অন্য রকম ক্লাস
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
এমন একটা ‘শ্রেণিকক্ষের’ কথা ভাবুন তো, যার চারদিকে চারটা দেয়াল নেই। আছে সবুজের সমারোহ, নদী কিংবা বিশাল মাঠ! এই অভিজ্ঞতা উপভোগ করার সুযোগ হয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের। বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস আয়োজন করেন শ্রেণিকক্ষের বাইরে। কখনো চলে যান রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মভিটা মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামে, কখনো তাজহাটের জমিদারবাড়িতে। তিস্তা নদীর পার, ঘাঘট নদীর তীর কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে গাছের ছায়ায়ও হয় এই উৎসবমুখর ক্লাস।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছোট ছোট দল তৈরি করে দেওয়া হয়। কোর্সের বিষয়গুলো নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেন। প্রতি দল থেকে একজন উপস্থাপন করেন তাঁদের ভাবনা। কখনো কখনো শিল্প-সাহিত্য নিয়ে চলে তর্ক-বিতর্ক। এই অন্য রকম ক্লাসে যে শুধু পাঠক্রমে ডুবে থাকা হয় তা নয়, কখনো কখনো গান, কবিতা, নাচ কিংবা অভিনয়ের প্রতিভা দেখানোরও সুযোগ মেলে শিক্ষার্থীদের। আরও নানা কার্যক্রম থাকে এই ক্লাসের আওতায়। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মভিটায় গিয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি চারাগাছ রোপণ করেছেন।
কোনো কোনো সময় দিনভর চলে উপস্থাপন ক্লাস (প্রেজেন্টেশন)। দুপুরে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই খাবারের ব্যবস্থা করেন। আশপাশের কোনো হোটেল থেকে চলে আসে ভাত, সবজি, ডিম, আলুর ডাল—ব্যস! উপস্থাপন ক্লাসে মেয়েরা শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে আসেন। তাই বেশ একটা উৎসব-উৎসব ভাব টের পাওয়া যায়। এই ক্লাস তাই সব শিক্ষার্থীর কাছেই প্রিয়। পঞ্চম ব্যাচের মৌসুমী খাতুন যেমন বলছিলেন, ‘আমরা এই উপস্থাপন ক্লাসটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। একসঙ্গে সবার বেড়ানো হয়, আবার শেখাও হয়।’
এ প্রসঙ্গে তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আগ্রহেই উপস্থাপন ক্লাসগুলো শ্রেণিকক্ষের বাইরে করা হয়। প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেখার মাত্রাটা নতুন রূপ লাভ করে। উপস্থাপন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, আনন্দ আমি উপভোগ করি।’ সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিশাত তামান্না বলেন, ‘নদীর তীরে বসে ক্লাস করব, এটা তো কখনো ভাবিইনি। শুধু লাইব্রেরি-শ্রেণিকক্ষ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় নয়; নদীর পারও যে একটা পাঠশালা, এখানেও যে শেখার কিছু আছে—সেই শিক্ষাই আমরা পাই।’