মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
‘নেপালে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা আমি নিজ চোখে দেখেছি। তখন কেবল মেডিকেলের প্রথম বর্ষে পড়ি। চিকিৎসাশাস্ত্রে তখনো খুব বেশি জ্ঞান ছিল না, তবু সাধ্যমতো নিজেকে নিয়োজিত করেছিলাম স্বেচ্ছাসেবায়। পরে মনে হয়েছে, বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পড়ালেখার চেয়েও বেশি দরকার বাস্তবমুখী শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন সেমিনার বা কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করলে অভিজ্ঞতা বাড়ে। তাই আমি এখানে এসেছি।’ বলছিলেন নেপাল থেকে আগত মেডিকেল পড়ুয়া শচীন সুবেদী।
৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর দুদিন অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল স্টুডেন্টস সায়েন্টিফিক কংগ্রেস (BIMSSCON) ২০১৬। সম্মেলনটি আক্ষরিক অর্থেই পরিণত হয়েছিল মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায়। যেখানে অংশ নিতে ঢাকার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ভবনে সমবেত হয়েছিলেন দেশ-বিদেশের মেডিকেল-পড়ুয়ারা। ব্যানার, ফেস্টুনসহ নানা রঙে সেজেছিল আয়োজনের ভেন্যু।
কেন এই আয়োজন? বলছিলেন আয়োজক আইএফএমএসএ (ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন) বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ হাফিজ। ‘এ কনফারেন্সের উদ্দেশ্য ছিল একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে সমন্বয় ঘটানো। এখানে বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের গবেষণাপত্র উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছেন। সম্মেলনে বর্তমান বিশ্বের স্বাস্থ্যসমস্যা, নতুনভাবে আবর্তিত রোগ, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আধুনিক স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রশিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেছেন।’ সংগঠনটির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক অভিষেক ভদ্র বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করা। বিভিন্ন স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা চিকিৎসক হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতার চেতনার বিকাশ ঘটাতে চাই।’ তিনি আরও জানান, এবারের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশসহ ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, সুদান, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের সাত শতাধিক শিক্ষার্থী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন ও অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘শুধু মেধা কখনোই ভালো ডাক্তার হওয়ার নিয়ামক নয়; বরং সততার সঙ্গে পরিশ্রম, রোগীদের প্রতি ভালোবাসা, মমতা, সহমর্মিতার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী ভালো চিকিৎসক হয়ে ওঠে।’
সম্মেলন ঘিরে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। ভারত থেকে আসা পার্থ গার্গ যেমন এই অভিজ্ঞতা নিয়ে বেশ খুশি। তাঁর মতে, চিকিৎসাশিক্ষা শুধু বইনির্ভর হওয়া উচিত না। বিশ্বের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়ে আলোচনা করা এবং সমাধানের নতুন পন্থা অনুসন্ধান করাও প্রয়োজন। সম্মেলনের সুযোগে নিজ দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরার একটা সুযোগও তিনি পেয়েছেন বলে জানালেন।