শিক্ষার্থী সাড়ে আট হাজার, অধ্যাপক মাত্র সাতজন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি অধ্যাপক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থীর জন্য চার বিভাগে রয়েছেন মাত্র সাত জন অধ্যাপক। আর বাকি ১৭টি বিভাগে কোনো অধ্যাপক নেই।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ১৩২ জন। এর মধ্যে আবার ২৫ জন শিক্ষক রয়েছেন বিভিন্ন মেয়াদের শিক্ষা ছুটিতে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের ৩০তম এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষক সংখ্যা। দীর্ঘ আট বছরেও অভিজ্ঞ শিক্ষক তো দূরের কথা শিক্ষক সংকটই মেটাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে দুইজন অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হলেও একজন অধ্যাপক কিছুদিন পরেই চাকরি ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীতে আর অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে অনভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
বিভাগ সূত্র জানায়, ছয়টি অনুষদভুক্ত ২১টি বিভাগের মধ্যে বাংলা বিভাগে তিনজন, অর্থনীতি বিভাগে একজন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে একজন এবং গণিত বিভাগে রয়েছেন মাত্র দুইজন অধ্যাপক। অপরদিকে অধ্যাপক ছাড়াই চলছে বাকি ১৭টি বিভাগ। এসব বিভাগে সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপকদের দিয়ে চলছে বিভাগীয় প্রধানের কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১শ ৮৮ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন অধ্যাপক রয়েছেন। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৫ জনের জন্য একজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ জনের জন্য একজন এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৯ জনের জন্য একজন অধ্যাপক রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষক জানান, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের ১৫০ জনের জন্য কমপক্ষে একজন অধ্যাপক থাকা দরকার। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১শ ৮৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র একজন অধ্যাপক। অধ্যাপকের এ সঙ্কট শিক্ষার্থীর গুণগত শিক্ষা বাধাগ্রস্ত করবে বলেও তারা মন্তব্য করেন। অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাবে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন।
অধ্যাপক নিয়োগ না দেওয়ার অন্যতম কারণ উপাচার্যের একাধিক পদ দখল করে রাখা বলেও জানান তারা। সরেজমিনে বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন জুনিয়র শিক্ষকরা যাদের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার বয়স এক থেকে দুই বছর।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মোট ৮ হাজার ৩১৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। কিন্তু পাঠদানের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৩২ জন। এর মধ্যে ২৫ জন শিক্ষক রয়েছেন বিভিন্ন মেয়াদের শিক্ষা ছুটিতে। বাকি ১০৭ জনের অনেকেই বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে জড়িত।
বিভাগগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ছুটিতে থাকা শীর্ষ বিভাগগুলো হলো ইংরেজি বিভাগের সাতজন শিক্ষকের তিনজন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাতজন শিক্ষকের তিনজন, রসায়ন বিভাগের আটজন শিক্ষকের তিনজন ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নয়জন শিক্ষকের তিনজন আছেন বিভিন্ন মেয়াদের শিক্ষা ছুটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু থাকায় এসব বিভাগের একজন শিক্ষককেই নিতে হচ্ছে ১০-১২টি কোর্স। ফলে যেমন ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম তেমনি শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
অপরদিকে মামলার কারণ দেখিয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এবং ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পাঁচটি ব্যাচের ২৬০ জন শিক্ষার্থীর বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারজন। এরমধ্যে একজন শিক্ষা ছুটিতে আছেন। অপরদিকে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সাতটি ব্যাচের ৪৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারজন।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. গোলাম রব্বানী উপাচার্যের শিক্ষক নিয়োগে উদাসীনতাকে দায়ী করে জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষক সঙ্কটের কারণে বর্তমানে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা প্রায় দুই বছরের সেশনজটের মধ্যে আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য যেখানে একজন শিক্ষক আছেন সেখানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক।
গত আট বছরে যে পরিমাণে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে সেই অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় এই ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। ফলে ৬ মাস থেকে আড়াই বছরের সেশনজটের বোঝা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বিভাগগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।
এ ব্যাপারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপক সঙ্কট আছে। নতুন হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সঙ্কট বেশি থাকবারই কথা। আমি যোগদানের পর একজন অধ্যাপক পেয়েছি। এখন সাতজন আছেন। অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করে বাকিগুলোতে নিয়োগ প্রদান করা হবে।