তাহাদের ফটোগ্রাফি ক্লাব
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। পঁচিশ-ত্রিশজনের একটা দল ক্যামেরা হাতে ঘোরাঘুরি করছে। কেউ ট্রেনের ছাদে দাঁড়ানো দুঃসাহসী ছোট ছেলেটার ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ ক্যামেরা তাক করেছেন ট্রেনের দরজায় ঝুলে থাকা লোকটার দিকে। ওদিকে একজন খুব কসরত করে মনের মতো একটা ফ্রেম পেয়েছেন বলে হাসি এ কান-ও কান হয়েছে। এরই মধ্যে স্টেশনের কেউ কেউ হয়তো তাঁদের সাংবাদিক ভেবে বসল, কাছে এসে গড়গড় করে বলতে শুরু করল নানা সমস্যার কথা। কেউ-বা এগিয়ে এসে আবদার করেন, ‘একটা ছবি তুলে দেবেন প্লিজ!’ আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি ক্লাব বা ‘অস্টপিসি’র সদস্যদের এমন অভিজ্ঞতা হয় হরহামেশাই। কেবল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন নয়, পুরান ঢাকা, কারওয়ান বাজার, সদর ঘাটসহ ঢাকার যেকোনো জায়গায় হঠাৎ কখনো আপনার দেখা হয়ে যেতে পারে এই দলটির সঙ্গে।
২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা ক্লাবের মোট সদস্যসংখ্যা বর্তমানে এক হাজারেরও বেশি। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের যে কেউ চাইলে ক্লাবের সদস্য হতে পারে। প্রতি সেমিস্টারে রেজিস্ট্রেশন বুথ বসে। নির্দিষ্ট সেই বুথে গিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সদস্য হতে হয়,’ সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমেদ জানালেন।
সদস্যদের জন্য সারা বছর নানা রকম আয়োজন থাকে ক্লাবের পক্ষ থেকে। কেমন আয়োজন? ‘নিয়মিত কর্মশালা হয়, ফটো আড্ডা, ফটো ওয়াক হয়। এ ছাড়া আমরা প্রতি সপ্তাহে একটা ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা করি। বিজয়ী ছবিটা অস্টপিসির নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হয়, ’ বললেন তৌফিক।
ফটো আড্ডা বা ফটো ওয়াক ব্যাপারগুলো কী, সেটা একটু বুঝতে চেষ্টা করি। জানা গেল, সুযোগ পেলেই যে দল বেঁধে ছবি তুলতে বের হন, এই আয়োজনকে তাঁরা বলছেন ফটো ওয়াক। চেনা শহরটাকেও যে কত ভিন্ন ভিন্ন চোখে দেখা যায়, তারই প্রমাণ মেলে এই ‘ছবি হণ্টন’ থেকে। একই জায়গা, অথচ একেকজনের ক্যামেরায় ফুটে ওঠে একেক রূপ। ফটো আড্ডায় আলাপ হয় নিজেদের তোলা ছবিগুলো নিয়ে। ভুল করলে সমালোচনা হয়, ভালো করলে সবাই পিঠ চাপড়ে দেয়। আড্ডায় অভিজ্ঞরা নিজেদের মতো করে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন।
এসব কার্যক্রমের ফলাফলও হাতেনাতে পাচ্ছেন ক্লাবটির সদস্যরা। ক্লাবের সহসভাপতি খালিদ রহমান অর্জনের কথা বলতে গিয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার নাম বললেন। জানালেন, ‘ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসব প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কারসহ অনেকগুলো অ্যাওয়ার্ড জিতেছে আমাদের সদস্যরা।’
নতুন, প্রতিভাবান আলোকচিত্রীদের খুঁজে বের করতে প্রতিবছর দুটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে অস্টপিসি। এক সেমিস্টারে প্রদর্শনী হয় নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই। সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারেন কেবল আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আর পরের সেমিস্টারে আয়োজন করা হয় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে ২৩-২৫ জুলাই বসবে এবারের প্রদর্শনী ‘ড্রিম বিয়ন্ড ইমাজিনেশন ৪’-এর আসর।
কিন্তু এত কিছুর লক্ষ্যটা আসলে কী? আলাপের শেষে খালিদ রহমান বলছিলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই ক্লাবের প্রতিটি সদস্য ছবি যেমনই তুলুক না কেন, মন থেকে যেন ছবিকে ভালোবাসতে পারে। এটা তাদের ভেতর ঢুকিয়ে দিতে পারলে আমরা সার্থক। লেগে থাকলে ভালো ছবি এমনিই আসবে। ভালোবাসাটা জরুরি।’