল্পনা করুন যেখানে আপনি ব্যাঙ্ক ছাড়াই কাউকে সরাসরি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টাকা পাঠাতে পারেন এবং এর জন্য আপনাকে অতিরিক্ত কোনো ব্যাংক ফি প্রদান করতে হবে না। অথবা, আপনাকে এমন একটি প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করা হচ্ছে, যেখানে আপনার একটি অনলাইন ওয়ালেট থাকবে অর্থাৎ আপনি অনলাইনেই অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন এবং এটি ব্যাংকের সাথেও সম্পৃক্ত নয়, মানে আপনার নিজের ব্যাংক ও জমাকৃত অর্থের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে। এর এক্সেস বা স্থানান্তর করার জন্য আপনার কারো অনুমতির প্রয়োজন নেই। এছাড়া কোনো তৃতীয় পক্ষের এটি কেড়ে নেবার ভয় নেই এবং সরকারের অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তনেও এর উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ নেই।
মূলত, ব্লকচেইন হলো তথ্য রেকর্ড করার এমন এক প্রযুক্তি, যা পরিবর্তন করা, হ্যাক করা বা প্রতারণা করা প্রায় অসম্ভব। একটি ব্লকচেইন লেনদেনের একটি ডিজিটাল লেজার যা এর কম্পিউটার সিস্টেমের পুরো নেটওয়ার্ক জুড়ে তথ্য সরাবরাহ করে থাকে। চেইনের প্রতিটি ব্লকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন থাকে, এবং প্রতিবার যখনই ব্লকচেইনে একটি নতুন লেনদেন ঘটে, সেই লেনদেনের রেকর্ড প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর লেজারে যুক্ত করা হয়। ডিসেন্ট্রালাইজড বা বিকেন্দ্রীভূত এই ডাটাবেস একাধিক অংশগ্রহণকারীদের দ্বারা পরিচালিত যাকে ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার টেকনোলজি বা dlt নামে পরিচিত।
তাই ব্লকচেইন এমন এক dlt বা প্রযুক্তি যেখানে লেনদেনগুলো ক্রিপ্টোগ্রাফিক স্বাক্ষরসহ রেকর্ড করা হয়। অর্থাৎ যদি একটি চেইনের একটি ব্লক পরিবর্তন করা হয়, মুহূর্তেই জানা যাবে যে ব্লকটিকে টেম্পার করা হয়েছে। যদি হ্যাকাররা কোনো একটি নির্দিষ্ট ব্লককে হ্যাক করতে চায় বা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তবে তাদের ব্লকচেইনের সমস্ত ব্লকগুলোকে পরিবর্তন করতে হবে, এবং চেইনের বিতরণকৃত সমস্ত সংস্করণগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পেতে হবে।
এসব কারণে বর্তমানে BITCOIN এবং ETHEREUM এর ব্যবহার ক্রমাগত এতো বেশি পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যার জন্য চেইনে ব্লকের পরিমাণও বাড়ছে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে লেজারের নিরাপত্তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৯৮২ সালে, ডেভিড চাউম তার গবেষণামূলক প্রবন্ধে প্রথমবারের মতো ব্লকচেইন-সদৃশ প্রোটোকলের প্রস্তাব করেছিলেন। এই ধারণাটি ১৯৯১ সালে স্টুয়ার্ট হ্যাবার এবং ডব্লিউ স্কট স্টরনেটা দ্বারা আরও কাজ করা হয়েছিল, যেখানে তারা টাইমস্ট্যাম্প সহ একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিকভাবে সুরক্ষিত ব্লকের শৃঙ্খলের প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছিল যেগুলোকে টেম্পার বা হ্যাক করা যাবে না।
তবে, আজকের ব্লকচেইন প্রথম সাতোশি নাকামোটো দ্বারা ২০০৮ সালে জনপ্রিয় হয়েছিল। তিনি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ বা “বিশ্বস্ত পক্ষগুলির” প্রয়োজন ছাড়াই প্রতিটি ব্লককে টাইমস্ট্যাম্প করার জন্য হ্যাশক্যাশ-এর মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে ডিজাইনটি উন্নত করেছিলেন।
অতীতে যতবার ডিজিটাল মুদ্রা সৃষ্টির ব্যবহার করেছে, ততবারই ব্যর্থ হযেছেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ আস্থার অভাব। এটা নিশ্চিত হওয়া কঠিন ছির যে, কেউ ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার আবিষ্কার করেছেন, তিনি বা তারা নিজস্বভাবে সেই ডিজিটাল অর্থের অপব্যবহার করবেন না; কিংবা আপনার একাউন্ট থেকে চুরি করে নিয়ে যাবে না।
আস্থাজনিত এই সমস্যা সমাধানের জন্যই ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ডাটবেস ব্যবহার করে বিটকয়েনকে ডিজাইন করা হয়েছে। অন্যান্য সাধারণ ডাটাবেসে যেমন SQL ডাটাবেসে, কেউ একজন সমস্ত এন্ট্রির দায়িত্বে থাকে, তাই চাইলেই ডাটাবেসের তথ্য পরিবর্তন বা চুরি করা সম্ভব এদিক থেকে ব্লকচেইন অত্যন্ত গ্রহনযোগ্য, আলাদা এবং আস্থা করার মতো কারণ, যার ব্লক সে ছাড়া আর কেউ এর ব্লকগুলোর দায়িত্বে থাকে না আর কারো পরিবর্তন করার মতো সিস্টেম রাখা হয়নি। তাই, যেহেতু BITCOIN-কে যেহেতু চাইলেও হ্যাক, জাল বা দ্বিগুন আকারে ব্যবহার করা যাবে না, তাই মানুষের মাঝে এর গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করেছে।