কুমিল্লা ভ্রমণে শাবিপ্রবির একদল শিক্ষার্থী
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
সিদ্ধান্তটা নেয়া হঠাৎ করেই। নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বর জুড়ে অনেকেরই পরীক্ষা থাকায় তাই হুড়োহুড়ি করেই নভেম্বরের মাঝপথে বাৎসরিক ট্যুরের সিদ্ধান্ত। স্থান প্রত্নতত্ত্বের শহর কুমিল্লা। কুমিল্লা শহরকে প্রত্নতত্ত্বের শহর বললে খুব বেশি বলা হবে না। তাই হাজার বছরের পুরাতন এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থাপনা, পুরাকীর্তি কিংবা স্মৃতিচিহ্নে বিজড়িত জায়গাসমূহ দেখতে যাত্রা শুরু শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের একমাত্র সংগঠন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সদস্যদের।
১০ নভেম্বর রাত নয়টার ট্রেনে সিলেট থেকে কুমিল্লা যাত্রা শুরু। ট্রেনের টিকিট আগে থেকেই রেডি করা। মাঝে ট্যুরের টি-শার্ট উন্মোচন, সারারাত গল্প, আড্ডা, গান, কার্ড, গুটি খেলা আর হৈচৈয়ের মধ্যে দিয়ে ১১ নভেম্বর ভোররাতে পৌঁছালাম কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে। গন্তব্য সেখান থেকে সরাসরি ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে।
সারারাতের ভ্রমণ শেষে সেখানে ঘুম, বিশ্রাম শেষে সকালে হালকা নাশতা করেই সবাই বেরিয়ে পড়লাম ময়নামতি জাদুঘর, শালবন বিহারের উদ্দেশ্যে। সাথে আছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির একঝাঁক সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয় ফটক থেকে হেঁটে ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ময়নামতি জাদুঘরে প্রবেশ। হাজার বছর পূর্বের পুরাকীর্তি, কষ্টি পাথরের মহামূল্যবান মূর্তিসহ ওই সময়ের ব্যবহূত আসবাবপত্র, স্বর্ণমুদ্রা ইত্যাদি দেখার সৌভাগ্য হলো এই জাদুঘরেই। সেখান থেকে আমাদের সাথে যোগ দিলেন শাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ ভাই।
সেখান থেকে শালবন বৌদ্ধ বিহারে নিয়ে গেলেন আব্বাস ভাই। দুটোর অবস্থান পাশাপাশি। জানা গেলো, পূর্বে ময়নামতি শালবন ‘রাজার বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিলো। খ্রিষ্ট্রীয় সপ্তম শতকের মধ্যভাগ হতে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত দেব বংশের শাসকগণ এই অঞ্চল শাসন কালে রাজা ভবদেব কর্তৃক এটি নির্মাণ করা হয় ফলক দেখে জানালেন সায়েম ভাই। ময়নামতি বিহার থেকে সরাসরি বার্ডে নিয়ে গেলেন কুবিসাসের সদস্যরা। এই বার্ডেই বিখ্যাত শিশুতোষ চলচ্চিত্র দিপু নাম্বার টু’র বেশকিছু দৃশ্য চিত্রায়ন করা হয়েছে বলে জানালেন কুবিসাসের সদস্যরা। বার্ডে অবস্থিত নয়নাভিরাম নীলাচল পাহাড় ঘুরে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য রুপবান মুড়া ও ইটাখোলা মুড়া। এ দুটি মন্দিরও ৭ম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত।
দুপুরের খাবার খেতে চলে গেলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে। খাবার শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বিকালে চলে এলাম কুমিল্লা টাউন হলে। আসার পথে আতিথেয়তায় মুগ্ধ করল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সভাপতি গাজীউল হক সোহাগ।
কুমিল্লায় আসলাম আর কুমিল্লার বিখ্যাত মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই খাবো না তা কি হয়। তাই তাড়াহুড়ো করেই মাতৃভাণ্ডারের রসমালাইয়ের স্বাদ নিলাম। এবার ফেরার পালা। রাতের বাসেই রওনা দিলাম সিলেটের পথে। গুনে গুনে দেখলাম সবমিলিয়ে বারো ঘণ্টার কিছু বেশি অবস্থান এই প্রত্নতত্ত্বের শহরে, কিন্তু যে স্মৃতি তা হয়তো বারো বছরেও ভোলা যাবে না। ক্লাস-পরীক্ষার ব্যস্ততায় অতি অল্প সময়ের এ সফরে প্রাপ্তি হিসেবে রইলো অসংখ্য স্মৃতি আর কুবিসাসের সদস্যদের আন্তরিক সৌজন্যবোধ।