হবু কূটনীতিকদের সম্মেলন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ঘরের ভেতর যখন পা রেখেছি, একদল কিশোর-তরুণের কথায় ভেতরটা তখন সরব হয়ে আছে। সবার সামনেই টেবিলের ওপর একেকটা দেশের নাম লেখা প্ল্যাকার্ড—ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন…ইত্যাদি। ব্যতিব্যস্ত ‘কূটনীতিকদের’ দেখে মনে হলো, বিশাল এক মুশকিল আসান করতে সমবেত হয়েছেন তাঁরা। ভুল ভাঙলেন লুবজানা আফরিন। জানালেন, ‘আমাদের সব সেশন শেষ হয়েছে। এখন সেরা প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য জনমত নেওয়া হচ্ছে। যে দেশ সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে, সে দেশের প্রতিনিধিকে সেরা হিসেবে ঘোষণা করা হবে।’ ৮ জুলাইয়ের সেই ভরদুপুরে শেষ পর্যন্ত জানা হয়নি কে হয়েছেন সেরা প্রতিনিধি। তবে জানা গেল, এটি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক (ডিএসইসি) কমিটির বৈঠক। পাশের ঘরগুলোতেও এমন বৈঠক চলছিল। যার কোনোটা ইউনেসকোর, কোনোটা নিরাপত্তা পরিষদের, কোনোটা বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
পাঠক, একটু কি ভড়কে গেলেন? বলে রাখি, সত্যিকারের জাতিসংঘ সম্মেলন নয়, আর এই যে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি হিসেবে যাঁরা বসেছিলেন, তাঁরা আমাদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। সমবেত হয়েছিলেন এশিয়ান ইয়ুথ মডেল ইউনাইটেড নেশনস (আয়মুন) সম্মেলনে। ‘প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি, উৎকৃষ্ট কূটনীতি’ মূলমন্ত্র নিয়ে ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনের এই সম্মেলন। যার আয়োজক হলো বাংলাদেশ মডেল ইউনাইটেড নেশনস কাউন্সিল (বিমাঙ্ক)।
মডেল ইউনাইটেড নেশনস হচ্ছে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের আদলে শিক্ষার্থীদের ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন। বিমাঙ্কের সম্মেলনে প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলেন সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা তানভীর আহমেদ সেদিন বলেছিলেন, প্রায় ৪০০ জন শিক্ষার্থী সম্মেলনে প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। তাঁরা জাতিসংঘের নয়টি কমিটির সদস্য হয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
সমাপনী আয়োজনে কথা হলো এমন কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল কাফী তাঁদেরই একজন। এমন শিক্ষার্থী সম্মেলনে এটাই তাঁর প্রথম অংশগ্রহণ। চোখমুখেই প্রকাশ পাচ্ছিল ভেতরের উচ্ছ্বাস। সে উচ্ছ্বাসের কিছুটা আঁচ পাওয়া গেল কাফীর কথাতেও, ‘এখানে সবকিছুতেই জাতিসংঘ সম্মেলনের মতো কায়দাকানুন। যা আমার ক্যারিয়ার গড়তে দারুণ কাজে দেবে বলে বিশ্বাস করি। কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা, নিজের দেশের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা, বিতর্ক করা…সবই এখানে করতে হয়। এসবের মধ্য দিয়েই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।’ সম্মেলনে কাফী নেপালকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এ জন্য তাঁকে কিন্তু প্রচুর পড়তে হয়েছে। নেপালের বিদেশনীতি, অর্থনীতি—সব বিষয়েই জানতে হয়েছে। কাফী বলেন, ‘এমন অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই হয়েছে।’
কাফীর পাশের চেয়ারে বসা ছিলেন সাজেদুর রহমান। বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়ুয়া সাজেদুর বলছিলেন, ‘ফ্যাশন ডিজাইনে পড়াশোনা করলেও আমার স্বপ্নটা অন্য কিছু নিয়ে। আমি আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থায় পেশা গড়তে চাই।’ আর তাই তিনি এ ধরনের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। এটা তাঁর স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়তে নাকি অনেকখানি সহায়তা করবে।