সব দুয়ার খোলা পদার্থবিজ্ঞানে
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
আজকের দুনিয়ায় মানুষ পদার্থবিজ্ঞানকে তাদের কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারে এমন সব সফলতা পাচ্ছে যা কল্পনার বাইরে। একজন বিজ্ঞানী শুধু নয়, আবহাওয়াবিদ থেকে একজন ভিডিও গেমস ও নক্সাবিদ সবাই এ শিক্ষাকে কাজে লাগাচ্ছে। এমন কোনো ক্ষেত্রই নেই যেখানে পদার্থকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই একজন পদার্থবিদ হয়ে আলোকিত ক্যারিয়ারের হাতছানিতে সাড়া দেয়াটা খুব একটা অবাস্তব নয়। পদার্থ বা ফিজিক্স শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ প্রকৃতি। প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞানকেই মূলত ফিজিক্স বলতে বোঝানো হয়। প্রকৃতির অজানা বিষয়গুলোর রহস্য উদ্ঘাটনের জের ধরেই আজকের পদার্থবিজ্ঞান। প্রথমদিকে বিজ্ঞান চর্চা ব্যবলিয়ানবাসীর মধ্যে শুরু হলেও তা সম্প্রসারিত হয়ে গ্রিস, ইরান, ভারত, ইউরোপ, মধ্যে এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২০ শতাব্দীতে এসে পদার্থবিদরা বিজ্ঞান চর্চায় যে বিপ্লব ঘটায় তার ফলাফল আজকের টিভি, রেডিও, কোয়ান্টাম থিওরি, ডিএনএ মলিকিউলার, ট্রান্সসিস্টর, লেজার, পারমাণবিক বোমা এক কথায় আজকের আধুনিক জীবন।
পদার্থবিজ্ঞানের অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের যে কার তালিকার শীর্ষে পদার্থবিজ্ঞানের অবস্থান। পদার্থবিদ্যা এমন একটি বিষয়, যে বিষয়ে পড়াশোনা করে সব ক্ষেত্রেই রয়েছে কাজের সুযোগ। পদার্থবিজ্ঞানের হাত ধরেই আজকের এ আধুনিক বিজ্ঞান। আর এ বিষয়কে জনপ্রিয় করতে সব দেশেই রয়েছে প্রচেষ্টা। সেই প্রচেষ্টার অন্যতম অংশ বাংলাদেশের ফিজিক্স অলিম্পিয়াডসহ অন্যান্য বিষয়ে ডিগ্রি নেয়ার পর আশানুরূপ চাকরিতে ঢুকতে না পারলেও বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পদার্থবিদ্যার কদর রয়েছে। গণিত ও পদার্থে ভালো এমন যে কেউই পড়তে পারে এ বিষয়ে। এছাড়া বিসিএস করে ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা হয়ে সরাসরি কাজে যোগদানের সুযোগ রয়েছে এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের।
যাদের অবদানেই আধুনিক বিজ্ঞান
বর্তমানে আমরা যে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবীতে বাস করছি, তা সম্ভব হয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের কারণে। পদার্থবিজ্ঞানেরজনক আইজ্যাক নিউটন হলেও গ্যালিলিও, আইনস্টাইন, ম্যাক্স প্লাঙ্ক এদের ভুলার উপায় নেই। এছাড়া আলেকজাণ্ডার গ্রাহাম বেলকে স্মরণে না থাকলেও তার আবিষ্কৃত ফোন আমাদের নিত্যসঙ্গী। এছাড়া নিকলাস কোপারনিকাসের সৌরজগৎ মডেল, স্ট্যাফিন হকিংয়ের ব্লাক হোল আমাদের বিজ্ঞানে যোগ দিয়েছে নতুন মাত্রা। আর উদ্ভিদের প্রাণিতত্ত্ব দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল আমাদের দেশেরই জগদীশ চন্দ্র বসু। পদার্থবিজ্ঞানীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমরা প্রতিনিয়ত জানতে পারছি পৃথিবীর অজানা লুকানো বিষয়গুলো।
সর্বোচ্চ সম্মান নোবেল
পদার্থবিজ্ঞানে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেয়া হয় সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হওয়া এ পুরস্কার প্রতি বছর একবার দেয়া হয় পদার্থবিজ্ঞানে। তাই পদার্থবিদ হয়ে এ বিষয়ে অবদান রাখতে পারলে মারি ক্যুরি, আবদুস সালাম, পিটার হিগস, ফ্রাঙ্কোইস অ্যাংলার্ট, ইসামু আকাসােিকর পাশে নাম লেখানো খুব একটা অকল্পনীয় নয়।
সব ক্ষেত্রেই চাকরির সুযোগ
