কারিগরি শিক্ষায় বাড়ছে মেয়েদের অংশগ্রহণ
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ভাবখালী গ্রামের ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি মাঈন উদ্দিনের তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে কিশোরী মাহমুদা আক্তার সবার বড়। ছোট বেলা থেকেই তার মেধার ছাপ চোখে পড়ে বাবা মায়ের। গৃহিণী মা রীনা আক্তারের প্রবল ইচ্ছে মেয়েকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। কিন্তু টানাপড়েনে সংসারের চাকাই যেখানে ঘুরতে চায় না সেখানে মেয়ের পেছনে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয়ের চিন্তা ভাবিয়ে তোলে মাহমুদা ও তার বাবা মাকে। তারপরও দমে যায়নি মাহমুদার সঙ্গে তার বাবা মা।
জেএসসি পাস করার পর মাহমুদাকে ভর্তি করা হয় ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে মাহমুদা এখন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দুই বছর মেয়াদী এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সে মেকানিক্যাল বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
মাহমুদা জানায়, এখানের পাঠ শেষে পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা করার পর ভর্তি হবে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এই কেন্দ্রে মাহমুদার মতো চুরখাইয়ের বিবি মরিয়ম, টাঙ্গাইলের আলফি, দীঘারকান্দার ঝর্ণা আক্তার, ভাটিকাশরের মহুয়া আক্তারসহ প্রতি কোর্স ও সেসনে ১৫০ নারী ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, সিভিলসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং কোর্সে দুই বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বিগত ১৯৯৫ সাল থেকে এই কেন্দ্রে ১০টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে। মূলত আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সরকার স্বল্প মেয়াদী এই প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করলেও উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহীদের এই সুযোগ সীমিত বলে জানান কেন্দ্রের ইন্সট্রাক্টর পুলক নন্দী ও রীতা রায়।
ময়মনসিংহ শহরে রয়েছে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও শারীরিক শিক্ষার মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে উল্লেখ করার মতো। স্থানীয় সূত্রের দাবি কেবল সরকারি আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজেই নারী শিক্ষার্থী রয়েছে অন্তত ২০ হাজার। এর বাইরে সরকারি মুমিনুন্নিসা কলেজ, মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মুসলিম গার্লস কলেজ, মহাকালী গার্লস কলেজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়সহ ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়ন করছে আরও অন্তত ২০ হাজার নারী শিক্ষার্থী।
অথচ কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে নার্সিং ইনস্টিটিউট ছাড়া নারীদের উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নেই ময়মনসিংহে একটিও। ফলে প্রতিবছর জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় যত সংখ্যক নারী শিক্ষার্থী বের হচ্ছে তাদের সিকিভাগও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। দিন দিন কারিগরি শিক্ষায় নারী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়লেও অংশগ্রহণ সীমিত।
ময়মনসিংহ পলিটেকনিকের ইন্সট্রাক্টর মিজানুর রহমান টিটুর দাবি, একসময়ে মেয়েরা পলিটেকনিকে পড়তে চাইত না। নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েরা পড়ত। এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মধ্য ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মেধাবী মেয়েরাও পলিটেকনিকে ভর্তি হচ্ছে। চার বছর মেয়াদী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছে অর্ধশত নারী। পলিটেকনিকের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও রয়েছে রেকর্ডসংখ্যক ৪০ থেকে ৫০ নারী শিক্ষার্থী। এদের মধ্য থেকে প্রতিবছর অন্তত ১০-২০ শতাংশ নারী বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হচ্ছে বলে জানান তিনি।