ভিনদেশের মঞ্চে আমরাই বাংলাদেশ
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
আমার দক্ষিণ কোরিয়ান বন্ধু হানজু। তার মানিব্যাগে কোরিয়ান মুদ্রার সঙ্গে বাংলাদেশের একটা ১০ টাকার নোটও আছে, ব্যাপারটা ভাবতেই আমার ভালো লাগে! হানজুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল ভারতে, নবম এপিবি নাট্যোৎসবে অংশ নিতে গিয়ে। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবেই তার হাতে ১০ টাকার নোটটা তুলে দিয়েছিলাম।
বন্ধুত্ব, সাংস্কৃতিক বিনিময় আর নতুন সব অভিজ্ঞতার মিশেলে দারুণ কেটেছে নাট্যোৎসবের দিনগুলো। ১৯ থেকে ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উৎসবে অংশ নিতে ভারতে গিয়েছিলাম আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের একটি দল। অধ্যাপক ইসরাফিল শাহীন স্যারের নির্দেশনায় সাঁঝবেলার বিলাপ নামের একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছি আমরা।
মনে আছে, নাটক শুরুর আগে আমরা যাঁরা অভিনয় করেছি—আমি, ইলিয়াস, তোড়া, ধীমান, ইশতিয়াক, হিমেল ও রানা; আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ভিনদেশের মঞ্চে নিজেদের সেরাটাই দেব। দেশের বাইরে নাটক মঞ্চায়নের অভিজ্ঞতা হলো এই প্রথম। হাতে হাতে রেখে ঠিক করেছিলাম, মঞ্চে আমরাই হব বাংলাদেশ। নাটক শেষে সবাই যখন দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছিল, দেখে মন ভরে গেছে। আয়োজক ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার নাট্যশিক্ষক, নাট্যশিক্ষার্থী, অভিনয়শিল্পী, নির্দেশক ও ২০টিরও বেশি দেশের নাট্যজনেরা আমাদের নাটক দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ নেয় সিঙ্গাপুর, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, ইরান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ বেশ কিছু দেশ।
উৎসবটি মূলত এশিয়া প্যাসিফিকের যত নাট্যস্কুল আছে, তাদের একটি অংশের মেলবন্ধন। এখানে শুধু নাটকই মঞ্চস্থ হয়নি, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন দেশের নাট্যভাবনা সম্পর্কে জেনেছি।
ফেরার সময় খুব মন খারাপ হয়েছিল। আমি যেমন হানজুকে ১০ টাকার একটা নোট দিয়েছি, তেমনি বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ হানজুও আমাকে তার একটা জামা উপহার দিয়েছে। তবে পুরোপুরি দিয়ে দেয়নি। কথা দিয়েছে, সে যখন বাংলাদেশে বেড়াতে আসবে, তখন এই জামা ফেরত নেবে! ছলছল চোখে যখন একে অপরকে আলিঙ্গন করে বিদায় নিচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল, নিজের দেশকে অন্যের সামনে উপস্থাপনের সুযোগটা বৃথা যায়নি।