কেন পড়তে যাবেন অস্ট্রেলিয়াতে?

কেন পড়তে যাবেন অস্ট্রেলিয়াতে?

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

স্কুল কলেজের পাঠ চুকিয়ে ফেলে অনেকেই বিদেশে পড়তে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।  সেই বিদেশের তালিকায় একটি  পরিচিত নাম হলো অস্ট্রেলিয়া। ওয়াই ফাই কিংবা গুগল ম্যাপ থেকে শুরু করে ব্ল্যাক বক্স ফ্লাইট রেকর্ডার, ইলেকট্রিক পেসমেকার, রেফ্রিজারেশনের মতো দৈনন্দিন জীবনের অনিবার্য সব বিষয়ের সূচনা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার হাত ধরে।

ক্যাঙ্গারুর এই দেশে নোবেল বিজয়ী স্কলার আছেন ১৫ জন। এদের মধ্যে ৮ জন মেডিসিনে, পদার্থ বিদ্যায় ২ জন, সাহিত্যে ২ জন, রসায়নবিদ্যায় ১ জন, অর্থনীতিতে ১জন আর শান্তিতে ১ জন পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। বলা যায়, মানব সভ্যতার ধারাবাহিক বিকাশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই তাঁদের অনিবার্য অবদান রয়েছে। 

জীবনযাত্রার মান কিংবা পড়ালেখার মান- যাই বলা হোক না কেন বিশ্বের সেরা দশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া  অবশ্যই জায়গা পাবে।

বিদেশে পড়তে যাবার প্ল্যান থাকলে তুমিও কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে তোমার তালিকায় স্থান দিতে পারো।

সেরাদের সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা পৃথিবীর সেরা শিক্ষা ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। QS ( Quacquarelli Symonds) হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম হায়ার এডুকেশন মার্কেটিং কোম্পানি। তাঁদের তৈরি করা র‍্যাংকিংয়ের সেরা ৫০ টি ইউনিভার্সিটির মধ্যে রয়েছে-

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন

দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস

দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ড

এবং দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি।

সেরা ৫০টির মধ্যে ৫ টিই হলো অস্ট্রেলিয়ার। সবচেয়ে চমকপ্রদক বিষয় হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেডিং সিস্টেম হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের। পরীক্ষায় “D” পেলে তোমার মন খারাপ হবে এইটাই খুব স্বাভাবিক। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীরা “D” পেলেই মহাখুশি। কারণটা নিচের ছবিতেই দেখে নাও।

“HD” অর্জন করা অস্ট্রেলিয়ায় বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই  “D” পেলেই শিক্ষার্থীদের মনে উৎসবের আমেজ চলে আসে! 

আন্তর্জাতিক বা বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যার দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার র‍্যাংকিং হচ্ছে ৩ নম্বর আর গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি সিস্টেম র‍্যাঙ্কিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান হচ্ছে ৮ নম্বর। শিক্ষার্থীদের বসবাসের জন্য মেলবোর্ন সেরা পাঁচের তালিকায় আছে অনেকদিন ধরেই।

এর সব কিছুর পেছনে আছে অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণকারী আর মনিটরিং এজেন্সি যার নাম হলো The Tertiary Education Quality and Standards Agency (TEQSA)। এর মূল কাজ হচ্ছে ইউনিভার্সিটিগুলোর শিক্ষার মান তদারকি করা আর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া। বিদেশি শিক্ষার্থীদের সব রকমের সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে এজেন্সিটি সমানভাবে সচেতন। অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা যে এতটা “আপ টু ডেট” তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই এজেন্সি।

এমন শিক্ষাব্যবস্থার বিশ্বসেরা দশে থাকা শতভাগ যৌক্তিক।

জীবনযাত্রার মান একদম ফার্স্ট ক্লাস

জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে বিশ্বে এক নম্বর দেশ হচ্ছে নরওয়ে। আর তার পরেই হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্ন, সিডনি, ক্যানবেরা, ব্রিসবেন- এই ছবির মতো সুন্দর শহরগুলো শিক্ষার্থীদের বসবাসের জন্য আদর্শ জায়গা হিসেবে সেরা ৩০ শহরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান, তুলনামুলকভাবে সাশ্রয়ী ব্যয়, পর্যাপ্ত পরিমানে কর্মসংস্থান আর শিক্ষার্থীদের সুবিধা অসুবিধার ব্যাপারগুলো এই তালিকায় বিবেচিত হয়েছে। 

অস্ট্রেলিয়ার গভর্নমেন্ট বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যে সকল ইনসেন্টিভ দিচ্ছে সেগুলো আমার কাছে লোভনীয় বলেই মনে হয়। বিশ্বাস না হলে তুমিই দেখে নাও-

বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বমোট ২০০ মিলিয়ন ডলারের স্কলারশিপ।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ারের জন্য আছে জব ভিসা।

প্রচুর পরিমানে রিসার্চ ফ্যাসিলিটিস আর

গ্র্যাজুয়েশনের পরে অস্ট্রেলিয়াতে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হিসেবে থাকার সুযোগ!

