প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের হাজারো প্রশ্ন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে শনিবার (২৭ মে) ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে তরুণ নেতৃত্বের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালা ও মতবিনিময় সভায় তরুণ শিক্ষার্থীরা বিশিষ্টজনদের কাছে নানা বিষয়ে হাজারো প্রশ্ন করেন। বিশিষ্টজনরাও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) ব্যতিক্রমী এই কর্মশালার আয়োজন করে। রাজধানীর কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে তরুণ শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে চান। কুকুর-বিড়ালের নিরাপত্তা, জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে হিজড়াদের সম্পৃক্ততা বা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সরকার কীভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করছে, এ নিয়ে তাদের ছিল হাজারো প্রশ্ন। শনিবার এই প্রশ্নেরই ঢল নেমেছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। তবে সময় স্বল্পতার কারণে অনেকে প্রশ্ন করার সুযোগই পাননি।
প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীকে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রশ্ন করলেন, এসডিজিতে হিজড়াদের সরকার কীভাবে সম্পৃক্ত করবে? রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে এক স্কুলছাত্র জিজ্ঞেস করে, রেওয়াজ করার সময় পাশের বাসা থেকে আপত্তি আসে, কী করণীয়। সংগীতশিল্পী মেহরীন মাহমুদের কাছে এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘আমার ভালো উদ্যোগের বাধা আসে বাসা থেকে। কী করা যায়?’
কর্মশালায় ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের ওপর বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, ‘মানসম্মত শিক্ষা’ নিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ‘সংস্কৃতি চর্চা এবং সামাজিক সুস্থতা’ প্রসঙ্গে মতামত তুলে ধরেন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং ‘উন্নয়ন ও তরুণ’ নেতৃত্ব নিয়ে আলোকপাত করেন সঙ্গীত শিল্পী মেহরীন মাহমুদ। প্রত্যেকের বক্তব্য শেষেই কর্মশালায় অংশ নেয়া স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রশ্ন করেন। বক্তারাও সেগুলোর উত্তর তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘গভার্নমেন্ট ইনোভেশন ইউনিট’ এর মহাপরিচালক আবদুল হালিম (অতিরিক্ত সচিব)। টেকসই উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত পরিচিত তুলে ধরেন ‘গভার্নমেন্ট ইনোভেশন ইউনিট’ এর পরিচালক দেবব্রত চক্রবর্তী। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন ‘গভার্নমেন্ট ইনোভেশন ইউনিট’ র পরিচালক ড. ইসমত মাহমুদা।
টেকসই উন্নয়নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ড. গওহর রিজভী বলেন, এ উন্নয়নের আসল কথা হলো সবার একভাবে একসঙ্গে উন্নয়ন। যদি তা না হয় তাহলে উন্নয়ন অর্থপূর্ণ হবে না, কখনো কখনো তা ক্ষতিকারক। পৃথিবীর কোন দেশ সমতা নিশ্চিত না করে উন্নয়ন করতে পারেনি। যে কারণে কোন দেশকে এগিয়ে যেতে হলে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে কৌশলগত কারণে কখনো কখনো কোন দেশকে ইতিবাচক পদক্ষেপ (এফোরমেটিভ একশন) নিয়ে এগুতে হয়।
শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল টেকসই উন্নয়নে মানসম্পণ্ন শিক্ষার ভূীমকা তুলে ধরেন। তিনি অন্তত: অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার জন্য একই পদ্ধতির শিক্ষা প্রবর্তনের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন। এছাড়া শিশুদের ওপর বই এবং কোচিংয়ের চাপ কমানোর পরামর্শ দেন তিনি। জাফর ইকবাল বলেন, দেশে অনেক ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা রয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষাটা হওয়া উচিৎ চাহিদা অনুযায়ী। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবার জীবনে ব্যর্থতার হার বেশি। যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন তারাও অনেক বার ব্যর্থ হয়েছেন। তাই ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে চেষ্টা করে যেতে হবে।
সংস্কৃতি চর্চা এবং সামাজিক সুস্থ্যতা নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, এ দুইটি বিষয় ছাড়া এগিয়ে যাওয়া যায় না। আবার সংস্কৃতি চর্চা ছাড়া সামাজিক সুস্থতা আসে না। আর সমাজকে সুস্থ রাখার প্রথম পদক্ষেপই হলো নিজেকে সহজ-সুন্দর-স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। প্রতিটা মানুষ নিজেকে এভাবে গড়ে তুললে দেশ হবে সুন্দর। কেননা মানুষকে দিয়েই দেশের পরিচয়।
উন্নয়ন ও তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন গায়িকা মেহরীন মাহমুদ। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন আঁকতে সক্ষম, দেখতে সক্ষম। একনিষ্ঠভাবে কাজ করে গেলে তার পুরণেও সক্ষম। আর তারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। তিনি ছেলে-মেয়ে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের ওপর জোর দেন। শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেরা উদ্যোগী হতে হবে, নিজেদেরও উদ্যোক্তা হতে হবে। তিনি সবার জন্য সুযোগ তৈরির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু করার জন্য, কিছু হওয়ার জন্য ইচ্ছে পোষণ গুরুত্বপূর্ণ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন জিআইইউর পরিচালক দেবব্রত চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনে তরুণদের ভূমিকার কথা জাতিসংঘ গুরুত্ব দিয়ে বলেছে। ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ২০টিতে সরাসরি তরুণদের কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স উনোভেশন ইউনিটের পরিচালক (ইনোভেশন) ইসরাত মাহমুদার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।