ফেসবুকে দল বেঁধে
ক্যাম্পাস ডেস্ক
বিসিএস পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিদেশে পড়ালেখা, প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে সাইক্লিং, খাবারদাবার থেকে প্রকৃতি—নানান বিষয়ে আগ্রহীরা ‘গ্রুপ’ বানিয়ে নেন ফেসবুকে।
‘ফেসবুক গ্রুপ’—জোট বেঁধে ভালো কিছু করার একটা দারুণ সুযোগ করে দিয়েছেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়তো নেই, তবে একই রকম বিষয়ে যাঁদের মনের মিল, কখনো বা কাজের মিল; তাঁরা একসঙ্গে এখানে ‘গ্রুপ’ হয়ে যান। বিসিএস পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিদেশে পড়ালেখা, প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে সাইক্লিং, খাবারদাবার থেকে প্রকৃতি—নানান বিষয়ে আগ্রহীরা ‘গ্রুপ’ বানিয়ে নেন ফেসবুকে। বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও আছেন গ্রুপচর্চায়। কিছু কিছু গ্রুপ বেশ কাজেই লাগে। এমন কিছু ফেসবুক গ্রুপের কথা জানা যাক।
জানার আছে কত কী
গ্রুপের নাম ‘বিসিএস: আওয়ার গোল’। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে কথাবার্তা চলে এই দলে। সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। বিসিএস প্রস্তুতির বহু পরামর্শ, তথ্য মেলে এখানে। এই গ্রুপে বেশ জনপ্রিয় ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী সুশান্ত পাল। তিনি পরামর্শ আর সাহস দিতে চেষ্টা করেন বিসিএস পরীক্ষার্থীদের। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের কাজে লাগে, এমন ফাইলগুলোই আমি আপলোড করি।’
বিদেশি ভাষাশিক্ষা বিষয়ে কিছু গ্রুপের খোঁজ পাওয়া গেল। ‘লার্ন জার্মান-বিএসএ জার্মানি’ নামের দলটিতে যেমন জার্মান ভাষা শেখার পরামর্শ দেওয়া হয়। আবার উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীরা ভিড় জমান ‘হায়ার স্টাডি অ্যাবরোড’ নামের ফেসবুক গ্রুপটিতে। এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সিয়াম হোসাইন জানান, ‘উচ্চশিক্ষার জন্য আমাদের দেশের তরুণদের সঠিক ও নির্ভুল তথ্য দিতে তেমন কোনো ওয়েবসাইট নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম।’ বিভিন্ন সময়ে উচ্চশিক্ষাবিষয়ক সেমিনারের আয়োজনও করেন গ্রুপের সদস্যরা।
শুধু পড়ালেখা আর পেশা-ভাবনাই নয়
ভাবনার জগৎটা আরও ঝালিয়ে নেওয়ার দলও আছে। গণিত নিয়ে আগ্রহীরা যেমন বাংলাদেশ ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াড গ্রুপে এক জোট হয়েছেন। আবার কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা পাবেন ‘প্রোগ্রামিং প্রবলেম’ নামের দলটিতে। ৭০ হাজারের বেশি সদস্যের এই দলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার সমস্যা-সমাধান নিয়ে পোস্ট চোখে পড়ে।
ওদিকে বিডি সাইক্লিস্ট গ্রুপের সাইকেলপ্রেমীরা অনলাইনের গণ্ডি পেরিয়ে প্রতি সপ্তাহেই এক হয়ে যান। রাইডে ছুটে বেড়ান ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের নানা এলাকায়। শুধু অনলাইনেই নিজেদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখেনি, এমন আরেকটি গ্রুপ বইপোকাদের আড্ডাখানা। এক লাখের বেশি সদস্য আছেন এই দলে। মাঝেমধ্যেই প্রিয় বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তাঁরা। ফেসবুকের নীল দুনিয়ার বাইরে দেখা হয়ে যায় বইপ্রেমী বন্ধুদের।
গ্রুপের ভালো গ্রুপের মন্দ
হাজারো বিষয়ের ফেসবুক গ্রুপ থাকলেও সবগুলো কিন্তু কাজের নয়। ভালো-মন্দ বাছাই করার দায়িত্ব ব্যবহারকারীর। নিজের আগ্রহ, পছন্দের বিষয় হলেই কোনো গ্রুপে যোগ দিন। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা বললেন, ‘আমি অনেক গ্রুপে নিজের আগ্রহেই যুক্ত হই, আবার অনেক গ্রুপে বন্ধুরা যুক্ত করে নেয়। বেশির ভাগ সময়ই গ্রুপগুলো কাজে লাগে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রুপগুলো বেশ বিরক্তি তৈরি করে। অনেক নোটিফিকেশন, ট্যাগ করা, ছবি পোস্টের কারণে গ্রুপগুলোতে নানা বিষয়ে অযথাই কথা হয়। এ বিষয়গুলো তখন সদস্যদের বিরক্ত করে।’
বইপোকাদের আড্ডাখানা গ্রুপের প্রশাসক আশিক সরকার বলছিলেন, ‘নানা মতের মানুষ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কে কেমন মানসিকতার তা আগে থেকে টের পাওয়া যায় না। অনেক অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়েও গ্রুপের দেয়ালে কথা-মন্তব্য-ছবি প্রকাশ করেন অনেকেই। আমাদের গ্রুপ মডারেটরদের প্রতিদিনই এমন বিরক্তির পোস্ট সরানোর জন্য চোখ খোলা রাখতে হয়।’
সবকিছুর পরও সমমনা তরুণেরা এককাট্টা হন গ্রুপে। নিজেদের মধ্যে ভাবনা দেওয়া-নেওয়া করেন, দরকারে অন্যদেরও সহযোগিতা করেন।