নাড়ীর টানে বাড়ি ফিরছেন শিক্ষার্থীরা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ক’দিন পর ঈদ। ছুটি হয়েছে সারা দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যাদের বাড়ি গ্রামে তারা ফিরছেন মাটির টানে, নাড়ির টানে। মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি ফিরছেন শিক্ষার্থীরা।
কেন ফিরতে হয় গ্রামে? এত ঝক্কি-ঝামেলা, যানজট, শত হয়রানি পেরিয়ে কীসের টানে ফেরে তারা? টান একটা আছে বৈকি! নয়তো শোভন, শাওন, স্মৃতি, ইয়াম্মি কেনইবা সকাল থেকে দুপুর অবধি লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট সংগ্রহ করে! আর টিকিট পাওয়ার পর যেন আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় তাদের চোখে-মুখে। ‘পেয়ে গেছি!’ মিলিত কণ্ঠের চিৎকার ভেসে আসে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে।
গ্রামে ফেরার বন্দোবস্ত হলো? এমন প্রশ্ন কয়েকজন তরুণের কাছে, যাদের চোখে-মুখে ক্লান্ত-পরিশ্রান্তের আভা কিছুক্ষণ আগেও ছিল। তবে এখন বেশ উচ্ছ্বসিত তারা। ‘হ্যাঁ, হলো। তবে বেশ ঝক্কিও পোহাতে হলো।’ এমন উত্তর আসে শোভনের কাছ থেকে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন তারা। ঈদের ছুটিতে ফিরছেন গ্রামে। আর যেন সময় নেই তাদের হাতে। ‘এই চল চল!’ বেশ হন্তদন্ত ব্যস্ততার ভাব দেখা যায় স্মৃতির মাঝে।
‘এ শহর তো আর আমাদের না। আমরা এখানে পড়তে এসেছি, স্থায়ীভাবে বসবাস এখনও শুরু করিনি। তাই গ্রামে ফিরতেই হবে।’ বলেন শাওন। শুধু কি সেজন্যই? এমন প্রশ্নে বেশ আবেগময় হয়ে ওঠে ইয়াম্মির কণ্ঠ, ‘আমার গ্রাম, আমার মা-বাবা, গ্রামের মাটির গন্ধ সবই আমার কাছে অপার্থিব মনে হয়। বাড়ি যাব বলে মা-বাবা পথ চেয়ে আছে। এ আবেদন তো আর ফেলে দেওয়া যায় না।’ ‘সুযোগ কম মেলে বলে যাওয়া কম হয় গ্রামে। কিন্তু শেকড় তো আর ভুলে যাইনি। এ শেকড়ের আলাদা টান আছে। বাড়ি যাব বলে জল্পনা-কল্পনা শুরু করেছি রোজার শুরু থেকেই। তাই যত দ্রুত ফেরা যায় ততই ভালো। মন পড়ে আছে বাড়িতে।’ যুক্ত করেন ইয়াম্মি।
তাদের সঙ্গে কথোপকথনে বাড়ি ফেরার আনন্দ ধরা দেয় বেশ করে। এ আনন্দ সামগ্রিক। সবাই সবার সামর্থ্য অনুযায়ী সময়টাকে আনন্দময় করে তোলার চেষ্টা করে। এই যেমন ধরুন, প্রিয়জনের কাছে ফেরা, তাদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা। সব মিলিয়ে এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়, বলেন শোভন।
শোভনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্মৃতি বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা উৎসবপ্রবণ। তাই এমন সুযোগে সবাই চায়, সবার আনন্দটা ভাগাভাগি করে নিতে। তাই ফিরছি গ্রামে।’ শাওনের কথায় ফিরে ফিরে আসে গ্রামের স্মৃতি, ‘বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে অনেক দিন পর। অনেক দিন পর তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে কথা হবে। গল্প হবে, আড্ডা হবে। আহ কী শান্তি!’
এমন শান্তি-স্বস্তি ঝরে সজিবের কণ্ঠেও। তার উন্মাদনার পেছনের কারণ হলো ছোট ভাই। ‘আমার ছোট ভাই পিচ্চিটাকে অনেক দিন দেখি না। বাড়ি যাব শুনে প্রতিদিন একবার করে জিজ্ঞেস করবে, ভাইয়া কবে আসবা? আমি তোমাকে নতুন জামা কিনে দেব তো…। শুনতে শুনতে আমি ব্যাকুল হয়ে উঠছি তাকে দেখার জন্য।’
‘হ্যাঁ ঈদের আনন্দটা এখন একটু অন্যরকম। আগে নিজেরা অনেক বেশি মজা করতাম। এখন ছোটরা করে। সেটা দেখার মাঝেও আনন্দ আছে।’ যুক্ত করেন শুভ। ‘আরেকটা বিষয় তো বলাই হলো না চাঁদ রাত। এ মজা কি আর অন্য সময় পাওয়া যায়? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে স্মৃতিসহ সবাই এগিয়ে চলেন সামনের দিকে। যখন তাদের সবার গন্তব্য গ্রাম, যেখানে সবাই ফিরছেন মাটির টানে।