তামিল নাড়ুতে পাঁচদিন
- নিশাত রায়হান অমনি
দুর্যোগ বাবস্থাপনায় বাংলাদেশ উত্তরোত্তর উন্নয়নের যে রোলমডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করে চলেছে তার ফলাফল স্বরূপ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এর ১৬ জন শিক্ষার্থীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ভারতের তামিল নাড়ুতে অবস্থিত রাজিব গান্ধী ইন্সিটিউট অব ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত ৫ দিন ব্যাপী এক কর্মশালায়, যেখানে মূলত শিক্ষার্থীরা একাধারে বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে সে বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি ভারতের দুর্যোগ বাবস্থাপনায় ব্যবহৃত বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কি করে বাংলাদেশের দুর্যোগকালীন বাবস্থাপনার আরও আধুনিকায়ন করা যায় সে বিষয়ের ওপরেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
সিরডাপ- বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত ৫ দিনের এই আয়োজনের প্রথম দিন মূলত আলোচনা হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া দুর্যোগসমুহ বিশেষত ভয়াল সাইক্লন সিডর এবং সাইক্লন আইলার সময়ে বাংলাদেশ কি কি ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় এবং দুর্যোগকালীন এবং এর পরবর্তী সময়ে জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কি কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সত্রিয় সিপিপি (সাইক্লোন প্রি-পেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম) ভলান্টিয়ারদের ভুমিকা এবং একইসাথে কমিউনিটি রেডিও সিস্টেম এর ভূয়সী প্রশংসা করেন আয়োজকেরা। পরের দুই দিন মূলত তামিলনাড়ুতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাইক্লোন “ভারদা”য় ক্ষতিগ্রস্থ কিছু এলাকা প্রদর্শনের বাবস্থা করা হয় যার মধ্যে বেশ কিছু আদিবাসী গ্রাম ও জেলে পল্লী অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এর পরের দিন ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোরস এর আমন্ত্রনে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী দল ভ্রমণ করে ভারতীয় ডিজাস্টার ফোরসের কার্যালয় এবং তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার সুযোগ পায়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী ছাত্র ফারুক হাসান জানান-“ভারত এর দুর্যোগ বাবস্থাপনা অবশ্যই অনেক আধুনিক এবং শক্তিশালী। তবে সে তুলনায় অনেকাংশেই বাংলাদেশ দুর্যোগ বাবস্থাপনায় বেশ এগিয়ে আছে। এটা আমাদের জন্য খুবই গর্বের বিষয় বিশেষত যখন অন্য দেশে এসে নিজের দেশকে দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে শুনি।”
পাঁচ দিনের কর্মসূচিতে ভারতের তামিলনাড়ুতে অবস্থিত বেশ কিছু বিখ্যাত স্থান ভ্রমনের সুযোগ পায় বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে মহাবলিপুরম এর পুরনো সব মন্দির, ইলিওট’স বীচের মোহনিয় দৃশ্য, রাজিব গান্ধী মেমোরিয়ালসহ বেশ কিছু পুরাকীর্তি। এছাড়া ভারতের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আইআইটি-মাদ্রাস ও ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ হয় সবার। বাংলাদেশ দলের আরেক সদস্য শারমিন আক্তার সেতু বলেন- “এই ট্যুর আমার জীবনের খুবই স্মরণীয় একটা ঘটনা হয়ে থাকবে। একটা নতুন জায়গায় এসে নতুন নতুন মানুষ, তাদের সংস্কৃতি, ভিন্ন স্বাদের খাবার সব কিছু মিলিয়ে দারুন এক অভিজ্ঞতা।”
সমগ্র কর্মশালার শেষ দিন আয়োজন করা হয় দুই দেশের ছাত্র ছাত্রীদের অংশগ্রহণে দারুন এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেখান দেশাত্মবোধক গান, নাচ, আবৃতি, নাটকসহ উপস্থাপিত হয় দুই দেশের বিখ্যাত নানান দিকগুলো। সার্টিফিকেট বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে আয়োজকদের একজন ড আর, আর, কৃশ্নমূর্তি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে তাঁর অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন- “সত্যিই অসাধারণ কিছু দিন কাটালাম সবার সাথে। বাংলাদেশ থেকে আগত ছাত্রছাত্রীরা খুবই মেধাবী এবং সত্যি কথা বলতে ওদের কাছ থেকে আমরাও দুর্যোগ বাবস্থাপনার আধুনিকায়নের নানান চমৎকার কিছু পরিকল্পনা পেয়েছি। আমরা আশা করি এই ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতেও আরও নেয়া হবে যেখানে দুই দেশের তরুণদের মধ্যে আইডিয়া শেয়ারের একটা সুযোগ থাকবে যা তাদের পরবর্তীতে করে তুলবে আরও চৌকশ এবং দক্ষ।”