সংগ্রামী শফিক
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র শফিক আহম্মেদ। এই বিভাগ থেকেই ভালো ফলাফল করে স্নাতক শেষ করেছেন। এখন স্নাতকোত্তরের ক্লাসেও তিনি মেধাবী মুখ। কে বলবে, একদিন এই তরুণ জীবিকার খোঁজে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসে পথে পথে রিকশা চালিয়েছেন!
শফিক আহম্মেদের গল্পটি বলতে হলে একটু পেছনে ফিরে তাকানো প্রয়োজন। ‘আমি তখন ইটখোলা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড বি এম স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ি।’ তাঁর কথা শুনতে শুনতেই আমরা স্কুলপড়ুয়া শফিকের মুখটা কল্পনায় দেখতে চেষ্টা করি। ‘আমার বাবা মোজাহার আলী রিকশা-ভ্যান চালাতেন। মা আর আমরা চার ভাইবোন মিলে সংসারে ছয়জন মানুষ। বাবার অল্প রোজগারে থাকা-খাওয়াই কষ্ট হয়ে যেত। তাই ওই বয়সেই স্কুল ছেড়ে আমাকে দিনমজুরের কাজ শুরু করতে হলো।’
কাপড় তৈরির কারখানায় কাজ করেছেন এক বছরের ওপরে, রিকশাও চালিয়েছেন প্রায় তিন মাস। এসবের মধ্যে তাঁর পড়াশোনার আগ্রহটা দমে যায়নি। দুই বছর পর আবার স্কুলে ভর্তি হন। টুকটাক কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালাতেন।
অবশেষে পরিশ্রমের ফল পেলেন শফিক, ২০০৮ সালে। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে জানা গেল, শফিক আহম্মেদ সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। সেই স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রটি বলছিলেন, ‘বলতে গেলে আমার সবকিছুই তখন প্রতিকূলে ছিল। সে অবস্থার মধ্যে থেকে এমন ফলাফল সত্যি খুব আনন্দের।’
বাবা-মায়ের অক্ষরজ্ঞান নেই, জিপিএ-৫ কী তা-ও জানেন না। তবে শফিকের ফলাফল শুনে খুশি হয়েছিলেন। এলাকাবাসী ও শিক্ষকদের প্রশংসা তো ছিলই। মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করে শফিকের আরও অনেক দূর পড়ালেখার ইচ্ছাটা প্রবল হলো ঠিক। কিন্তু আর্থিক সংকটের কথা ভেবে স্বপ্নটা ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। সে সময়ই প্রথমআলোতে অদম্য মেধাবী হিসেবে শফিকের গল্প ছাপা হলো। প্রতিবেদনটি পড়ে তাঁর স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এলেন ক্রীড়া সংগঠক ও ব্যবসায়ী মুশফিকুর রহমান মোহন।
কৃতজ্ঞচিত্তে শফিক বলছিলেন, ‘মোহন স্যার অনেকটা অভিভাবকের মতোই দায়িত্ব পালন করেছেন। আমার পড়াশোনার খরচ থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিয়েছেন।’ শফিকের সাফল্যে মুশফিকুর রহমান মোহনও ভীষণ খুশি। বলছিলেন, ‘ওকে তো সন্তানের মতোই দেখি, তাই প্রত্যাশাটাও একটু বেশি। আমি চাই, নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি ও দেশের কল্যাণে কাজ করুক।’ সে লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছেন ঢাবির এই মেধাবী ছাত্র। আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে শফিক আহম্মেদকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। তাই কঠিন সময়ও মাথা তুলে দাঁড়ানোর বিদ্যাটা তিনি জানেন। বললেন, ‘নিজেকে মূল্যবান মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে বিসিএস দিয়ে দেশের কাজে নিয়োজিত হব। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি।’