এখনই সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
মানুষের জীবনের স্বর্ণালি অধ্যায় তার শিক্ষাজীবন- এ কথা নির্দ্ধিধায় বলা যায়।শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত একজন শিক্ষার্থীর সাফল্যের ভিত গড়ে দেয়। তবে সে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীরা সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই যেমন ধরা যাক, ভিকারুননিসা নূনের শিক্ষার্থী তাবাস্সুম তন্বীর কথা। তন্বী সদ্য এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করল। সম্প্রতি ফলও প্রকাশিত হয়েছে, তন্বীর মা-বাবার ইচ্ছা তার সন্তান ডাক্তার হোক। কিন্তু তন্বী চায় বুয়েটে পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হতে। এ নিয়ে বেশ চিন্তিত তন্বী- ‘আমি চাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে, শৈশব থেকেই এটা আমার স্বপ্ন। কিন্তু মা-বাবার ইচ্ছা আমি চিকিৎসা পেশায় যাই।
এই নিয়ে আমি কিছুটা চিন্তিত। শৈশবে আমরা রচনা লেখার সময় বুঝে হোক বা না বুঝেই হোক সবাই লিখেছি, আমার জীবনের লক্ষ্য ডাক্তার হওয়া। মানুষের সেবা করা। কিন্তু বাস্তব জীবনটা ভিন্ন। একজন শিক্ষার্থী শৈশব থেকেই একটা স্বপ্ন লালন করে বড় হয়। কিন্তু পারিপাশর্ি্বক চাপের কারণে তার স্বপ্নপূরণ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শিক্ষার্থী হতাশা থেকে শিক্ষাজীবন পর্যন্ত সংকটের মুখে পড়তে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুব রবীন বলেন, ‘সামাজিক বিষয় এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে গবেষণা করতে আমার খুব ভালো লাগে। সমাজকল্যাণ আমার প্রিয় বিষয় ছিল। কিন্তু বাবা বললেন আজকাল এ বিষয়ের কোনো চাহিদা নেই, তুমি অর্থনীতি নিয়ে পড়। বাধ্য হয়ে পড়তে হচ্ছে। মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
মাহবুবের মতোই এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে চাকরির বাজারের কথা চিন্তা করে নিজের স্বপ্ন বা লক্ষ্যকে শিক্ষাজীবনেই মাটি দেয়। আসলেই কি তা করা উচিত? ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের টেরিটরি ম্যানেজার ফয়সাল আহমেদ শ্যামল বলেন, ‘আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে বিবিএ করেছি। আমাকে চারপাশের অনেক মানুষই বলেছিল, মার্কেটিং আমাকে দিয়ে হবে না। আমি করতে পারব না। যখন পড়তাম আমাকে শুনতে হতো, এ বিষয়ে খুব ভালো কিছু করা যায় না। অনেক পরিশ্রম করতে হয়, সত্যি বলতে কি আমি মার্কেটিং বিষয়টি খুব উপভোগ করতাম। আর পরিশ্রম ছাড়া জীবনে সফল হওয়া যায় না। চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। আমি এখন বেশ সফল।’ এমনই অনেক সফল ব্যক্তি আছেন যারা শিক্ষাজীবনে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে শুধু চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকারেরই চাহিদা নয়, অন্য পেশারও রয়েছে যথেষ্ট চাহিদা।
জানা চাই লক্ষ্য : একজন শিক্ষার্থীর আগেই ঠিক করে নেওয়া উচিত জীবনের লক্ষ্য- সে বড় হয়ে কী হতে চায়। কোন বিষয়টি সে খুব উপভোগ করে।
কী পড়ব : যখন জানা থাকবে নিজের জীবনের লক্ষ্য, তখন পথ অনেকটা পরিষ্কার হবে। শিক্ষার্থী এরপরই ঠিক করে নিতে পারে সে কোন বিষয়ে পড়বে। ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মার্কেটিং, আর্কিটেক্ট, এমনকি চলচ্চিত্র নির্মাণ বা সাংবাদিকতার মতো সৃজনশীল পেশা-সংশ্লিষ্ট বিষয়েও আজকাল পড়াশোনা করা যায়। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং, ওয়েব ডিজাইনিং, গ্রাফিক ডিজাইন, অ্যানিমেশন প্রভৃতি যুগোপযোগী পেশা-সংশ্লিষ্ট বিষয়েও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রয়েছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। তাই শিক্ষার্থীর জন্য কাজটা এখন অনেক সহজ। আর ইংরেজি, বাংলা সাহিত্য, নৃ-বিজ্ঞান, মৃত্তিকা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো গবেষণামূলক বিষয়গুলো তো থাকছেই।
প্রয়োজনে কাউন্সেলিং গ্রহণ : এইচএসসি পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থী পারিপাশর্ি্বক কারণে সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত বোধ করে। পরিবারের সবচেয়ে কাছের সদস্যদের সঙ্গে যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে মতবিরোধ হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে হতাশ হয়ে পড়ে। এ সময় হতাশ হওয়া চলবে না। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং গ্রহণ করতে হবে।
সময় এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার : সব হতাশা আর দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে নিয়ে নিতে পারেন আপনার সিদ্ধান্ত। একটু হতাশা আর দ্বিধার ফলে ভুল সিদ্ধান্ত একজন শিক্ষার্থীকে তার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য থেকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারে। তাই জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধ্যয়ন আর অনুশীলনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য সহজেই অর্জন করা সম্ভব।