ফ্রান্সে আছে উচ্চশিক্ষার সুযোগ
- রবিউল কমল
উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স অন্যতম। ফ্রান্সে জীবনযাত্রার মান যেমনি উন্নত ও আধুনিক তেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মানসম্মত পড়ালেখার জন্য ফ্রান্স শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের অন্যতম কারণ। ফ্রান্সে পড়ালেখার প্রধান ভাষা হলো ফ্রেঞ্চ ভাষা। তবে ইংরেজিতেও পড়ালেখা করা যায়। এজন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই ইংরেজি জানা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আইইএলটিএস বা টোফেল করা থাকলেও চলবে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের জন্য ৫.০- ৫.৫ আইইএলটিএস এবং ৫৫০ টোফেল স্কোর এবং পোস্টগ্র্যাজুয়েটের জন্য সাধারণত ৬.০ আইইএলটিএস এবং ৬০০ টোফেল স্কোর দরকার হয়।
ভর্তির সেশন
ফ্রান্সে বছরে তিন সেমিস্টারে পড়ালেখা করানো হয়। ১. সেমিস্টার এক- সেপ্টেম্বর/অক্টোবর, ২. সেমিস্টার দুই জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি এবং ৩. সেমিস্টার তিন- মে/জুন।
কোর্স প্রোগ্রাম
১. ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম, ২. এসোসিয়েট ডিগ্রি, ৩. ব্যাচেলর ডিগ্রি, ৪. গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি, ৫. মাস্টার ডিগ্রি এবং ৬. ডক্টর ডিগ্রি।
ভর্তির বিষয়
ফ্রেঞ্চ ল্যাংগুয়েজ এন্ড লিটারেচার, হিস্ট্রি, ইংলিশ, ফিলোসফি, সোশাল সায়েন্স, পলিটিক্যাল সায়েন্স, সোসিওলজি, ল, ইকোনোমিক্স, চাইল্ড এন্ড ফেমিলি স্টাডিস, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন, বিজনেস অ্যাডমিনেসট্রেশন, ম্যানেজমেন্ট, একাউনটেন্সি, ম্যাথমেটিক্স, ফিজিক্স, জিওফিজিক্স, এপ্লাইড ফিজিক্স, এস্ট্রোনমি, কেমিস্ট্রি, এপ্লাইড কেমিস্ট্রি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োলজি, ই-বিজনেস, কনভেনশন ইন্ডাস্ট্রি, ফুড এন্ড নিউট্রিশন, হিউম্যান ইকোলজি, ফুড সার্ভিস মেনেজমেন্ট, ট্যুরিজম মেনেজমেন্ট, হোটেল মেনেজমেন্ট, কলিনারি সায়েন্স এন্ড আর্টস, জিওগ্রাফি, ইনফরমেশন ডিসপ্লে, মেডিক্যাল সায়েন্স, ফার্মাসিউটিকাল সায়েন্স, ইলেকট্রনিক মেটেরিয়াল্স ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ক্লোথিং এন্ড টেক্সটাইল, সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, ওরিয়েন্টাল ফার্মাসিউটিকাল সায়েন্স, ওরিয়েন্টাল মেডিসিন, ডেন্ট্রিস্টি, স্কুল অব নার্সিং সায়েন্স, হাউজিং এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন, ডিজাইন ক্রাফট, থিয়েটার এন্ড ফ্লিম, ক্রিয়েটিভ রাইটিং, ইনস্ট্রুমেন্টাল মিউজিক, কম্পোজিশন, ভয়েজ, ফাইন আর্টস, কোরিয়ান পেইন্টিং, ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং, স্কাল্পচার, ডেন্স, মডার্ন ডেন্সিং, বেলেট প্রভৃতি বিষয়সমূহ পড়া যায়।
টিউশন ফি
অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় ফ্রান্সে টিউশন ফি অনেক কম। সাধারণত: টিউশন ফি নির্ভর করে কোর্স এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে টিউশন ফি বছরে ৮০০-২৫০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।
ভর্তির জন্য আবেদন
ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীকে সেশন শুরুর কমপক্ষে ১০-১২ সপ্তাহ পূর্বে আবেদন করতে হয়। আবেদন করার ১০-১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার চলে আসে। অফার লেটার আসার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল মার্কশীট এবং সার্টিফিকেট, স্পন্সরের বৃত্তান্ত (ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং আয়ের উৎস), পাসপোর্ট, ছবি, বার্থ সার্টিফিকেট, আইইএলটিএস বা ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সির সার্টিফিকেট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি কাগজপত্রসহ ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।
স্পন্সর
ভিসার জন্য শিক্ষার্থীর প্রথম রক্তের সম্পর্কের অভিভাবক স্পন্সর হলে ভিসা পাওয়া অনেকটা সহজ হয়। তবে শিক্ষার্থীর অন্য যেকোন অভিভাবক স্পন্সর করতে পারবে।
পার্টটাইম জব ফুলটাইম কোর্সের শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। তবে ছুটি ও অবসরকালীন সময় ফুলটাইম কাজ করা যায়। মাসে প্রায় ৮০০-১০০০ ইউরো আয় করা যায়।
থাকা-খাওয়ার খরচ
বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে হোস্টেল রয়েছে। তবে কেউ ইচ্ছা করলে ভাড়া বাড়িতে বা পেয়িংগেস্ট হিসাবেও থাকতে পারবে। থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য ব্যয়সহ একজন শিক্ষার্থীর মাসে ৪০০-৬০০ ইউরোর বেশি লাগে না। মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স কভারের জন্য মাসে ৪২ ইউরো দিতে হয়।
ভিসা সংক্রান্ত তথ্য: ভিসা ফি ৯৯ ইউরো। ভিসার জন্য দূতাবাসের নিয়ম অনুযায়ী সব কাগজপত্র জমা দিতে হয়। ফ্রান্স দূতাবাস: বাড়ি- ১৮, রোড- ১০৮, গুলশান-২, ঢাকা- ১২১২। ফোন- ৮৮১৩৮১১-১৪, ফ্যাক্স- ৮৮৩৬১২।
বিশেষ তথ্য
১. সরকার ভর্তুকি দেয়, তাই ফ্রান্সে টিউশন ফি খুব কম। ২. যদিও বেশির ভাগ পাঠ্যক্রম ইংরেজিতে, তা সত্ত্বেও ফরাসি ভাষা জানা জরুরি যা বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা। ৩. জিম্যাট বা জিআরই পরীক্ষায় বসতে হয় না, শিক্ষার্থীদের মেধা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভর্তি করা হয়। ৪. ফ্রান্সের শিক্ষাপদ্ধতি অনুযায়ী যেকোন মাস্টার্স প্রোগ্রামের সাথে ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক। ৫. বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য ফরাসি সরকারের অনেক স্কলারশিপ রয়েছে।