নতুন ভাষা শেখার চ্যালেঞ্জ থেকে রেহাই

অস্ট্রেলিয়ার অফিশিয়াল ভাষা হচ্ছে ইংরেজি। কাজেই নতুন করে কোনো ভাষা শেখার চ্যালঞ্জ এখানে নেই। বরং যেটুকু ইংরেজি তুমি জানো, সেইটুকুকে আরও ঝালাই করে নেয়ার সুযোগ থাকছে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি ইঞ্চিতে!

মাল্টিকালচারাল অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ায় নেটিভ ভাষা আছে কম করে হলেও অন্তত ২৬০ রকমের। আর অবাক বিষয় হচ্ছে প্রায় ৪৭ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ানদের বাবা-মায়ের যে কোনো একজন অথবা উভয়েই অস্ত্রেলিয়ান নন। অস্ট্রেলিয়ার কালচারাল ডাইভারসিটি এই তথ্য থেকেই আন্দাজ করা যায়!

অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দাদের (যেমন তোমার বস) চাইলেই তুমি নাম ধরে ডাকতে পারো। এতে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। তোমার নাম যদি তাঁদের জানা না থাকে তাহলে তোমাকে সম্বোধন করা হবে “mate” বলে। অস্ত্রেলিয়ান কালচারের এমন সূক্ষ্ম সব সাবলীলতা এর গ্রহণযোগ্যতাকে কয়েক গুনে বাড়িয়ে দেয়। আসলে বন্ধুবৎসল অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষই ইমিগ্রেন্ট। তাই অস্ট্রেলিয়ার কালচারকে বলা যেতে পারে মাল্টিকালচার। ইউরোপের গ্রেট ব্রিটেন, জারমানি,ইতালি, ক্রোয়েশিয়া থেকে শুরু করে এশিয়ার চীন, ইন্ডিয়া কিংবা ফিলিপাইন সহ আরও অনেক দেশের মানুষকে তুমি অস্ট্রেলিয়ার পথে প্রান্তরে খুঁজে পাবে। এছাড়াও আছে অস্ট্রেলিয়ান নেটিভ এবরিজিনালস। তাঁদের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য তোমাকে অস্ট্রেলিয়ার বিবর্তন সম্পর্কে ধারনা দিবে।

শুনতে অদ্ভুত শুনালেও বলছি- অস্ট্রেলিয়ায় কুমির,ক্যাঙ্গারু আর ইমু পাখির মাংস খাওয়ার সুযোগ মিলবে। গা গুলিয়ে আসলেও পুষ্টিবিদদের মতে এই মাংসে  ফ্যাট অনেক কম আর পুষ্টিও নাকি অনেক বেশি!   

সহজেই মিলবে স্টুডেন্ট ভিসা

“Overseas Student Program” এর আওতায় অস্ট্রেলিয়াতে ঝামেলা ছাড়াই মিলবে স্টুডেন্ট ভিসা। কিন্তু স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য ঠিকঠাকমতো কিছু শর্ত পালন করতে হবে। যেমনঃ অস্ট্রেলিয়ার কোনো ইউনিভার্সিটিতে যোগদানের কনফার্মেশন, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, ইংরেজিতে দক্ষতার সার্টিফিকেট আর হেলথ কিংবা অন্যান্য ইন্সুরেন্স।

ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য অনেক অভিজ্ঞ ব্যাক্তি রয়েছেন। তাঁদের সাহায্য নিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে খুব সহজেই তুমি অস্ট্রেলিয়াতে স্টুডেন্ট ভিসা পেয়ে যেতে পারো। 

পার্ট টাইম জবের সুযোগ

অস্ট্রেলিয়ান স্টুডেন্ট ভিসা পেয়ে গেলে প্রত্যেক সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার ওয়ার্ক পারমিট পাবে তুমি। আর স্টুডেন্ট ভিসা থাকলে সেমিস্টার ব্রেকে তুমি ফুল টাইম কাজ করতে পারবে। নিচের লিঙ্কটিতে গেলে তুমি অস্ট্রেলিয়ার জব থেকে শুরু করে পার্ট টাইম জবগুলো সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবে।

লিঙ্কঃ https://www.seek.com.au

পার্ট টাইম জব হিসেবে তোমার পড়াশোনার বিষয় সম্পর্কিত কোনো এজেন্সি অথবা কোম্পানিতে তোমার কাজ করবার সুযোগ মিলতে পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি এমন অভিজ্ঞতা তোমাকে ক্যারিয়ারের দৌড়ে এগিয়ে রাখবে অনেক দূর। 

জীবনে সুখে থাকার ফর্মুলা!

