‘সুবর্ণ স্মৃতির মধুর আনন্দে এসো মিলি মোরা সৃজনী ছন্দে’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
সবুজ ঘাসে শিশিরের রাজত্ব এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তবে শীতের আগাম আভাস পাওয়া যাচ্ছে। হালকাভাবে অনুভূত হচ্ছে শীত। তবে তীব্রতা না থাকায় শরীরটা এখনো জবুথবু হয়নি। প্রকৃতিতে এখন চলছে শীতকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি।
এমন পরিবেশে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) হাজির সহস্রাধিক নারী। ত্রিশের কোটা থেকে শুরু করে আছেন ষাটোর্ধরাও। উদ্দেশ্য বন্ধুদের খুঁজে পাওয়া। পুরনো স্মৃতি রোমন্থন। শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ৪র্থ পুনর্মিলনী উপলক্ষে এমনই পরিবেশ তৈরি হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ছিল স্মৃতিচারণ, যাদু প্রদর্শন, নৃত্যনাট্য ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
‘সুবর্ণ স্মৃতির মধুর আনন্দে এসো মিলি মোরা সৃজনী ছন্দে’ প্রতিপাদ্যে দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. রওশন আরা ফিরোজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম বেগম এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অধ্যাপক সালমা আখতার।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আলোকিত ভুবন আমরা চাই। চারদিক আলোকিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আপনারা যেখানে উপস্থিত থাকেন সেই জায়গাটা আলোকিত হয়ে ওঠে। তবে বর্তমান সময়ে আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে একদিকে আলো জ্বালানো হচ্ছে অন্যদিকে বিশেষ কিছু গোষ্ঠী দেশকে অন্ধকার করার চেষ্টা করে চলছে। যেখানে মানুষ মানুষকে ভালোবাসার কথা, সেখানে মানুষ মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার চক্রান্ত চলছে। মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে, তাদের জন্য সহানুভূতি থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে সমাজের নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখায় প্রাক্তন সাত ছাত্রীকে সম্মাননা দেয়া হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন, মিসেস সাঈদা খানম, ফাহমিদা খাতুন, মালেকা বেগম, লায়লা হাসান, রাফিয়া আক্তার ডলি, সাবিনা ইয়াসমিন এবং জিনাত বরকতুল্লাহ।
পুনর্মিলনী উৎসবের বিকেলের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই হল বাংলাদেশের নারীর অগ্রযাত্রায় কাজ করে চলছে। নারী শিক্ষার প্রসার ও আগ্রহ তৈরিতেও ভূমিকা রেখেছে। এই হলের প্রাক্তনরা আজ পর্যন্ত দেশ-বিদেশে যে অবদান রেখে চলেছে, সেটি বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের অত্যন্ত সম্মানিত ও গবির্ত করেছে।
স্পিকার বলেন, শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করেছে নারী। সরকারও নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্ধেক জনসংখ্যা নারী, কর্মক্ষেত্রেও নারীর অবদান উজ্জ্বল। তাই নারীকে পিছিয়ে রেখে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রত্যেক জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে একটি সংবেধনশীল রাষ্ট্র তৈরি হবে। এরপর মঞ্চে স্পিকারের সৌজন্যে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন অ্যাসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক রোকাইয়া হাসিন নীলি।
উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরুর পর ১৯৩৮ সালে ১২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চালু হয় ছাত্রী হোস্টেল চামেলী হাউজ। ১৯৫৬ সালে এর নাম হয় উইমেন্স হল। এই ছাত্রী হোস্টেলই ১৯৬৪ সালে মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া নামে পুনরায় নামকরণ করা হয়। দীর্ঘ এ পথচলায় হলটি বাংলাদেশের নারীর অগ্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রেখে চলছে।