জাতীয় স্কুল বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
মঞ্চে সারা দেশের বাঘা–বাঘা বিতার্কিক। পাল্টাপাল্টি যুক্তির খেলা। দিন শেষে সবাই পরাস্ত। জয়ের মুকুট চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তিন খুদে বিতার্কিকের মাথায়। ১ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই বিতর্ক দল। শুধুই কি খাস্তগীর? একই দিন একই মঞ্চে ক্লাব পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়ও শিরোপা জেতে দৃষ্টি চট্টগ্রাম।
বৃহস্পতিবার প্রথম আলো কার্যালয়ে কথা হয় ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিতর্ক দলের তিন সদস্য তমা দেবী, প্রযুক্তা প্রেরণা চৌধুরী ও শ্রেষ্ঠা চৌধুরীর সঙ্গে। জাতীয় পর্যায়ের বিতর্কে এমন অর্জনের পর উচ্ছ্বসিত তারা। এ অর্জনে তাদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। বিতর্ক আন্দোলন সবখানে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা তাদের।
‘সংবাদমাধ্যমে শিশু: ধারণা ও নীতি-নৈতিকতা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে এই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের ১২টি অঞ্চলে আয়োজন করা হয় স্কুল পর্যায়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতা। ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (এমআরডিআই) তত্ত্বাবধানে সারা দেশে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজক বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ)। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ১৯৮টি বিদ্যালয়। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও রানারআপ ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল ও কলেজ জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। এই প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ের বিতর্কের প্রথম আসর বসে গত ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শুক্রাবাদের ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। শিশু আইন ও অধিকারের বিষয়ে গণমাধ্যমের দায়িত্ব ও করণীয় নিয়ে চলে তর্কযুদ্ধ। স্কুলপর্যায়ের বিতর্কের কোয়ার্টার ফাইনালে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয় ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। অন্যদিকে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিতর্ক দল এগিয়ে যায়। প্রথম পর্বে মেহেরপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, গৌরিপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় এবং ঢাকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মুখোমুখি হয় তারা। এর মধ্যে খাস্তগীরের বিতর্ক দলটি শুধু আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সঙ্গে হেরে গেলেও বাকি তিন বিতর্কে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ায় কোয়ার্টার ফাইনালে অংশ নেয়। কোয়ার্টার ফাইনালে কুষ্টিয়ার এস ভি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও সেমিফাইনালে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে খাস্তগীর।
১ অক্টোবর এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের বিতর্ক ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। চূড়ান্ত পর্বের স্কুল পর্যায়ের বিতর্কে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মুখোমুখি হয় লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ করিমউদ্দীন পাইলট উচ্চবিদ্যালয়। ‘এ সংসদ মনে করে, আইন করে গণমাধ্যমের নীতিনৈতিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়’ বিষয়ের ওপর তর্কযুদ্ধে অংশ নিয়ে ৯-০ ব্যালটের ব্যবধানে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছিনিয়ে নেয় খাস্তগীরের দল। বিতার্কিকদের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠা চৌধুরী দ্বিতীয় ও তমা দেবী তৃতীয় স্থান দখল করে। আর ফাইনাল শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় শ্রেষ্ঠা চৌধুরী।
বিদ্যালয়ের এমন অর্জনে খুশি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হাসমত জাহান। তিনি বলেন, ‘এই বিতার্কিকেরা বিদ্যালয়ের সুনাম ধরে রেখেছে। তাঁদের এমন অর্জনে আমরা গর্বিত। শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই বিতার্কিকেরা সফল হোক এই প্রত্যাশা করি।’
এদিকে এই বিতর্কের মঞ্চে ১২টি অঞ্চলের আয়োজকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ক্লাব পর্যায়ের বিতর্ক। ১২টি বিতর্ক দলের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে দৃষ্টি চট্টগ্রাম। চূড়ান্ত পর্বের বিতর্কে দৃষ্টি পরাজিত করে সিলেট ডিবেটিং ফোরামকে। দৃষ্টি চট্টগ্রামের বিতর্ক দলে ছিলেন সাবের শাহ, সাইফুদ্দিন মুন্না ও নাসির উদ্দিন।