ফারাজ সাহসিকতা পুরস্কার পেলেন আবু তালহা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
‘ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার ২০১৭’ পেয়েছেন ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী খন্দকার আবু তালহা। শনিবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে সাহসী খন্দকার আবু তালহার মা সেলিনা চৌধুরী, বাবা আবু রিয়াজ মো. নুরুদ্দিন খন্দকার ও দুই বোন তায়েবা মাহমুদা ও রোকেয়া মাহমুদার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ডলার, স্বীকৃতি সনদ ও ফারাজ হোসেন স্মৃতি স্মারক। ১০ হাজার ডলারের চেক তালহার দুই বোনের হাতে তুলে দেন পুরস্কারের জন্য গঠিত জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ। বাবার হাতে স্বীকৃতি সনদ তুলে দেন পেপসিকো ইন্ডিয়া রিজিওনের চেয়ারম্যান ও সিইও শিব কুমার। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিক্যাট, ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ও ফারাজের মা সিমিন হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফারাজের বড় ভাই যারেফ হোসেন।
আবু তালহা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি প্রথম চার সেমিস্টার কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্নও করেছিলেন। গত ৮ অক্টোবর সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে টিকাটুলির বাসা থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন আবু তালহা। বাসা থেকে বের হওয়ার পর দেড় শ গজ দূরে এক প্রতিবেশী ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন দেখে তাঁকে রক্ষা করতে ছুটে যান। এক ছিনতাইকারীকে ধরেও ফেলেন তিনি। তাকে ছাড়িয়ে নিতে অপর ছিনতাইকারী ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তালহাকে। ওই সময় অনেকেই যখন ছিনতাইয়ের ঘটনা দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যান, সেখানে ব্যতিক্রম ছিলেন তালহা। প্রতিবেশীকে রক্ষা করতে পারলেও নিজে বাঁচতে পারেননি। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আহত তালহা।
অনুষ্ঠানে তালহার বাবা আবু রিয়াজ বলেন, ছিনতাইকারীদের হাত থেকে এক প্রতিবেশীকে বাঁচাতে গিয়ে ছেলে তালহার প্রাণ দেওয়ার ঘটনায় তাঁর মনে হয়েছে, প্রতিবাদটা এককভাবে করলে সমাজে এর প্রভাব হয়তো পড়ে; কিন্তু সবাই এগিয়ে না এলে সেটা ধরে রাখা যায় না। ছেলেকে যখন ছিনতাইকারীরা কোপাচ্ছিল, তখন অনেকেই দেখেছেন। তাঁরা যদি একটু চিৎকার করতেন, তাহলে হয়তো ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যেত। ছেলেটা বেঁচে যেত।
প্রতি বছর এই পুরস্কারে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে পেপসিকো গ্লোবাল। টানা ২০ বছর এ সহায়তা দেবে তারা। এ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের একটি তালিকা করেছিল আট সদস্যের জুরি বোর্ড। সেখান থেকে বাছাই করে নির্বাচিত করা হয় খন্দকার আবু তালহাকে। জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা মনোনীত অনেকের মধ্য থেকে বাছাই করে প্রথম ২০ জনকে নির্বাচিত করি। এরপর সেখান থেকে বেছে নেওয়া হয় চারজন। তাদের মধ্যে খন্দকার আবু তালহা বিজয়ী হয়েছেন। ফারাজের মতো এই ছেলেটাও নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে অন্যের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল। এমন উদাহরণ বর্তমান সমাজে খুব জরুরি।’
অন্য সদস্যরা হলেন–অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নিহাদ কবির, এইচএসবিসি ব্যাংকের উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকতা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়ের এ দেশীয় প্রধান মাহাবুব উর রহমান, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয়, পেপসিকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মনীষ মুলে, ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক সাবাহাত জাহান।
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারাজ আইয়াজ হোসেন। জঙ্গিরা তাকে ছেড়ে দিতে চাইলেও দুই বন্ধুকে ছেড়ে আসেননি তিনি। ফলে দুই বিদেশি বন্ধুর সঙ্গে তাকেও জীবন দিতে হয় ওইদিনের হামলায়।
ফারাজের এ সাহসিকতার জন্য গত বছর ‘ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার’ চালুর সিদ্ধান্ত নেয় পেপসিকো গ্লোবাল। প্রথমবার এটি পেয়েছিলেন মাদারীপুর কলেজের কর্মচারী মিরাজ সরদার। তিনি ওই কলেজের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলাকারী জঙ্গিকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন।