উচ্চশিক্ষায় সঠিক বিষয় নির্বাচন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
সুলতানা রাবেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে চান্স পাওয়ার পরও তিনি ভর্তি হন ঢাবির ইসলাম শিক্ষা বিভাগে। এই বিভাগ থেকে পাস করার পর তিনি লক্ষ্য করছেন তার চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। বেসরকারি ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তিনি আবেদন করার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাই তিনি মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় নয় সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে কোন বিষয় পড়ব তার উপর। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে, সেই সাথে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা এখন বিষয় নির্বাচন নিয়ে। ভর্তি পরীক্ষাতে ভালো করা যেমন জরুরি তেমনি জরুরি হলো বিষয় নির্বাচন করা। মনে রাখতে হবে সায়েন্স বা কমার্স অথবা আর্টস বিষয় হিসেবে কোনটাই ফেলনা নয়।
পড়ালেখা করে যে কোন বিষয়েই উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সায়েন্স-আর্টস-কমার্সের মধ্যে কোন বিষয়ে পড়লে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি সহজেই পাওয়া যাবে, তা ঠিক করুন। মাথা ঠা-া রেখে আর বাস্তবতা বিচার করে করতে হবে বিষয় নির্বাচন। এক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে সামর্থ্যরে কথা। কারণ যে বিষয়ে পড়লে শিক্ষার্থী ভালোভাবে ও সহজে বিষয়টি আয়ত্ত করতে পারে, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীর ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখে তার পছন্দের পেশাটাকে বেছে নিতে এবং সে অনুযায়ী ক্যারিয়ার গড়তে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই সেটা সম্ভব হয় না। চাকরির এই বাজারে পছন্দসই চাকরি করাটা সবার ভাগ্যে জোটে না। তবে পছন্দসই পেশায় কাজ করার আগে বেছে নিতে হবে সে অনুযায়ী পড়াশুনার বিষয়।
বিষয় নির্বাচনে যদি আমরা ব্যর্থ হই তবে পছন্দের পেশায় ঢুকতে যথেষ্ট কষ্ট পোহাতে হবে। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিভাবকের পছন্দ-অপছন্দের মূল্য দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীর পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে। যার প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীর একাডেমিক রেজাল্টে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা মৌ বলেন, অভিভাবকদের উচিত শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়া। আমার প্রথম পছন্দ ছিল সাংবাদিকতা আর বাসার সবার চাওয়া আমি যেন আইন বিষয়ে পড়ালেখা করি। এই কারণে আইন বিষয়ে আমার মনোনিবেশ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. অরুণ কুমার বলেন, যুগোপযোগী বিষয়ে পড়াশোনা করলে কর্মজীবনে সফল হওয়া সহজ হয়।
সদ্য এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে সময়োপযোগী বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন। কোর্স সম্পন্নকারীদের দেশে ও বিদেশে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, আমরা অভিভাবকরা যতো যাই বলি আমাদের উচিত বিষয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীর উপরই ছেড়ে দেয়া। তবে নতুন বিষয়গুলোতে পুরাতন বিষয়ের তুলনায় প্রথম শ্রেণী পাওয়া সহজ। কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলোতে বেশি নম্বর পাওয়া যায়। ভালো ফলের জন্য ভালো বিষয় বেছে নেয়াটা জরুরি। ক্যরিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে আর্টস বা হিউম্যানিটিজ একেবারে ফেলনা নয়, বরং কয়েকটি বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করলে ভালো চাকরি এবং সম্মান দুটোই পাওয়া যায়। আর্টসে বিষয়-বৈচিত্র্য ব্যাপক এবং এর পরিধিও অনেক। আর্টসের ছাত্রছাত্রীদের স্মৃতিশক্তি ভালো হওয়া জরুরি। এর সঙ্গে দরকার মৌলিক বিষয়ে লিখতে পারার ক্ষমতা। কোন বিষয় সম্পর্কে নিজের মতামত দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে সিন্থেসিস করার ক্ষমতাও থাকা চাই। ইবির সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমীন বলেন, বর্তমান সময়ে গতানুগতিক পেশার বলয় ভেঙ্গে বেরিয়ে আসছে তারুণ্য। পেশা হিসেবে তারা বেছে নিচ্ছে যুগোপযোগী ও সৃজনশীল সব কাজ। কিছু কিছু বিষয়ের সময়োপযোগিতা ও চাহিদা ব্যাপক। যেমন বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে ব্যবসায় শিক্ষার চাহিদা ব্যাপক। সঙ্গতকারণে অনেক শিক্ষার্থী বিবিএ পড়তে চায়। নতুন কিছু বিষয় আছে যার কর্মপরিধি সীমিত।
বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর উচিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের চাহিদা ও এর কর্মপরিধি মূল্যায়ন। ইঞ্জিনিয়ারিং সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ যেমন কম্পিটার, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, মেকানিক্যাল, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এসব বিষয়ে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের দেশে ও দেশের বাইরে রয়েছে চাকরির ব্যাপক সুযোগ। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এবং ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিষয় নির্বাচন করতে হবে। বর্তমানে মিডিয়ার জয় জয়াকার। তাই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কদর। ঢাকা, রাজশাহী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়ে অনার্স করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে এই পেশার পরিধি বেড়েছে। প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান টিভি নিউজ চ্যানেলগুলোতে সাংবাদিকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
মানবতার সেবা ও উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুক বিজ্ঞান বিভাগের অধিকাংশ মেধাবী তরুণের স্বপ্ন থাকে ডাক্তার হওয়ার। ঢাকা, জগন্নাথ, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি পড়ার সুযোগ রয়েছে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এই বিষয়ে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। এ বিষয়ে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে ওষুধ কোম্পানিতে রয়েছে চাকরির যথেষ্ট সুযোগ। পর্যটনের এ যুগে হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দেশে-বিদেশে রয়েছে চাকরির ব্যাপক সুযোগ। এক কথায়, হোটেল ম্যানেজমেন্টে দক্ষ ব্যক্তির জন্য বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজার খোলা। আধুনিক তরুণদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের সৃজনশীল পেশা ফ্যাশন ডিজাইনিং। বিভিন্নমুখী ফ্যাশনকেন্দ্রিক কাজে ফ্যাশন হাউসগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।