বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং : সঠিক পদ্ধতি ও তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা উচিত
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ঢাকা ট্রিবিউন এবং বাংলা টিবিউন এর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিভার্সিটি তার অবস্থান বুঝে র্যাংকিংয়ে উঠে আসতে চেষ্টা করতে পারে। এভাবেই সারা পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং শুরু হয়েছে এবং এখন তা মানসম্মত অবস্থায় পৌঁছেছে। তবে এসব র্যাংকিং তখনই ভালো কাজ করতে পারে যখন বাস্তব অবস্থা এবং সমসাময়িক তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়।
আজ ২৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭১ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহাবুবুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহাবুব-উল হক মজুমদার, কোষাধ্যক্ষ হামিদুল হক খান, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক, পরিচালক স্টুডেন্ট এফেয়ার্স সৈয়দ মিজানুর রহমান ও ঊর্ধ্বতন সহকারি পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আনোয়ার হাবিব কাজল।
উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, এ র্যাংকিংয়ে এম্পলায়ারদের ধারনাগত উপাত্তগুলো খুব ভালো হয়েছে, কিন্তু একাডেমিক তথ্য যারা দিয়েছেন তারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নিরপেক্ষ তথ্য কি দিতে পারবে? আমরা একাডেমিক বিষয়ে বাস্তবসম্মত এবং যুগোপযোগী র্যাংকিং সমর্থন করি এবং অনুরোধ করি সমসাময়িক ও নিরপেক্ষ তথ্য দিয়ে এটি তৈরি করা হোক।
সঠিক পদ্ধতি ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে র্যাংকিং করা হলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তালিকায় আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে আসবে বলে দাবী করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহাবুবুল ইসলাম।
সম্প্রতি, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন-ঢাকা ট্রিবিউনের যৌথ উদ্যোগে একটি র্যাংকিং নির্ণয় বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ‘ওআরজি কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড’ পরিচালিত গবেষণায় পারসেপচুয়াল র্যাংকিংয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অবস্থান দশম স্থানে (মোট স্কোর ৬১.৮৮) এবং ফ্যাকচুয়াল র্যাংকিংয়ে বিশতম স্থানে (মোট স্কোর ৫১.০৬) দেখানো হয়েছে। আর দুটির সমন্বয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অবস্থান দশমস্থানে দেখানো হয়েছে। যা বাস্তবতা বিবর্জিত। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মোট স্কোর ৫৬.৪৭। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, বাংলাদেশে গুণগত ও মানসম্মত আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ ধরনের গবেষণা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তা হতে হবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানের যার অনেক কিছুই এ গবেষণায় আসেনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী ফ্যাকচুয়াল ডাটাটি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে নেয়া ২০১৪ সালের তথ্য। বাস্তবে তা ২০১৩ সালের তথ্য। আর পারসেপচুয়াল সাম্প্রতিক কালের (২০১৭)। যদি ফ্যাকচুয়াল ডাটাটিও সাম্প্রতিক সময়ের হতো তাহলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পয়েন্ট আরো অনেক বেড়ে যেত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম র্যাংকিং তালিকায় প্রথম দিকে উঠে আসত। যা হতো বাস্তব সম্মত।
গবেষণায় ফ্যাকচুয়াল স্কোর করা হয়েছে কয়েকটি ক্যাটাগরির উপর। যেমন- মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা, লাইব্রেরীতে বইয়ের সংখ্যা, গবেষণা ব্যয়, পিএইচডি ডিগ্রিধারীর সংখ্যা, ক্যাম্পাসের আয়তন, শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত, পূর্নকালীন শিক্ষকের হার ও গবেষণাপত্রের সংখ্যা।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের আয়তন প্রায় ১০ লক্ষ ২৬০০০বর্গফুট অথচ ৬.৬৫,১৭৫ বর্গফুট নিয়ে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্বতন্ত্র পাঁচ তলা ভবনের পুরোটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ভার্চুয়াল জগতে অর্থ্যাৎ অনলাইনে ই-বুক বইয়ের সংখ্যা ৬০,৬০০। বিশ্বের নামী-দামী প্রকাশনা সংস্থাগুলোর সাথে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ফ্রি এক্সেস সুবিধা দেয়া আছে। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অনলাইনে বেশীরভাগ বই পড়তে পারছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যত বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে তার অর্ধ্বেক ই রয়েছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তা প্রায় ৪০০ এর বেশী। যা বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
আর পারসেপচুয়াল স্কোরের ক্ষেত্রে শিক্ষার পরিবেশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষকদের মান, চাকরি ক্ষেত্রে পাস করা শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষতা, নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা, যোগাযোগ দক্ষতা ইত্যাদি দেখানো হয়েছে।কাদের কাছ থেকে কিসের ভিত্তিতে এসব জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে তার ও কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা নেই। উন্নত বিশ্বে র্যাংকিংয়ে যে বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দেয়া হয় তার অনেক কিছুই এ গবেষণায় আসেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, কে র্যাংকিংয়ে প্রথম বা দ্বিতীয় হয়েছে তা বিবেচ্য নয় । প্রকৃত তথ্য এখানে প্রতিফলিত হয়নি এটাই বড় কথা এবং এ র্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে এবং সামগ্রীকভাবে উচ্চশিক্ষাখাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে সত্যিকার অর্থে গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবমূল্যায়িত হয়েছে।
উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে যুগোপযোগী দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে ‘একজন শিক্ষার্থী -একটি ল্যাপটপ’ কর্মসূচী চালু করেছে। দেশে বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েটদের কর্মষংস্থানে উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচী চালুর পাশাপাশি দেশে প্রথম ও একমাত্র ‘উদ্যোক্তা বিভাগ’চালু করেছে। বাংলদেশে একমাত্র বিশেষায়িত কোর্স ‘মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি’ও ‘রিয়েল স্টেট’বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করেছে। আমরা শুধু চাকরি খোঁজার জন্য গ্র্যাজুয়েট তৈরী করছি না বরং আমাদের শিক্ষার্থীদের আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছি যারা হাজার শিক্ষিত বেকার তরুণকে চাকরির সুযোগ করে দিচ্ছে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিই দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ভাবনীর মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্র্থীর মাঝে নীতি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের মত বিষয় গুলিকে জাগ্রত করতে ‘আর্ট অব লিভিং’এর মত কোর্স চালু করেছে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং আনুষাঙ্গিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে এম্পলয়বিলিাট ৩৬০ ডিগ্রী কোর্স, ভেন্ডর সার্টিফিকেশন কোর্সসহ নানাবিধ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিদেশী বৃত্তির সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর সার্বিক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে একজন শিক্ষককে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি -একাডেমিয়া লিংকেজ সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় শুধু রুমের ভিতরের সুযোগ সুবিধা দিয়ে প্রকৃত শিক্ষা হয় না, ‘স্কয়ার ফুট’না মেপে ‘একর’এ হিসাব আসা উচিত যাতে খেলার মাঠ থেকে শুরু করে সুইমিং পুল, জিমসহ সকল কিছু আসে।
যে পৃথিবীতে সকালে কেনা মোবাইল ডিভাইস বিকালে পুরনো হয়ে যায় সেখানে ৪ বছর আগের তথ্য দিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা ঠিক নয়, সে বিবেচনায় এটাকে ইতিহাস রচনা বলা যায় মাত্র, কেননা ৪ বছরে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে অনেক উত্থান পতন হয়ে থাকে।