সম্মেলনের নাম ‘আনপ্যাকিং ঢাকা’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
৪ থেকে ৮ জুন—ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও ওপেন স্টুডিও আয়োজন করেছিল পাঁচ দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। প্রথম দুই দিনের কর্মসূচিতে ছিল আলোচনা সভা বা সিম্পোজিয়াম, আর পরের তিন দিন হলো কর্মশালা। কর্মশালার অংশ হিসেবে কড়াইল বস্তিতে যেতে হয়েছিল অংশগ্রহণকারীদের। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেখানে কিনা লুঙ্গি পরে হাজির হলেন বিদেশি অতিথিরা! কেন?
জানা গেল, সিম্পোজিয়াম থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান কীভাবে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজে লাগানো যায়, সেটাই এই কর্মশালার লক্ষ। বস্তিবাসী যেন সহজে আপন করে নিতে পারে, সে জন্যই বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে হাজির হয়েছিলেন স্প্যানিশ অতিথিরা।
আন্তর্জাতিক কংগ্রেসটির শিরোনাম ছিল ‘আনপ্যাকিং ঢাকা’। অতিরিক্ত ঘনবসতিপূর্ণ শহরায়নকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেটাই হলো এর প্রতিপাদ্য বিষয়। দেশি, বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এসেছেন। আলোচনা করেছেন। উত্তর দিয়েছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া তরুণদের প্রশ্নের। আয়োজকদের মধ্য থেকে কথা হলো ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সদ্য স্নাতক সাদ এম কায়কোবাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভিন্ন ভিন্ন সেশনে বিশেষজ্ঞরা তাঁদের অভিজ্ঞতার আলোকে ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য শহরে রূপান্তর করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন। কর্মশালায় হাতেকলমে দেখানোর চেষ্টা করেছেন, কীভাবে ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরকে আরও বাসযোগ্য করে তোলা যায়।’
আলোচনায় অংশ নেওয়া বিদেশি স্থপতিদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক প্যাকো মিহাস, অধ্যাপক হ্যাভিয়ের সানচেজ মেরিনা, অধ্যাপক মারিয়া লুনা নোবিল এবং অধ্যাপক রুবেন গার্সিয়া রুবিও। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা, ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও স্থপতি ও পেশাজীবীরা কংগ্রেসে অংশ নেন।
কর্মশালার জন্য চারটি আলাদা দলে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের। আর প্রতিটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন একজন করে বিদেশি স্থপতি। সবাই মিলে কড়াইল বস্তির আনাচকানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা বানিয়েছেন, বাসায় ঢুকে রান্না করেছেন, শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করেছেন এমনকি বাচ্চাদের সঙ্গে ঘুড়িও উড়িয়েছেন। কর্মশালার অংশ হিসেবেই কয়েকটি রাস্তা মেরামত করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। টিনের ঘরগুলোতে গরম কমানোর জন্য বাঁশ ও স্থানীয় প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে ছাদ তৈরির কাজও করেছেন তাঁরা।
ওপেন স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী, স্থপতি তানজীল শফিক বলেন, ‘আনপ্যাকিং ঢাকা আয়োজনের কিছু উদ্দেশ্য আছে। ভূমি ও জনসংখ্যার অনুপাতে ঢাকা বড় ঘনবসতিপূর্ণ। একই সঙ্গে ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত ভবন ও রাস্তাঘাটের সংখ্যাও অনেক। এই পরিস্থিতি চলমান থাকলে ঢাকা ধীরে ধীরে “ডেথ সিটি”তে রূপ নেবে। কিন্তু আমাদের প্রিয় ঢাকা আমাদের কাছে এখনো একটি চমৎকার শহর। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির চাপটা সামলে নিয়ে মোকাবিলা করতে হলে আমাদের ভাবতে হবে, নিজ নিজ জায়গা থেকে উদ্যোগী হতে হবে। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে আমরা মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে চেষ্টা করেছি।’