ঈদে বাড়ি ফেরার গল্প
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
প্রত্যাশিত স্বপ্নের সোনালি ভবিষ্যতের ছবি হূদয়ে ধারণ করে তাকে পাওয়ার পূর্ণ মন-বাসনা নিয়ে ছুটে চলে একজন শিক্ষার্থী। তার ধারাবাহিকতায়, ক্লাস, লাইব্রেরি, পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন আর অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েই পার হয়ে যায় বছরের দিনগুলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জীবনপঞ্জিকা থেকে একটি একটি করে দিন হারিয়ে যায়। ছুটে চলে এই ব্যস্ত নগরে পড়াশোনা আর নোট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ। এভাবে পথ চলতে চলতে হাপিয়ে ওঠে পুরো জীবন। তখন মন খুঁজে কিছু দিন ছুটি, গেটটুগেদারের মতো নানা পন্থা। কিন্তু কি আর করার সেই সুযোগ তো আর সবসময় আসে না। বা চাইলেও সবার ব্যস্ততার কারণে তা আর হয়ে ওঠে না।
দেখা যায়, ঐশীর বিশ্ববিদ্যালয় ছুটিতো, আনিকার বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। যার যার ছুটি সে, সে উপভোগ করছে। কারো সাথে আর কারো দেখা হচ্ছে না। কিন্তু বছরে দুই ঈদের ছুটিটাই যে একমাত্র ছুটি সবার এক সাথে দেখা হয়, সবার সাথে আড্ডা দেয়ার সুযোগ হয়। বছর ঘুরে আবার আসছে সেই সুযোগ। কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় সবকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আগে থেকে ছুটি চলছে। তাই অন্যান্যের মতো শিক্ষার্থীরাও অপেক্ষায় থাকছে কখন বাড়ি যাবো। বিশেষ করে ঈদকে ঘিরে এ আগ্রহটা থাকে প্রচুর। ঈদের ছুটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে প্রত্যেক শিক্ষার্থী। ঈদকে ঘিরে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই শুরু হয় নানা চিন্তাভাবনা, জল্পনা-কল্পনা। কে, কীভাবে, কোথায়, কেমন করে ঈদ কাটাবে ইত্যাদি নিয়ে ক্যাম্পাসে বন্ধুদের মধ্যে শুরু হয় আলাপ-আলোচনা। হয় মিষ্টি তর্ক-বিতর্ক। হবেইবা না কেন? বছরের এ দিনটি তো আর সচরাচর আসে না। এ দিনটি অন্যান্য কোনো গতানুগতিক দিনের মতো নয়, এ দিনটি আসে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের বারতা নিয়ে। এই দিন শিক্ষণের দিন। মিলিয়ে দেওয়ার দিন, বিলিয়ে দেওয়ার দিন। সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার দিন। তাই তো ঈদের ছুটি এলেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দেয় অস্থিরতা, অজানা এক উত্তেজনা।
ঈদ যত কাছে আসে, এ অনুভূতির মাত্রাগুলো ততই বাড়তে থাকে। প্রস্তুতি নেয় বাড়ি ফেরার। পরিবারের সঙ্গে মিলতে। মায়ের নিষ্পাপ শান্তিময় আঁচলের নিচে সুখ খুঁজতে ছোটে সবাই। ছোটে ছোট্ট ভাই কিংবা বোনটির হাজারো বিচিত্রময় আবদার শুনতে, শাসন আর ভালোবাসায় প্রতিটি মুহূর্ত পার করতে বাবার কঠোর আদেশ-উপদেশ এবং ভালোবাসা পেতে। অনেক শিক্ষার্থীই লেখাপড়ার জন্য বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে ঢাকায় হল, হোস্টেল কিংবা মেসে থাকেন। রমজান মাস এলে তারাও উদ্বেলিত হন। ঈদের ছুটি। বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন সারা বছর। প্রিয়জনের সাথে ঈদ করতে তারা নেন নানা প্রস্তুতি। তেমনি একজন, রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঐশী। তিনি জানান, পুরো বছর জুড়ে অপেক্ষায় থাকা হয় এই ছুটিটির জন্য। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে ছুটি তেমন একটা পান না। তারপরও এই ছুটিকে কেন্দ্র করে ঈদের শপিং, বন্ধুদের সাথে আড্ডা ঘুরতে যাওয়াসহ নানান প্ল্যান মাথায় ঘুরছে। আরেকজন শিক্ষার্থী সাজ্জাত হোসেন জানান, ঈদ মানেই আনন্দ আর ঈদের আনন্দ অবশ্যই আর সব আনন্দ থেকে আলাদা। এই আনন্দের সঙ্গে আর কোনো আনন্দের তুলনা চলে না। এই দিনটির জন্য সারা বছর প্রতীক্ষা করা হয়। ঈদ তো একটা পুনর্মিলনীর মতো। অনেক বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে এই দিনে দেখা হয়। তবে ঈদের আগে বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট পেতে একটু ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বিশাল, আনিকা, ত্রিশা আরো জানান, পড়াশোনার জন্য বাবা-মা সবাইকে ছেড়ে দূরে থাকতে হয়। তাই সারা বছরই প্রতীক্ষা থাকে ঈদের। ঈদের ছুটি এই তো আর কয়েকদিন পর। এরপরই বাড়ি যাব ঈদ করতে তারই প্রস্তুতি নিচ্ছি এখন। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ধাক্কাধাক্কি, ধস্তাধস্তিতে কখন কেন যেন গৌণ হয়ে যায়। মনের ভেতর কাজ করে অন্য রকম এক সুখের অনুভূতি। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে কেউ কোথাও জায়গা না পেয়ে হয়তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কিংবা বাদুড় ঝোলা হয়ে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। পৌঁছে যাবে নিজ গন্তব্যে কিংবা ডেকে দাঁড়িয়ে নদীর বুকে জলতরঙ্গের খেলা বা নিজের ছায়া দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবে আপন ঠিকানায়।