নাহিনের নানা স্বপ্ন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
কখনো বিজ্ঞানী, কখনো লেখক, আবার কখনো ক্রিকেটার—ছোটবেলায় এই তিনের যেকোনো একটি হতে চেয়েছিলেন খাদিজাতুল কোবরা। তাঁর ডাকনাম নাহিন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিকে পড়ার ব্যস্ততা, অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবা আর সামাজিক কাজে দারুণভাবে যুক্ত তিনি।
স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সবাই যখন ঢাকামুখী হওয়ার চেষ্টা করেন, তখন নাহিন তাঁর গন্তব্য ঠিক করেছিলেন সিলেট। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ রেবতী মোহন পাইলট স্কুল ও কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে শাবিপ্রবিতে পা রাখেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা’ হওয়ার নেশাই নাকি তাঁকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এনেছিল। ক্যাম্পাসে এসেই যুক্ত হন জ্যোতির্বিজ্ঞান-বিষয়ক সংগঠন ক্যাম-সাস্টে। জ্যোতির্বিজ্ঞানে তাঁর আগ্রহ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ২০১৪ সালে নাসা ও জাতিসংঘের বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ আয়োজনে যুক্ত হন। পড়ালেখার জন্য সিলেটে থাকতে হলেও নিজ এলাকায় কাজ করার ইচ্ছাটা দমে যায়নি। নারায়ণগঞ্জের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্যোতির্বিজ্ঞান-বিষয়ক কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ আয়োজনেও অংশ নিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞান ছাড়া নাহিনের আগ্রহ খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক আয়োজন নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো অনুষ্ঠানে তাঁর গান কিংবা নাচের পরিবেশনা থাকবেই। কী ধরনের গান গাইতে ভালোবাসেন? নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক গান…? নাহিনের উত্তর, ‘সব’। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শেখার সুযোগ না হলেও ছোটবেলা থেকে বড় বোনের কাছে গান শিখেছেন। ২০০৫ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে গান আর অভিনয় বিভাগে পুরস্কারও পেয়েছিলেন। সে সময় নাহিন স্কুলভিত্তিক প্রতিভা যাচাইয়ের প্রতিযোগিতা মার্কস অলরাউন্ডারেও সিলেট অঞ্চলে সেমিফাইনালিস্ট নির্বাচিত হন।
ব্যাডমিন্টন আর ক্রিকেটে তাঁর ভীষণ আগ্রহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় এখন তিনি রানারআপ। ২০০৫ সালে জেলাভিত্তিক ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। স্কুল-কলেজে পাঁড় ক্রিকেটভক্ত ছিলেন। সেই নেশায় নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের ক্রিকেট দল তৈরি করা নিয়ে এখন বেশ তোড়জোড় চালাচ্ছেন। কলেজ পর্যন্ত ছেলেদের সঙ্গেই পাড়া-মহল্লায় ক্রিকেট খেলতেন। সেই আগ্রহেই নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে শাবিপ্রবির প্রমীলা ক্রিকেট দল তৈরি করার কথা ভাবছেন।
ক্রিকেট মাঠের অলরাউন্ডার নাহিন মনে হচ্ছে জীবনেও অলরাউন্ডার হতে চান। নাচ, গান, খেলাধুলা, স্বেচ্ছাসেবা—এসবের বাইরেও চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহ আছে তাঁর। ইউএসএআইডির আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি বানানোর প্রতিযোগিতায় তাঁর পরিচালিত সিনেমা শাবিপ্রবিকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এ ছাড়া গল্প, ছড়া, লেখালেখিতেও তিনি আছেন।
এত্ত কিছুতে যাঁর পারদর্শিতা, সেই নাহিন ভবিষ্যতে কী হতে চান? এমন প্রশ্নে তাঁর হাস্যোজ্জ্বল উত্তর, ‘ছোটবেলায় কার্টুন চরিত্র মীনা হতে চাইতাম। মীনার দারুণ ভক্ত ছিলাম। বড় হয়ে দেখেছি সবাই যার যার জীবনে মীনা-রাজু হতে পারে। নিজের আগ্রহ আর কাজ করার প্রত্যয় মানুষকে বদলে দেয়। আমি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সমাজ বদলের কাজ করতে চাই।’
এ ছাড়া শাবিপ্রবিতে পড়াশোনা শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাতে চান তিনি। নিজের অভিজ্ঞতার ঝুড়ি ভারী করে দেশে ফিরে হাজারো মীনা-রাজুকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ আছে নাহিনের। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই তিনি বদলাতে চান তাঁর চারপাশ।