পড়াশোনার পর্ব শেষ হয়ে যাবার পরেও যদি তুমি অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করতে চাও তাহলে তোমাকে টেম্পোরারি গ্র্যাজুয়েট ভিসার জন্য এপ্লাই করতে হবে। এই ভিসার মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েশনের পরে অস্ট্রেলিয়াতে তুমি অতিরিক্ত ৬ মাস কাজ করতে পারবে অনায়াসে। অন্যান্য দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়া এক্ষেত্রে বেশ ধৈর্যশীল!

প্রাকৃতিক বৈচিত্রের বিশালতা

সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম দ্যা গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ, পৃথিবীর বৃহত্তম বালুদ্বীপ ফ্রেজার আইল্যান্ড,  কাকাডু ন্যাশনাল পার্ক, প্রায় ১০,০০০এর মতো বিচ, অপেরা হাউজ, সিডনি হারবোর আর গরডন  রিভারের মতো প্রকৃতির সব অভূতপূর্ব সৃষ্টিকে তুমি অস্ট্রেলিয়াতে খুঁজে পাবে। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ পূর্বের পাহাড়গুলোতে চাইলে তুমি স্কিইং করতে পারো কিংবা এডভেঞ্চারের জন্য পারি জমাতে পারো জঙ্গলে। তোমার যদি সার্ফিং ভালো লেগে থাকে তাহলে অস্ট্রেলিয়া তোমার জন্য একদম পারফেক্ট। অস্ট্রেলিয়াতে সার্ফিং অনেক জনপ্রিয় একটি বিনোদনের মাধ্যম। প্রকৃতির এমন সব নয়নাভিরাম উপাদানের মাঝে হারিয়ে যেতে চাইলে পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়া একটি সুবর্ণ সুযোগ হতে পারে। 

অস্ট্রেলিয়ার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে আরও ধারণা পেতে চাইলে এই লিঙ্কে চলে যাও।

লিঙ্কঃhttps://edition.cnn.com/travel/article/australia-natural-wonders/index.html

বৈশ্বিক স্বীকৃতি

অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হচ্ছে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত প্রযুক্তির সাথে এর মানিয়ে নেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা। আর এই কারণের অস্ট্রেলিয়ান ডিগ্রী দুনিয়া জুড়ে অনেক বেশি সমাদৃত। এর ফলে গ্র্যাজুয়েশনের পড়ে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে খুব বেশি একটা ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয় না।

প্রচুর রিসার্চের সুযোগ

অস্ট্রেলিয়ান ইউনিভার্সিটিগুলো হিউম্যানিটিস, আর্টস কিংবা সায়েন্স আর কমার্সের ক্ষেত্রগুলোতে প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে প্রচুর পরিমানে রিসার্চ। এই রিসার্চের মাধ্যমেই গোটা বিশ্ব পেনিসিলিনের ব্যবহার সম্পর্কে স্পস্ট ধারণা পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী জন সুলিভানের রিসার্চের মাধ্যমেই আমরা আজ ওয়াইফাইয়ের মতো বৈজ্ঞানিক ব্যাপারগুলোকে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে পারছি। রিসার্চের প্রতি তোমার আগ্রহ থাকলে অস্ট্রেলিয়া তোমাকে মোটেও নিরাশ করবে না বরং তোমার একাডেমিক পারফর্মেন্স তাঁদের কাছে নির্ভরযোগ্য মনে হলে তোমাকেও দেয়া হবে রিসার্চের সুযোগ। 

বলা তো যায় না, অস্ট্রেলিয়ার বদৌলতে জন সুলিভানের মতো তুমিও আবিস্কারক হয়ে উঠতেই পারো! 

অস্ট্রেলিয়াতে মেডিসিন, এগ্রিকালচার, অ্যারোনটিক্স, ম্যাথমেটিক্স, ইঞ্জিনিয়ারিং সহ  প্রায় সব ধরনের বিষয়েই তুমি পড়াশোনা করতে পারবে। এই ব্যাপারটিতে অস্ট্রেলিয়া অন্যান্য দেশ থেকে বেশ এগিয়ে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ১,১০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  রয়েছে  ২২০০০ এর মতো কোর্স।  অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ২৫ লাখ গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন সেক্টরে তাঁদের অবদান রাখছেন। আর প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন অস্ট্রেলিয়ার যত সব গবেষণালব্ধ আবিস্কারের উপর নির্ভর করে।

তথ্যসূত্রঃ https://www.studyinaustralia.gov.au

Sharing is caring!

Leave a Comment