শুনছেন বুয়েট রেডিও
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
প্রথম এসএমএসটি এসেছিল কানাডা থেকে। তাহেরা ছিলেন ২০০১ ব্যাচের ছাত্রী। তিনি শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘গ্রেট ইনিশিয়েটিভ! লিসেনিং ইউ ফ্রম কানাডা। রিভাইভিং মাই বুয়েট লাইফ। প্রাউড অব ইউ।’ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে প্রথম ফোন কলটি করেছিলেন ১৯৯০ ব্যাচের যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিপ্লব। প্রথম দিনের পরিকল্পনা ছিল দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে ১১টি গান বাজানো। কিন্তু অসংখ্য ফোন কলে পাঁচটির বেশি গান বাজানো হয়নি। প্রায় ৫০০ মানুষ সেদিন এসএমএস করেছিলেন। এখনো অনুষ্ঠানের সময় দেশ-বিদেশের অসংখ্য ফোন, এসএমএস আসে।
রেডিওর ভাবনাটি এসেছিল যন্ত্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পার্থ প্রতীম দাসের মাথায়। তিনি জেনেছিলেন, বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য-তাদের নিজস্ব কমিউনিটি নেটওয়ার্ক থাকে। তাতে শুধু ক্যাম্পাসের কথা তুলে ধরা হয়। কিন্তু আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই সক্রিয় কমিউনিটি রেডিও নেটওয়ার্ক নেই। বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক ছাত্রছাত্রীদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা দরকার। যেই ভাবা, সেই কাজ। ইন্টারনেট ঘেঁটে কিভাবে রেডিও সম্প্রচার করা হয় জানলেন। আস্তে আস্তে সার্ভার ও সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হলো। শুরুতে কম্পিউটার থেকে শুনতে পারলেও মোবাইল থেকে শোনার ব্যবস্থা করা যাচ্ছিল না। এইচটিএমএল নিয়ে পড়ালেখা করে মোবাইলের জন্য প্লেয়ার বানালেন। সেটা দিয়েই এখন দারুণভাবে রেডিও শোনা যাচ্ছে। অনলাইন রেডিওর কাজ চালানোর পাশাপাশি ওয়েবসাইটও বানানো হলো। তাতে বিভিন্ন ফিচার আছে, যাতে পেইজটি শ্রোতারা সহজে ব্যবহার করতে পারেন। যন্ত্রকৌশলের শাইখ বনি, হাসিব আহমেদ, সঞ্জীব ভট্টাচার্য এবং কম্পিউটার সায়েন্সের শাহাদ ইশরাক, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজী নিশাত তাসনিমসহ দ্বিতীয় বর্ষের আরো অনেকের সাহায্য নিয়ে সব কাজ শেষে গত মাসের ১৪ তারিখে কেবল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার করা হলো। আরজে ছিলেন শাহাদ ইশরাক ও সঞ্জীব চৌধুরী। ব্যাচের অনেকেই ফোন করলেন। এক ব্যাচ জুনিয়র (২০১৪ ব্যাচ) একটি মেয়ে ফোন করে আরজের সঙ্গে খুব মজাও করলেন। কিন্তু পরে জানা গেল, মেয়েটি তাঁদের ব্যাচেই পড়েন। ৩০ অক্টোবর থেকে পুরোপুরি বুয়েট রেডিও চালু হলো। সেদিন সোহরাওয়ার্দী হলের ৫০০৩ নম্বর রুম থেকে রেডিও সম্প্রচারিত হলো। সবাই খুব ভয়ে ভয়ে ছিলেনÑএত মানুষ শুনবে, সব ঠিক চলবে তো? বাংলাদেশের ইন্টারনেট স্পিড খুব ওঠানামা করে বলে ভয় ছিল, সংযোগ যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে সেই ভয় কেটে গেল বুয়েটের সব ছেলেমেয়ের ভালোবাসায়। ২০০৯ ব্যাচের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আসাদ মেসেজ করলেন-‘পিচ্চিরা যারা এই উদ্যোগ নিয়েছিস, তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। সত্যি মনে হচ্ছে পলাশীতে আছি। সবাইকে একদম প্রফেশনাল আরজে মনে হচ্ছে! ভালো থাকিস।’ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নীলা মেসেজ করলেন, ‘খুবই ভালো উদ্যোগ, মনে হচ্ছে ক্যাম্পাসে বসে আছি। সব বন্ধুকে মিস করছি।’ চারদিকে সাড়া পড়ে গেল, সাহায্য আসতে শুরু করল।
প্রথম থেকে বিনা মূল্যের ডোমেইন দিয়ে বুয়েট রেডিও চালাতে হয়েছিল। তাতে নানা সমস্যা হতো। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন ১৯৮৯ ব্যাচের তানভীর এহসানুর রহমান। ডোমেইন নিবন্ধনের জন্য তিনি সব ধরনের আর্থিক সহযোগিতা করলেন। অত্যাধুনিক মাইক্রোফোন কিনে দিলেন ২০০৭ ব্যাচের আরিফুল ইসলাম এবং ২০১১ ব্যাচের আবীর হাসান।
এখন ক্যাম্পাসে পার্থকে সবাই ডাকেন ‘বুয়েট রেডিও’। রেডিও সম্প্রচারের পরদিন অনেক বড় ভাই খাইয়েছেন তাঁদের। প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠান চলে। সাধারণত আড্ডা টাইপের অনুষ্ঠান হয়-ক্যাম্পাসের জীবন নিয়ে আমন্ত্রিত অতিথির সঙ্গে আরজের আড্ডা জমে। প্রশ্নোত্তরও থাকে। বুয়েটের ছাত্রছাত্রীদের অর্জন নিয়ে আলোচনা হয়। ক্যাম্পাসের কনসার্টসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
শুনতে চাইলে ওয়েবসাইট : www.buetradio.com
Android Application: www.bit.ly/buetradioapp
ফেসবুকে : www.facebook.com/BUETradio