দেখা থেকে শেখা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
১২ এপ্রিল ঢাকার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পা রাখলে আপনি হয়তো একটু দ্বিধায় পড়ে যেতেন। চারদিকে উৎসবের আমেজ। একদল ঝলমলে তরুণ, তাঁদের মধ্যে চাপা রোমাঞ্চটাও ঠিক টের পাওয়া যায়। ভাবতে পারেন, ‘পয়লা বৈশাখ’ দুদিন আগেই এসে হাজির হলো না তো! নইলে এই তীব্র গরমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এতগুলো ছেলেমেয়ে এখানে একজোট হয়েছে কেন?
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় ঢুঁ মারলে আপনার জানা হয়ে যেত, চলছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের কারিকুলাম ইন্টিগ্রেশন (সিআই)।
ইউল্যাবের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের কার্যক্রম একটু আলাদা। প্রতি সেমিস্টারের শুরুতে এখানে একটি নির্দিষ্ট বিষয় ঠিক করা হয়। পুরো সেমিস্টারে এই বিষয় নিয়ে একদিকে চলে তাত্ত্বিক আলোচনা, অন্যদিকে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কোর্সের শিক্ষার্থীরা নানা কার্যক্রম চালিয়ে যান। আলোকচিত্র, দেয়ালচিত্র, ইলাস্ট্রেশন, ছবি, পারফরমিং আর্ট, অ্যানিমেশন, ভিডিও আর্ট ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি বার্তা দিতে চেষ্টা করেন। সেমিস্টারের শেষ ভাগে এক সপ্তাহ ধরে চলে এই সব শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। সব শেষে থাকে আলোচনা সভা ও শিক্ষার্থীদের তৈরি চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র ও বিজ্ঞাপনচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন। আয়োজনটির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভাগীয় প্রধান জুড উইলিয়াম হেনিলো বলেন, ‘ইউল্যাব “অ্যাকটিভ লার্নিং”-এ বিশ্বাস করে। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিখুক।’
এবারের কারিকুলাম ইন্টিগ্রেশনের বিষয় ছিল ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিরক্ষরতা’। মোট ১৬টি কোর্সের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের কাজের মাধ্যমে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিরক্ষরতা’ বিষয়টি কেন নির্বাচন করা হলো? প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, ‘যখনই কোনো সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়, তখন বিদ্যাজগতের মধ্য দিয়ে আমরা সেই সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ধারণাকে বোঝার চেষ্টা করি। বিষয়গুলো ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই নির্বাচিত হয়। বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক গণমাধ্যমে নানা রকম মানুষের বিচরণের কারণে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হচ্ছে, নানান ঘটনা ঘটছে। এ জন্যই আমাদের এবারের বিষয় এটি।’
১২ এপ্রিল প্রদর্শনীর শেষ দিনে মূল আলোচনা সভায় সুমন রহমান সভাপতিত্ব করেন। বক্তা হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, সেভ দ্য চিলড্রেনের যোগাযোগ ও তথ্য ব্যবস্থাপক ফাইজুল করিম এবং লেখক, অ্যাকটিভিস্ট ফিরোজ আহমেদ। বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কীভাবে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে, তা নিয়ে আলোচনা করেন ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, এখানে ব্যবহারকারীরা প্রত্যেকে একই সঙ্গে উৎপাদক ও ভোক্তা। ফেসবুকে ছদ্মনাম ব্যবহারের প্রবণতা ও এর কারণ নিয়ে কথা বলেন ফাইজুল করিম। ফিরোজ আহমেদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিরক্ষরতাকে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল কাজে লাগায়। আলোচনা শেষে বক্তারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের তৈরি চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র ও বিজ্ঞাপনচিত্রের প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানের এই অংশে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি বলেন, ‘ফেসবুক হচ্ছে অনেকগুলো রঙিন লিফলেটের মতো। এর মধ্যে কোনটা আপনি নেবেন আর কোনটা নেবেন না, সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।’