লক্ষ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
দেশে উচ্চ শিক্ষার হার বাড়ায় এবং আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্ধিত চাহিদা মেটাতে না পারায় সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া শুরু করে। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয় এবং একই সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন নামে একটি আইনও পাস করা হয়। পরে সেই আইনের অধীনে এক এক করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিতে থাকে কিন্তু ২০১০ সালে আবারো একটি আইন করা হয় যে আইনের অধীনে চলছে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
বাংলাদেশে এখন প্রায় ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে কিন্তু সবগুলো শিক্ষার মানের দিকে এক নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অভিযোগ যার কারণে সতর্কতার সাথে জেনে-বুঝে ভর্তি হওয়া ভালো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সামগ্রিকভাবে উচ্চ শিক্ষার বিষয়টি তদারক করে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়াসহ মান বজায় রাখার কাজটি তদারক করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের। তাই শিক্ষার্থীদের তাদের পরামর্শের বাইরে যাওয়া সমীচীন হবে না।
রয়েছে নানা সুবিধা : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা অনেক ব্যয়বহুল। তারপরও এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা। আইন অনুযায়ী, মোট আসনের ৬ শতাংশ দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট আসনের ৬ শতাংশ দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সম্পূর্ণ বিনা বেতনে ভর্তি করানোর সুবিধা। এর মধ্যে ৩ শতাংশ থাকবে দরিদ্র পরিবারের ও বাকি ৩ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ভালো ফলাফলের বা সিজিপির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃত্তি ও মোট কোর্স ফির মধ্যে একটি ছাড় দিয়ে থাকে।
ভর্তির যোগ্যতা : বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে ভর্তির যোগ্যতা ভিন্ন হয়ে থাকে। মানসম্মত বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যুনতম জিপিএ ৩.৫০ (চতুর্থ বিষয় বাদে) চাওয়া হয়। জিপিএ ২.৫০ থাকলেও আবেদন করা যায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ‘ও’ লেভেলে চারটি বিষয়ে জিপিএ ৩.০০ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় কমপক্ষে দুটি বিষয়ে জিপিএ ৩.০০ চাওয়া হয়। এই যোগ্যতাগুলো থাকার পরও মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। ভর্তি পরীক্ষা এবং এসএসসি ও এইচএসসির ফল— এ দুটোর সমন্বয়ে মেধাতালিকা করা হয়। নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে প্রস্তুতিটা ভালো থাকতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। সেই সঙ্গে গণিতেও ভালো করতে হবে।
বছরে তিনবার ভর্তির সুযোগ: বছরে তিনবার ভর্তির সুযোগ আছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্প্রিং, সামার ও ফল। সাধারণত এ তিন সেমিস্টারে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্প্রিং’-এর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। এপ্রিল-মে মাসে ‘সামার’ ও আগষ্ট-সেপ্টেম্বরে শুরু হয় ‘ফল’ সেশনে ভর্তি প্রক্রিয়া। এ ছাড়া ‘উইন্টার’ ও ‘অটাম’ সেশনেও ভর্তির সুযোগ দেয় কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই চলছে ভর্তি কার্যক্রম। ভর্তি ফরম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও অ্যাডমিশন অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে। ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে পাসপোর্ট আকারের ছবি যুক্ত করতে হবে। সঙ্গে জমা দিতে হবে এসএসসি ও এইচএসসির সব সনদ, নম্বরপত্রের সত্যায়িত কপি, প্রশংসাপত্র ও আবেদন ফি জমার রসিদ।
শিক্ষার্থী : বর্তমান সময়ে নিকটবর্তী দেশসমূহ, যেমন, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ভারত, তুরস্ক ইত্যাদি দেশের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। ইউজিসি তথ্য অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৪০ জন এবং এর মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৪২ জন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০১১, ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে যথাক্রমে ১২২ জন, ৬৩ জন, ৭২ জন ও ১৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৬১ শতাংশ।
১৯৯২ সালে একটি আইনের ভিত্তিতে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। ১৯৯৮ সালে সংশোধন করা হয় এই আইন। ২০০৯ সালের পূর্ব পর্যন্ত ছাপ্পানটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। পরে ২০১০ সালে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন।