জাপানের অভিজ্ঞতা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
২০১৭ সালের ৫ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি, দিনগুলো নিশ্চয়ই আমার স্মৃতিতে বারবার ঘুরেফিরে আসবে। জাপানের সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন সেন্টারের আয়োজনে ‘জেনেসিস ২০১৭’ কর্মসূচির আওতায় এ কয়েকটি দিন ঘুরে এলাম ‘সূর্যোদয়ের দেশ’। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখন হলিক্রস কলেজে ভর্তি হয়েছি, তখনো ভাবিনি সামনে এত বড় এক সুযোগ অপেক্ষা করছে আমার জন্য। মিড টার্ম পরীক্ষার সময় হঠাৎ একদিন অডিশনে ডাকা হলো। এরপরের সময়টা যেন স্বপ্নের মতো দ্রুত কেটে গেল!
আমাদের কলেজ থেকে আমি আর অর্চিতা বড়ুয়া সুযোগ পেয়েছিলাম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় ১১ শিক্ষার্থীর একটি দল। আমরা দুজন ছাড়াও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের আদিবা তাবাসসুম ও আরিফ বিল্লাহ, ঢাকা কলেজের মো. রেদোয়ানুল করিম, নটরডেম কলেজের হাসনাইন নূর সেজান, ভিকারুননিসা নূন কলেজের সামিহা ইসলাম, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আমান মুজাহিদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইরুজ মাঈশা চৌধুরী ও নাজমুস সাকিব এবং আর্মড ফোর্স মেডিকেল কলেজের রামিসা রহমান ছিলেন এই দলের সদস্য। আমাদের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি খাইরুল বাশার।
৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় যাত্রা। প্রথমবারের মতো ভিন্ন একটি দেশে নিজের দেশকে উপস্থাপন—সবার মনের উত্তেজনার ঢেউটা টের পাচ্ছিলাম। ৬ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া হয়ে পৌঁছালাম জাপানের নারিতা বিমানবন্দরে। সেখানে আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন বাংলাদেশি দলের জাপানি সমন্বয়কারী হারুমি মোরি। ছোট এক পরিচয়পর্বের পর আমাদের একটি সেমিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। জাপানি অধ্যাপক হিদেও কিমুরা তাঁর উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন জাপানের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, সমাজব্যবস্থা, জনসংখ্যা, প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে বিস্ময়কর সব তথ্য।
সেখানেই জানলাম, জাপানের প্রায় ৬৫ হাজার ৬৯২ জন মানুষের বয়স ১০০-এর ওপরে! তথ্যটা আমাকে ভীষণ অবাক করেছে। এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় চিবার শিনমিনাতো ক্লিন এনার্জি সেন্টারে, যেখানে বর্জ্য পদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন হয়। জাপানের উন্নতির পথে প্রাকৃতিক বিপর্যয় যে অন্তরায় হয়ে ওঠেনি, তার প্রধান কারণই হলো দুর্যোগ প্রতিরোধের সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা, যার প্রমাণ আমরা পাই সেইবু ডিজাস্টার কন্ট্রোল সেন্টারে গিয়ে। সেখানে কৃত্রিম ঝড়, আগুন, ভূমিকম্প অনুভব করার মাধ্যমে দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ধারণা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী কামোগাওয়া শহরটিও আমাকে দারুণ মুগ্ধ করেছে। কামোগাওয়া সি ওয়ার্ল্ডে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের এক বিশাল ভান্ডারে হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা যেন জাপানের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কাছ থেকে দেখতে পারি, সে জন্য আয়োজন করা হয়েছিল ‘হোম স্টে’ পর্ব। একটি জাপানি পরিবারের সঙ্গে দুই রাত থাকার দারুণ এক সুযোগ হয়েছিল। পরিবারের সদস্যদের আন্তরিকতা, ভালোবাসা মুহূর্তের মধ্যেই ঘুচিয়ে দিয়েছে দেশ, ভাষা ও সংস্কৃতির দূরত্ব।