সৌরবিদ্যুতের ছোঁয়ায়…
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
রাজশাহী গোদাগাড়ি উপজেলার কানাপাড়া গ্রামের মিনারুল ইসলাম। পেশায় কলু হলেও গরু কিংবা নিজের কাঁধে এখন আর তাকে ঘানি টানতে হচ্ছে না। ছোট্ট মোটরের মেশিন দিয়েই তিনি তেল উৎপাদন করেন। যদিও এক বছর আগে তাকে ১০ কেজি কিংবা আধা মণ সরিষা তেলবীজ ভাঙিয়ে তেল তৈরি করতে নদী পার হয়ে গোদাগাড়ি যেতে হতো। তেল নিয়ে ফিরতে ফিরতে পুরো দিন শেষ। অথচ সেই মিনারুল এখন দিনে কয়েক মণ তেল তৈরি করেন। তার এই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছে সৌরবিদ্যুৎ।
চর আশারীদহ ইউনিয়নে আগে সূর্যাস্তের পর নেমে আসত নিস্তব্ধতা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভুতুড়ে পরিবেশের মানুষ ভয়ে সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বেরোতেন না। কিন্তু সোলার মিনি গ্রিডের বিদ্যুতে এই এলাকা আজ আলোয় উদ্ভাসিত। এখন মানুষ রাত ১০টা থেকে ১১ পর্যন্ত বাজারে কেনাকাটা করেন। আয়-উপার্জনের নতুন নতুন পথ ও খাত বের করছেন।
সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় চর আশারীদহের মতো পিছিয়ে থাকা অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ (সিইআর)। ইউআইইউ অনবরত এসব বিষয়ে গবেষণা করছে। এখন পর্যন্ত দেশে যে ক’টি ১০ মিনি গ্রিড সোলার পাওয়ার প্লান্ট হয়েছে, তার সবগুলোর নকশা ও নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে সিইআর প্রকৌশলীদের হাত ধরে। এছাড়া কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে আরো ১৭টি প্রকল্প।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজওয়ান খান বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে ইউআইইউ সৌরবিদ্যুৎকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। সৌরবিদ্যুৎকে কীভাবে আরো সহজলভ্য করা যায়, আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি।’
কংক্রিটের খুঁটির মাথায় মোটা তার বসিয়ে গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। যেসব মানুষ ভাবতেও পারেনি তারা বিদ্যুতের আলো পাবে, তাদের বাড়িতে এখন চলছে কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজ সবই। এমনকি পানি তোলা, ওয়েল্ডিংসহ ভারী সব যন্ত্রপাতিও চালানো হয় এই বিদ্যুৎ দিয়ে। আগে যেখানে গরুর গাড়ির বিকল্প কোনো যানবাহন ছিল না, এখন ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান চলছে সেসব গ্রামে।
আর এসব কিছুর পেছনে কাজ করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে এটি চালু হয়। এখন এটি দেশের অন্যতম প্রধান নবায়নযোগ্য জ্বালানি গবেষণা ও পরামর্শ প্রতিষ্ঠান। এই গবেষণা সেলের পরিচালক হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে প্রান্তিক মানুষকে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে কাজ করছে সিইআর।
এছাড়া এরই মধ্যে শাহরিয়ার আবিষ্কার করেছেন ‘স্মার্ট ভিলেজ ন্যানোগ্রিড’ নামের একটি প্রযুক্তি। সৌরবিদ্যুৎ যাতে ভাগাভাগি করা যায়, সেজন্য সোলবক্স মিটার তৈরি করেছেন। এ উদ্ভাবনের ফলে গত বছরের জুনে তিনি লাভ করেছেন জার্মানির ‘ইন্টার সোলার অ্যাওয়ার্ড’। এ পুরস্কারকে বলা হয় সোলারের নোবেল। এছাড়া এই গবেষণা প্রকল্প তাকে এনে দেয় জাতিসংঘের ২২তম জলবায়ু সম্মেলনে ‘মোমেন্টাম ফর চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’।