‘গবেষণায় প্রথম সারিতে যুক্তরাষ্ট্র’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ইউনিভার্সিটি অব লুইজিয়ানা যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের মনরো শহরে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই থাকি। আমার পিএইচডির গবেষণার বিষয় ‘ক্যান্সার ড্রাগ ডেলিভারি সিস্টেম্স’। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার সুনাম নতুন করে বলার কিছু নেই। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ক উচ্চশিক্ষা আর উচ্চতর গবেষণার জন্য বিশ্বে প্রথম সারিতেই আছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। আর তাই আমিও ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি দেয়ার সুযোগ সানন্দে গ্রহণ করি।
ভোরে ঘুম ভাঙতেই ধর্মীয় কাজ সেরে নাস্তা তৈরিতে মন দিতে হয়। বাংলাদেশের মতো বাইরে গেলেই পরোটা আর ডাল ভাজি পাওয়া যায় না বলে ওয়ালমার্টের টর্টিলা বা অন্য কোন রুটিতে মন ভরে না। তাই অধিকাংশ সময়েই রেডিমেড কিছু খাবার কিংবা ফল-ফলাদি দিয়ে নাস্তা করতে হয়। দুপুরে দু’একদিন রেস্টুরেন্টে খাওয়া পড়ে। সহপাঠী ও শিক্ষকরা বেশ বন্ধুসুলভ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্র, শিক্ষক এবং গবেষকদের সমাগম হওয়ায় বৈশ্বিক সংস্কৃতির সঙ্গ পাওয়ার সুযোগ অবারিত। আবহাওয়া সারা বছর অনেকটা বাংলাদেশের মতই নাতিশীতোঞ্চ। তুষার খুব একটা পড়ে না বললেই চলে।
সপ্তাহে পাঁচদিন ক্লাস হয়। সোম থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। শুক্রবার এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে অধিকাংশ অফিস বন্ধ হয়ে যায়। শনি এবং রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তবে পিএইচডি গবেষকদের জন্য ব্যাপারটা একটু আলাদা। অনেক সময় গবেষণার কোন কাজ বা পরীক্ষা চলতে থাকলে সেটা শেষ করেই বাসায় ফিরতে হয়। সেটা মধ্যরাত হোক আর ছুটির দিন হোক। যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি গবেষণার ভিন্ন দিক হচ্ছে, গবেষণার পাশাপাশি কমপক্ষে ১০টি কোর্স (৩০ ক্রেডিট ঘণ্টা) সম্পন্ন করতে হয়। ক্লাসগুলো সাধারণত দেড় ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী। তিন ঘণ্টাব্যাপী ক্লাসগুলোর মাঝে ৫-১০ মিনিট বিরতি পাওয়া যায়। প্রতি সেমিস্টারে কোর্স নেয়ার ওপর ভিত্তি করে পছন্দমতো সময়ে নির্ধারিত কোর্সগুলো শেষ করতে হয়। এরপর বাকি সময়টা শুধু গবেষণার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
অবসরে ঘুরতে বের হওয়া, ফুটবল খেলা, মুভি দেখতেই কাটে। সাপ্তাহিক ছুটিতে ফরসিথ পার্ক, জিমি ডেভিস স্টেইট পার্ক, ব্লাক বাইয়ু, ফরাসী সভ্যতার নিদর্শন ঐতিহাসিক নিউ অরলিন্স নগরী এবং রাজধানী ব্যাটন রুশ প্রভৃতিই থাকে ভ্রমণের তালিকায়। আর একটু লম্বা ছুটি পেলে অঙ্গরাজ্যের বাইরে কোথাও বেরিয়ে পড়া। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবসে অন্য সব দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা বাঙালী সংস্কৃতি তুলে ধরি।
লুইজিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ জন বাঙালী ছাত্র ও আশপাশের এলাকায় ৬-৭টি বাঙালী পরিবারের বসবাস। বাংলাদেশীদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং সহপাঠীদের ধারণা ও মনোভাব খুবই সন্তোষজনক। দেখা পেলেই অনেক বিদেশী শিক্ষক-শিক্ষার্থী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর প্রশংসায় মেতে উঠেন। আমেরিকান, চীনা অথবা মধ্যপ্রাচ্য বংশোদ্ভূত সকল শিক্ষকই বাংলাদেশী ছাত্রদের গবেষণার দক্ষতা ও অগ্রগতিতে খুবই সন্তুষ্ট।
যারা গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চান তাদের জন্য বেশকিছু পরামর্শ আছে। প্রথমত ভর্তির ক্ষেত্রে একাডেমিক রেজাল্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই যারা এখনও অনার্স অথবা মাস্টার্স পড়ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরিকল্পনা করছেন তাদেরকে একাডেমিক রেজাল্টকে গুরুত্ব দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তি ও আর্থিক বৃত্তি (প্রধানত টিচিং/রিসার্চ এসিন্টেন্টশীপ) অনেকটাই নির্ভর করে ভাল জি-আর-ই ও টোফেল স্কোরের ওপর। অনেক সময় অনার্স এবং মাস্টার্সের ফলাফল কম হলেও জি-আর-ই পরীক্ষায় ভাল নম্বর দিয়ে কাভার করা যায়। জি-আর-ই বা টোফেল পরীক্ষায় ভাল করতে হলে শুরু থেকেই ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অর্জনের চর্চা করতে হবে। ইংরেজী পড়া, বলা, লেখা এবং শোনার দক্ষতা চর্চা একাডেমিক পড়াশোনার সঙ্গে আগেভাগেই শুরু করা উচিত। তৃতীয়ত, যে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর গবেষণা করতে আগ্রহী, সে বিষয়ে প্রজেক্ট কিংবা থিসিস করে কিছু অভিজ্ঞতা প্রস্তুত করে রাখা যেতে পারে। যা ভাল গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে রাখেবে।
শিক্ষার সঙ্গে গবেষণাকে একীভূত করে এবং উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করলে বাংলাদেশেই সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো সম্ভব।