পদার্থবিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে যে কেউই রিসার্চ বেসড কিংবা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় কাজের সুযোগ পেয়ে থাকে। এছাড়া ব্যবসা, ফিন্যান্স, ইঞ্জিনিয়ারিং আইটির ক্ষেত্রেও কদর রয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানের ফলে চ্যালেঞ্জিং ও সমৃদ্ধশালী ক্যারিয়ারে প্রবেশ করার ক্ষেত্রেও রয়েছে সুযোগ। বিশেষ ক্ষেত্রগুলো শরুতিবিদ্যা, মেডিকেল ফিজিক্স, জ্যোতি শাস্ত্র, ভূতত্ত্ববিদ্যায় পদার্থবিদদের অগ্রাধিকার রয়েছে। সরাসরি একজন পদার্থবিদ ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ, লেকচারার, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, আবহাওয়াবিদ, বিজ্ঞানী হিসেবে জয়েন করতে পারেন। এমনকি টেলিভিশন, ট্রান্সপোর্ট, মেডিসিন, ব্যাংকিং, ‘ল’ সাংবাদিকতা পর্যন্ত মানুষ আজ পদার্থবিদ্যাকে ব্যবহার করছে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে।
আয়-উপার্জন
একজন পদার্থবিদ সব সেক্টরে কাজের সুযোগ থাকায় বেতনের স্কেলে ও আলাদা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত শাখাতে বেতনের অংকের পরিমাণের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। বেতন ন্যূনতম ৩০ হাজার থেকে শুরু করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাখও ছাড়ায়। এছাড়া দক্ষতার দিক বিবেচনা করে দেশের বাইরে আয় আরও আকর্ষণীয়। এছাড়াও আবাসন, মেডিকেল, মহার্ঘ্য ভাতারও সুযোগ রয়েছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে।
পদার্থবিদ হওয়ার ধাপগুলো
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে একজন ছাত্রকে ব্যক্তিগতভাবে পদার্থের প্রতি কৌতূহল, আগ্রহ ও কল্পনাশক্তি থাকতে হবে। এছাড়া সমস্যা সমাধান, গণিত ও কম্পিউটার নিয়ে কাজের দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞানের অন্তর্গত বিষয়ে অর্থাৎ গণিত,পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান ৭০ ভাগ থাকতে হবে। এরপর ৪ বছর স্নাতক করা যায়। এ ৪ বছরে পদার্থের বিভিন্ন বিষয় ধাপেধাপে পড়ানো হয় যেমন- বলবিদ্যা, পৃস্টটান, ক্যালকুলাস, তাপগতিবিদ্যা, অপটিকস, কোয়ান্টাম মেকানিকসসহ অন্যান্য বিষয়ে। এরপর ২ বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। কেউ যদি গবেষণাধর্মী পদার্থবিদ বা প্রফেসর হতে আগ্রহী হয় তখন তাদের অবশ্যই পিএইচডি ডিগ্রি নিতে হয়। যার জন্য ৪ থেকে ৫ বছর সময় লাগে। এরপর যে কেউই সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে পারে।
কোথায় পড়ানো হয়
বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে অধ্যানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কিছু কলেজেও এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। বেসরকারি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিষয় পড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সানটা, ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা, ক্যালটেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শীর্ষে রয়েছে। যেখানে পদার্থবিদ্যা পড়ার সুযোগ রয়েছে।
রয়েছে গবেষণা ও ইন্টার্নশিপের সুযোগ
কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সুযোগ করে দেয় হাতে-কলমে কাজেরও। তাই সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে বাড়ানো যায় দক্ষতা। পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যয়নরতরা দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সংস্থা যেমন- গণসাহায্য সংস্থা (G.S.S), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (BAEC),অগ্রণী ন্যাশনাল, ল্যাবরেটরি,কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটি, এলআই।