ACD MBA : নেতৃত্বে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
আন্তর্জাতিকমানের ব্যবসায় শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে এশিয়ার প্রভাবশালী সংগঠন এশিয়া কোঅপারেটিভ ডায়ালগের (এসিডি) অধীনে এশিয়ার ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ACD MBA বিষয়ক একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আজ বুধবার (১ মে ২০১৯) কাতারের রাজধানী দোহার রিটজ কার্টন হোটেলে অনুষ্ঠিত এসিডির ১৬তম মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিপত্রে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসির্টির পক্ষে স্বাক্ষর করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান। বৈঠকে তিনি এসিডি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্কে বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিত্ব করেন। চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কাতারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহামেদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি উপস্থিত ছিলেন। এসময় তিনি ১৬তম এসিডি মন্ত্রীপরিষদ বৈঠকের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলাত কাভুসোগুলু, ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জেনারেল বিজয়কুমার সিং, মালয়েশিয়ার পরাষ্ট্র মন্ত্রী দাতো’ সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ, কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আহমেদ, মহাপরিচালক নাহিদ সুমন এবং এসিডিভুক্ত ৩৪টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এসিডির মহাসচিব বানডিৎ লিমসচুন। উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকে এশিয়ার দেশগুলোর শীর্ষনেতারা অংশ নেন এবং বৈশ্বিক শিল্পদূষণ, জনসংখ্যা সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন।।
চুক্তি অনুযায়ী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিকমানের এমবিএ ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। তারা এসিডিভুক্ত ৩৪টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে পারবেন। কোর্সের মেয়াদ হবে ১২ থেকে ২৪ মাস। কোর্সে ‘আন্তর্জাতিকীকরণ’ বিষয়ের ওপর—বিশেষভাবে এশিয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে। এই চুক্তির ফলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক পরিসরে নিজেদের জ্ঞান বিকশিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারবেন, যে নেটওয়ার্কটি পরবর্তীতে তাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করবে।
এসিডি কী, কেন এসিডি-এমবিএ
এসিডি একটি এশিয়া মহাদেশীয় সংগঠন, যে সংগঠনটি পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এশিয়ার দেশগুলোর উন্নয়নে একযোগে কাজ করে। ২০০২ সালের জুনে থাইল্যান্ডের চা-এমে এশিয়ার ১৮টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন এবং সেই বৈঠকের মাধ্যমেই এসিডির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩৪টি দেশ এসিডির সদস্য। এসিডি মূলত ‘সংলাপ’ এবং ‘প্রকল্প’ এই দুই পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। এসিডির সদস্যভুক্ত দেশের প্রতিনিধিত্বকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা প্রতিবছর একটি মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে মিলিত হোন এবং আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে সংলাপ করেন। এছাড়া এসিডির প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সুনির্দিষ্ট ২০টি বিষয় যেগুলো নিয়ে এসিডি কাজ করে থাকে। প্রকল্পের বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে: জ্বালানি, কৃষি, জৈবপ্রযুক্তি, পর্যটন, দারিদ্র, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ই-শিক্ষা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ইত্যাদি।
শিক্ষা প্রকল্প নিয়ে কাজ করে এসিডি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের আওতায় এমবিএ চালু হতে যাচ্ছে। এর ফলে এসিডিভুক্ত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ পাবে এবং এসিডিভুক্ত যেকোনো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবে। শিক্ষার্থীরা একটি বিশ্বমানের এমবিএ ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, জাতীয়তা, ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারবে। এশিয়ার প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খ্যাতিমান অধ্যাপকদের ক্লাস করার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা এবং এর মাধ্যমে সরাসরি নানাকিছু শিখতে পারবে তারা। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক তৈরি হবে যার মাধ্যমে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে। আর এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এসিডির সঙ্গে এই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করলো।
ড্যাফোডিল বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা এসিডি এমবিএতে ভর্তি হতে পারবে। ছাত্র-ছাত্রীরা এসিডি অধীনস্ত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট স্থানান্তর করতে পারবে এবং তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ গ্রহণ করতে পারবে।
শুরুর কথা
২০১৬ সালের ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি থাইল্যান্ডের সিয়াম ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত এসিডির উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান প্রথম ‘এসিডি-এমবিএ’ চালুর প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং ওই একই সময়ে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত ৩য় এসিডি কার্যকরী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে ড. মো. সবুর খান এসিডির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হোন এবং এশিয়া এডুকেশন নেটওয়ার্কের টাস্কফোর্স সদস্য নির্বাচিত হোন।
পরের বছর ২৯ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এসিডির মহাসচিব বানডিৎ লিমসচুনের উপস্থিথিতে ড. মো. সবুর খান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে এশিয়ার ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এসিডি এমবিএ সংক্রান্ত একটি অভিপ্রায় চুক্তি (Agreement of Intent) স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হচ্ছে: মালয়েশিয়ার এশিয়া ই ইউনিভার্সিটি, ভারতের আরআইএমটি ইউনিভার্সিটি, ইন্দোনেশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সুরাবায়া, দক্ষিণ কোরিয়ার ইউহা উইমেন ইউনিভার্সিটি, কম্বোডিয়ার বিল্ড ব্রাইট ইউনিভার্সিটি, রাশিয়ার তোমসক পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি, থাইল্যান্ডের সিয়াম ইউনিভার্সিটি, ভারতের ট্রান্স-ডিসিপ্লিনারি ইউনিভার্সিটি, ফিলিপাইনের সেইন্ট ম্যারি ইউনিভার্সিটি, ইরানের আলামেহ তাবাতাবা ইউনিভার্সিটি এবং ফিলিপাইনের আওয়ার লেডি অব ফাতিমা ইউনিভার্সিটি।
কাতারের প্রভাবশালী দৈনিক দি পেনিনসুলায় প্রকাশিত খবর: https://bit.ly/2UTzk4o