ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার পথে আট তরুণ
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক বৃত্তি ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনেটর জেমস উইলিয়াম ফুলব্রাইট ১৯৪৬ সালে এই প্রোগ্রাম চালু করেন। এখন পর্যন্ত ফুলব্রাইট বৃত্তিপ্রাপ্ত ৫৪ জন গুণী বিভিন্ন ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, আর পুলিৎজার পেয়েছেন ৮২ জন। উচ্চশিক্ষার জন্য এই প্রোগ্রামের আওতায় এ বছর বাংলাদেশের আট তরুণ সুযোগ পেয়েছেন।
আটজনকে একসঙ্গে করে একটা জম্পেশ আড্ডা দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এই তরুণদের কেউ শিক্ষক, কেউ আইনজীবী, কেউবা কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। পেশাগত ব্যস্ততার কারণে অবসর পাওয়া কঠিন। মুঠোফোনেই তাই আলাপ সারতে হলো।
তরুণ আইনজীবী মো. মনযুর রাব্বি। ‘ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম’ বৃত্তি পেয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে লন্ডনের বিখ্যাত লিংকনস ইন থেকে বার অ্যাট ল অর্জন করেছেন তিনি। বলছিলেন, ‘ফুলব্রাইট বৃত্তি পেয়ে দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। এক বছরের পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে সালিসের মাধ্যমে কীভাবে খুব দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা যায়, এই বিষয়ে কাজ করতে চাই।’ রাব্বি মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সালিসি আইন বিষয়ে পড়বেন।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সজীব হোসেন। বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়েক জন চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট বা সিএফএ আছেন, সজীব তাঁদের একজন। ফুলব্রাইটে তিনি সাইরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত হুইটম্যান স্কুল অব ম্যানেজমেন্টে ১৬ মাস মেয়াদি এমএস ইন ফিন্যান্স বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা বেশ অস্থিতিশীল বলে ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রে নিজের পেশাজীবন গড়ে তোলার কথা ভাবেন এই তরুণ। বিবিএ ও এমবিএতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানজনক ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি পিএইচডি করতে চান।
সজীব হোসেনের মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগে শিক্ষকতা করছেন তাহমিনা আহমেদ। তিনিও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। বৃত্তির আওতায় তাহমিনা দ্য ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে মাস্টার্স করবেন। বিবিএ পড়ার সময় নিজের ফ্যাকাল্টিতে প্রথম হওয়ার সুবাদে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। এবার নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে ফিরে তাঁর শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করতে চান।
কয়েক বছর আগে ভারত সফরে গিয়ে এ পি জে আবদুল কালামের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন রেজওয়ানুল হক। গুণী মানুষটিকে চোখের সামনে দেখার রোমাঞ্চ এখনো অনুভব করেন এই তরুণ। তাঁর মতো হতে চান বলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে শিক্ষকতা করছেন মাসুদ। এই তরুণ ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের জোসেফ কর্বেল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে পড়ার জন্য বৃত্তি পেয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণী আবির নুর বর্তমানে গ্রিন ইউনির্ভাসিটিতে সিনিয়র লেকচারার। তিনি মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং ইংলিশ টু স্পিকার্স অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজ বা টিইএসওএলে মাস্টার্স করার সুযোগ পেয়েছেন।
আবিরের মতোই শিক্ষকতায় যুক্ত তানজীব আহমেদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। রাস্তাঘাটের যানজট নিয়ে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছেন এই তরুণ।
সরকারি চাকরির প্রতি সবার দুর্বলতা থাকে, আবার নিজের আগ্রহেরও পেশায় যেতে চান অনেকেই। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো, সাবিহা সুলতানা ৩১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দিয়ে নিজের আগ্রহের শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পে প্রভাষক (শিক্ষা) হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এই তরুণ ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে ইএসএল (ইংলিশ অ্যাজ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ) বিষয়ে ফুলব্রাইট বৃত্তি পেয়েছেন। দুই বছরের পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে শিক্ষক প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত হতে চান।
সাবিহার মতোই সরকারি কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতিতে পড়াশোনা শেষে গবেষণা খাতে কাজ শুরু করেন মাইদুল। নিজেকে গবেষণা দুনিয়াতে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডার্লা মুর স্কুল অব বিজনেসে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করতে যাচ্ছেন। মাইদুল বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে গবেষণা বিভাগে উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
আর কয়েক মাসের মধ্যেই এই আট সম্ভবনাময়ী তরুণ পাড়ি জমাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৬ থেকে ২৪ মাস কাটলেই ফিরবেন বাংলাদেশে। পশ্চিমা অভিজ্ঞতায় নিজের কর্মক্ষেত্র আর বাংলাদেশকে আলোকিত করার প্রত্যাশা আর প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করছেন এই মেধাবীরা।