এখন সময় ‘আইপিই’ পড়ার
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
আইপিই (ইন্ড্রাসটিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং) হয়তো এখনো বাংলাদেশের মানুষের কাছে সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল, কম্পিউটার কিংবা মেক্যানিকাল মতো ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট খুব বেশি পরিচিতি পায় নি।
একটু পেছনে ফিরে তাকাই। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার ধারা অনুযায়ী সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারী শীর্ষে। রূঢ় হলেও অনস্বীকার্য সামাজিক অবস্থান এবং চাকরি আর ভবিষ্যৎ–ই এখানকার একমাত্র নিয়ামক। শীর্ষ মেধাবীদের আনাগোনা থাকলেও বিগত কিছু বছরের হিসেব কিন্তু ওলট–পালট করে দেয় অনেক কিছুই, একজন বিবিএ কিংবা এমবিএ করা শিক্ষার্থী থেকে কিন্তু আক্ষরিক অর্থে একজন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা ছেলে কিংবা মেয়ে অনেক বেশি জানে, সমস্যাটা দাঁড়ায় অন্যখানে। অনেক কিছু জানবার পরও যখন ইন্টারভিউ বোর্ডে পাশাপাশি দু’জনকে আমরা পাই, দেখি চমৎকার স্মার্ট বিবিএ/এমবিএ করা ছাত্র/ছাত্রীটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে হারিয়ে দিলো ইঞ্জিনিয়ারিং এর মেধাবীকে। হয়তো এর পিছনের কারণ, আমরা শিখি অনেক কিছুই, কিন্তু বলতে পারি না তার সিকি ভাগই, কিন্তু তার তুলনায় সেই বিবিএ/এমবিএ করা মানুষটি যতটুকুই জানুক সেটা প্রকাশে দুর্দান্ত ধরণের চৌকস, আর চাকরী? কার দিকে পাল্লা ভারী বলতে হয় এখন?
কেন পড়বেন আইপিই
আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের অনেক কিছুই শেখানো হয়, শেখানো হয় কী করে মেশিন তৈরি করতে হয়, কী করে মেশিন কাজ করে, তবে সত্যি কথা হলো, আমাদের দেশে কিন্তু বড়ো বড়ো মেশিন তৈরি করা থেকে বাইরে থেকে সেগুলো কিনে এনে তার সাহায্যে প্রোডাকশনের দিকেই জোর দেয়া হয়। ভেঙ্গে বলতে গেলে আমাদের দেশের যারা ৫/১০ কোটি টাকা দিয়ে বাইরে থেকে একটা মেশিন কিনে আনেন, তারা সেটার কমিশনিং (Setup) এর জন্য বাইরে থেকেই সাহায্য পান। কিন্তু সেই মেশিনটি ব্যবহার করে কী করে আমরা প্রোডাকটিভিটি (উৎপাদনশীলতা) বৃদ্ধি করতে পারি, সেটা কিন্তু পান না। কী করে একটা ফ্যাক্টরির লে–আউট তৈরি করতে হয়, যাতে সবচেয়ে কম Material Movement দিয়ে কী করে প্রোডাকশন করা যায়। ঠিক কতজন লোক ব্যবহারে Optimum খরচ হবে। ঠিক কী করে কাজ করলে, প্রসেসগুলো ঠিক করলে আমরা কোয়ালিটি বাড়িয়ে Product Defect কমাতে পারবো, সেটা কেউ বলে না।
আর এখানেই আইপিই আলাদা, শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং শেখানো না, শিক্ষাটাকে কী করে আরেকজনের কাছে তুলে ধরতে হবে, কী করে নিজেকে আরেকজনের সামনে প্রেজেন্ট করতে হবে, কী করে তৈরি করতে হবে চমৎকার প্ল্যানিং, ইন্ডাস্ট্রির Process, Layout, Manpower আর Limited Resource নিয়ে কী করে দুর্দান্ত সেটাপ দিয়ে একটা অসাধারণ প্ল্যান করে ফেলা যায় সেটাই আইপিই শেখায়। ইঞ্জিনিয়ারিং আর ম্যানেজমেন্ট–এর ব্রিজ হিসেবে কাজ করে আইপিই। আর সেই কারণেই আপনি যদি একজন মানুষের মধ্যেই ইঞ্জিনিয়ারিং এর দুর্দান্ত কৌশল আর ম্যানেজমেন্টের সুক্ষ্ণ হিসেব নিকেশ পেয়ে যান, কেন আপনি আলাদা করে দুজন কে হায়ার করবেন??
করতে হয় টিমওয়ার্ক
টিমওয়ার্ক এখন যেকোন ইন্ডাস্ট্রির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেকোন প্রজেক্টে কাজ করতে হলে এগিয়ে আসতে হবে নিজস্বভাবনা, বোধ আর আইডিয়া নিয়ে, আর টিমকে লিড করার ক্ষমতা না থাকলে কিন্তু অনেক কিছুই বিফলে মারা যাবে! টিমের মধ্যে কাজটাকে ভাগ করে নেয়া, কে কোন অংশটা করবে, প্রজেক্টের ম্যানেজ কে করবে, কী করে টাইমলাইনের মধ্যে কাজটা নামানো যাবে, এইসব ভাবনা কিন্তু একজন টিমলিডারকেই ভাবতে হয়, আর একজন ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া এইসব ভাবনা কার উপর সঁপে দিয়ে শান্তি পাওয়া যায়? আর সে যদি হয় আইপিই ইঞ্জিনিয়ার? তাহলে তো সোনায়–সোহাগা!!
কাজের ক্ষেত্র
আমাদের আইপিই ইঞ্জিনিয়াররা আছে BATB, Unilever, Nestle, Chevron, Lafarge Surma, Grameen Phone, Banglalink সহ অসংখ্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে। দেশের বাইরে আছে Yahoo!, Intel এর মতো বিশাল সব ইন্ডাস্ট্রিতে, Optimization এর দুর্দান্ত সব যাদু দেখিয়ে ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্য উচ্চতায়!